বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোহলি-অশ্বিনকে নিয়ে ভাবছেন না মুশফিক

মেজবাহ্-উল-হক

কোহলি-অশ্বিনকে নিয়ে ভাবছেন না মুশফিক

হায়দরাবাদে আজ ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু। ম্যাচের আগের দিন বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতেছেন মুশফিক। দেখছেন তাসকিন, মিরাজরা —এএফপি

বিরাট কোহলি— এই মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। আর রবিচন্দন অশ্বিন হচ্ছেন সবচেয়ে বিপজ্জনক বোলার। কোহলি যেমন যেকোনো বোলারকে পাড়ার বোলার বানিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না, তেমনি ঘূর্ণি তোপে ফেলে বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানকে নাকানি চোবানি খাইয়ে ছাড়তে দুবার ভাবেন না অশ্বিন। অথচ হায়দরাবাদ টেস্টের আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশের পরিকল্পনা টিম-ইন্ডিয়াকে নিয়ে।

ঘরের মাঠে আগের সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টে ১০৯.১৩ গড়ে করেছেন ৬৫৫ রান। একটি ডাবল সেঞ্চুরি, একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ইংলিশদের ধসিয়ে দেওয়ার প্রধান নায়ক ছিলেন তিনি। শক্ত হাতেই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজে ৪-০ করেছিলেন। তা ছাড়া বর্তমানে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর ব্যাটসম্যান কোহলি। অশ্বিন এখন টেস্টের এক নম্বর বোলার। তার ঘূর্ণি মায়ায় আটকে গিয়েই তো দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। পাঁচ টেস্টে তিনি নিয়েছেন ২৮ উইকেট। রান দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছিলেন ভীষণ কৃপণ। ওভার প্রতি অশ্বিন তিনের কম রান (২.৭৫) দিয়েছেন। তা ছাড়া এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারও তিনি। ইংলিশদের বিরুদ্ধে ৪৩.৭১ গড়ে ৩০৬ রানও করেছেন।

ভারতের সেরা দুই অস্ত্র কোহলি-অশ্বিন। তবে বাংলাদেশ শুধু এই দুজনকে নিয়ে ভেবেই পড়ে থাকতে চায় না। ভারতের অন্য ব্যাটসম্যান কিংবা বোলাররাও অনেক ভালো। তাই নির্দিষ্ট কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে বেশি না ভেবে বরং টিম-ইন্ডিয়াকে আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মুশফিক। ভারতকে আটকে দিতে হলে প্রধান কাজটা করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। তাই নিউজিল্যান্ড সিরিজে যারা রানের মধ্যে ছিলেন তাদের ভালো খেলার বিকল্প নেই, পাশাপাশি যারা রান পাননি তাদেরও ভালো খেলার আহ্বান জানিয়েছেন টাইগার দলপতি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে। বিশেষ করে শীর্ষের সাত ব্যাটসম্যানকেই ভালো খেলতে হবে। নিউজিল্যান্ড সিরিজে যারা ফর্মে ছিলেন না তাদের ফর্মে ফেরাটাও জরুরি।’

ভারতের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জন্য তৈরি করে রেখেছে টার্নিং উইকেট। সেটাই স্বাভাবিক। কেননা বিশ্বের সেরা দুই টার্নার—অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা এখন তাদের দলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অশ্বিনের চেয়ে কোনো অংশ কম ছিলেন না জাদেজা। তিনিও নিয়েছেন ২৬ উইকেট। তা ছাড়া ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার ছিল তারই— চেন্নাই টেস্টের এক ইনিংসে ৪৮ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়েও রয়েছেন দুইয়ে।

ব্যাটিংয়ে শুধু কোহলি কেন, নাইর তো ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। লোকেশ রাহুল, মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা, যাদবও দারুণ ব্যাটিং করেছেন। তাই কাউকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই বলে মনে করেন মুশফিক। সবাইকে নিয়েই তিনি পরিকল্পনা করেছেন।

এই টেস্ট মুশফিকের জন্য হতে পারে মাইলফলকে পৌঁছার ম্যাচ। ব্যাট হাতে আর মাত্র ৭৮ রান করলেই বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন হাজারী রানের ক্লাবে প্রবেশ করবেন তিনি। এর আগে হাবিবুল বাশার সুমন, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তা ছাড়া ডিসমিশালের সেঞ্চুরিও হয়ে যেতে পারে মুশফিকের। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ৫১ টেস্টে তিনি ৯৩টি ডিসমিশাল করেছেন। আর মাত্র সাতটি ডিসমিশাল দরকার।

ব্যক্তিগত রেকর্ড নয়, অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকের দৃষ্টি দলীয় পারফরম্যান্সের দিকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো করতে হলে দলীয়ভাবে ভালো খেলতে হবে।’

আজ হায়দরাবাদ টেস্টে মাঠে নামার আগে টাইগারদের অনুপ্রাণিত করতে পারে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংস। কিউইদের ঘরের মাঠে কি দাপটের সঙ্গেই না ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। মুশফিক-সাকিবের ৩৫৯ রানের সেই ঐতিহাসিক জুটি নিয়ে তো গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করেছেন স্বয়ং ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি, ‘টেস্টের একদিনে তিনশর ওপর রান করাটা দারুণ ব্যাপার। টেস্টের সারা দিনে ওভার প্রতি সাড়ে চার করে রান করাও বিশেষ কিছু। তাই বাংলাদেশের ব্যাটিংকে অবহেলা করা যাবে না।’

কোহলির দাবি, ‘পরিশ্রম ও সামর্থ্যের সঠিক প্রয়োগ করতে না পারলে টেস্টে জেতা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এখন বেশ কয়েকজন অনেক ভালো মানের ব্যাটসম্যান রয়েছেন। এই দলটার বিরুদ্ধে জয় পেতে হলে আমাদের সেরা পারফরম্যান্সই দেখাতে হবে।’

মুশফিক মনে করছেন, হায়দরাবাদ টেস্টের তৃতীয় দিন থেকেই টার্ন করতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ভরসা স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সাকিব ও মিরাজ থাকলেও টার্নিং উইকেটে তাইজুলই সেরা। আর পেসার হিসেবে তাসকিনের সঙ্গে থাকছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ভারতের মাটিতে তৃতীয় পেসার নিয়ে খেলার বিলাসিতা করার সুযোগ নেই। তাই শুভাশিসের একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাইজুল-সাকিব-মিরাজ —স্পিন বলয় নিয়েই ভারতকে রুখে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর