বল যাচ্ছিল মুশফিকুর রহিমের পাশ দিয়ে। একটুও চেষ্টা করলেন না। বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখলেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার সৌম্যের কাছে যাওয়ার আগেই বল মাটিতে পড়ে গেল। মাত্র ১১ রানে নতুন জীবন পেয়ে যান ভারতীয় ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা। উইকেট বঞ্চিত হন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। প্রথম স্লিপে আবারও ক্যাচ ওঠে। সাকিব আল হাসান হাত বাড়ালেই বলটি তালুবন্দি করতে পারতেন। কিন্তু হলো না। ২১ রানের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো নতুন জীবন পেয়ে যান পূজারা। এবার উইকেটবঞ্চিত মেহেদী হাসান মিরাজ।
একইভাবে আরেকবার ক্যাচ তুলে দেন সেই পূজারা। একইভাবে মিস করেন সাকিব আল হাসান। যেন আগের ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটে। মনে হতে পারে আগের ঘটনাটির রিপ্লে সেটি। কেবল বোলারের জায়গায় মিরাজের পরিবর্তে ছিলেন তাইজুল ইসলাম। ৬৪ রানে আরেকবার জীবন পেলেন পূজারা।
সিলি মিডঅনে একটি সুযোগ নষ্ট করেন মুমিনুল হকও। সতর্ক থাকলে ক্যাচটি নেওয়া কঠিন হতো না। কিন্তু পারলেন না মুমিনুল।ম্যাচের ১৯তম ওভারে নিশ্চিত রান আউটের সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। মিরাজের বল স্কয়ার লেগে ঘুরিয়ে দেন ব্যাটসম্যান মুরালি বিজয়। ফিল্ডার কামরুল ইসলাম রাব্বি ড্রাইভ দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় বলটি আটকে দেন। রান নেবেন কি নেবেন না ভাবছিলেন মুরালি। কিন্তু ততক্ষণে তার ক্রিজে পৌঁছে গেছেন অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যান পূজারা। এক ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান। অন্যপ্রান্তে বল থ্রো করেন ফিল্ডার রাব্বি। কিন্তু বল তালুবন্দি করতে পারেননি মিরাজ। তারপর ক্রিজে পৌঁছে যান মুরালি।
৩৫ রানে নতুন জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পূরণ করেন ভারতের এই ওপেনার। ১৬০ বলে খেলেছেন ১০৮ রানের ইনিংস। ১২ বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা।
বার বার সুযোগ পেয়েও সেঞ্চুরি করতে পারেননি পূজারা। আউট হয়েছেন ৮৩ রানে। সেই মিরাজের বলেই। তবে এবার বেঁচে যেতে পারতেন ভারতীয় তারকা। কেননা প্রথম দফায় তার ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তার প্যাডে লেগে উপরে উঠে যায়, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ধরে ফেলেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বাজে ফিল্ডিংয়ের দিনে হায়দরাবাদে রানের পাহাড়ে উঠে গেছে ভারত। প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে করেছে ৩৫৬ রান। স্কোর বাড়াতে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি ১৪১ বলে খেলেছেন ১১১ রানের ইনিংস। কোহলিকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন অজিঙ্কা রাহানে। তিনিও ৪৫ রানে রয়েছেন অপরাজিত। চতুর্থ উইকেটে তাদের জুটিতে এসেছে ১২২ রান। আজ ফ্রেস মুডে ব্যাটিং শুরু করবেন দুই ব্যাটসম্যান।
অথচ কালকের দিনটা ভারতের জন্য হয়ে যেতে পারতো বিভীষিকাময়। সুযোগগুলো হাতছাড়া না হলে সকালের সেশনেই ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দেওয়া যেত স্বাগতিকদের। শুরুটা অবশ্য দুর্দান্ত হয়েছিল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভারতীয় ওপেনার লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন পেসার তাসকিন। পরের ওভারগুলোতেও এই গতি তারকা বাউন্সার দিয়ে নাকাল করে ফেলেন ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করায় দিন শেষে মুশফিকরাই মহাচাপে পড়ে যায়।
এই টেস্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টস। কিন্তু সকালে হারার পরই অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। কেননা এই মাঠে তৃতীয় দিন থেকে বল টার্ন করা শুরু করবে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ। ইচ্ছাকৃত ভুল না করলে ব্যাটসম্যানদের আউট করা কঠিন। সে কারণেই টস জেতার পর ব্যাটিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি কোহলিকে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ২০ ওভারে তিনি ৫০ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। প্রথম দুই সেশনে তাসকিন আহমেদ ভালো করলেও শেষ সেশনে সুবিধা করতে পারেননি।
তবে গতকাল সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে রাব্বির ওপর দিয়ে। এই পেসার ১৭ ওভারে দিয়েছেন ৯১ রান (ওভার প্রতি ৫.৩৫)। সাকিব আল হাসানও ক্যারিশম্যাটিক কিছু দেখাতে পারেননি। ১৩ ওভারে দিয়েছেন ৪৫ রান। কোনো উইকেট পাননি। মেহেদী হাসান মিরাজও সুবিধা করতে পারেননি। এক উইকেট পেলেও ২০ ওভারে দিয়েছেন ৯৩ রান।
তা ছাড়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আটকাতে মুশফিকের নেতৃত্বে ক্যারিশম্যাটিক কোনো কৌশলও লক্ষ্য করা যায়নি। যেন গৎ বাঁধা ছকেই অধিনায়কত্ব করেছেন। কোহলি-মুরালিরা যেভাবে আক্রমণাত্মক খেলেছেন হয়তো মুশফিকের করার কিছুই ছিল না! তবে রাতে নতুন পরিকল্পনা করতে না পারলে আজ কোহলিদের আটকানো অসম্ভবই হয়ে যাবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৩৫৬/৩ (৯০ ওভার) (কোহলি ১১১*, মুরালি ১০৮, পূজারা ৮৩, রাহানে ৪৫*; তাইজুল ১/৫০, তাসকিন ১/৫৮, মিরাজ ১/৯৩)।