বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে থাকবে তো ট্রফি

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দেশে থাকবে তো ট্রফি

একসময়ে ক্লাবগুলোকে নিয়ে ঢাকায় আগাখান আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ অনুষ্ঠিত হতো। উপমহাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই টুর্নামেন্ট। ১৯৮২ সালের পর আগাখান গোল্ডকাপ আর মাঠে গড়ায়নি। ১৯৯২ সালে বাফুফে আয়োজন করে ক্লাবভিত্তিক টুর্নামেন্ট বিটিসি কাপ। ভারতের সেরা দুই দল ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান অংশগ্রহণ করে। এক টুর্নামেন্ট করেই সাড়া পড়ে যায়। বাফুফের ঘোষণা ছিল ফুটবলে এখন থেকে নিয়মিত ক্লাবভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে। ব্যস, এই পর্যন্ত। আর দেখা মেলেনি এই টুর্নামেন্টের। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপার কাপের আয়োজন করে ফুটবলকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। প্রথম আসরে সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, সুপার কাপ নিয়মিতভাবেই হবে। সামনে প্রাইজমানি বাড়ানো ছাড়াও বিদেশি ক্লাবগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। তিনবার আয়োজন করেই সুপার কাপের বিলুপ্তি ঘটে।

ফুটবলে আর কখনো ক্লাবভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। এ ব্যাপারে তখন বাফুফের নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেছিলেন, যেখানে জাতীয় দল নিয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে পারি না, সেখানে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলের আয়োজন অসম্ভবই বলা যায়। বাফুফে পারেনি, অসম্ভবকে সম্ভবে রূপ দিয়েছে একটি ক্লাবই। বাংলাদেশের কোনো ক্লাব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করবে একসময়ে তা স্বপ্নই মনে হতো। অথচ তা করে দেখিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ক্লাব হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে ততটা পরিচিত না হলেও ২০১৫ আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ কামালের নামকরণে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করে। কলকাতার ইস্টবেঙ্গল, মোহামেডান ছাড়াও অন্য বিদেশি ক্লাব অংশ নেওয়ায় প্রথম আসরেই সাড়া পড়ে যায়।

১৮ ফেব্রুয়ারি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পর্দা উঠবে দ্বিতীয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের। আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনী, ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডান ছাড়াও অংশ নিচ্ছে পাঁচ বিদেশি ক্লাব কিরগিজস্তানের এএফসি আলগা, মালদ্বীপ টিসি স্পোর্টস, দক্ষিণ কোরিয়া পোচেন সিটিজেন, নেপাল মানাং মার্সিয়াং ও আফগানিস্তান শাহীন আসমাই এএফসি। আই লিগ চলায় ভারতের কোনো ক্লাব অংশ নিচ্ছে না। তারপরও এবারের টুর্নামেন্ট আরও উপভোগ্য এবং জমজমাট হবে আশা করছে আয়োজক কমিটি। কেননা পাঁচ বিদেশি ক্লাবই শক্তিশালী। সন্দেহ নেই চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তারা এখানে সাংগঠনিক ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। বাফুফের তা শেখা উচিত।

টুর্নামেন্ট যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক না কেন শেখ কামাল ট্রফি কি এবার ঘরে রাখা যাবে। গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী ফাইনালে ভারতের বিখ্যাত ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করে। এক টুর্নামেন্ট জিতেই দেশ পরিচিত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম আবাহনী। যে কারণে পরবর্তীতে ঘরোয়া মৌসুমে শক্তিশালী দল গড়ে। অবশ্য এর পেছনে বড় অবদান শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের। শেখ কামাল টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ না পেলেও দেশের স্বার্থের কথা ভেবে চট্টগ্রাম আবাহনীতে তাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়কে খেলার অনুমতি দেয়। শেখ রাসেল ছাড়া টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন তো দূরের কথা চট্টগ্রাম-আবাহনী সেমিফাইনালে উঠতে পারত কিনা সংশয় ছিল।

এবারও চট্টগ্রাম আবাহনী শক্তিশালী দল নিয়ে মাঠে নামবে। পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীও যথেষ্ট শক্তিশালী। অন্যদিকে অতিথি খেলোয়াড় না পেলে মোহামেডান দুর্বল দল নিয়েই খেলবে। তাই যত আশা দুই আবাহনীকে ঘিরে। পাঁচ শক্তিশালী ক্লাবকে টপকিয়ে ট্রফি দেশে থাকলে তা ফুটবলের জন্য হবে বড় প্রাপ্তি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতা ফুটবলে হতাশা নেমে এসেছে। এখন যদি শেখ কামাল টুর্নামেন্টে দেশের কোনো দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে কিছুটা হলেও আশার আলো জ্বলে উঠবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর