শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুরন্ত জয়ে শুরু বাংলাদেশের

রোলবল বিশ্বকাপ শুরু

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুরন্ত জয়ে শুরু বাংলাদেশের

রোলবল বিশ্বকাপে হংকংকে বিশাল ব্যবধানে হারানোর পর জাতীয় পতাকা হাতে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা —রোহেত রাজীব

মঞ্চে গান গাইছেন সামিনা চৌধুরী আর এস আই টুটুল। সুরের তালে তালে নাচতে শুরু করলেন উরুগুয়ের রোলবল খেলোয়াড়রা। উন্মুক্ত নাচের এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি অন্যরাও। রোলবল বিশ্বকাপ খেলতে আসা দলগুলো প্রাণের উচ্ছ্বাসে নাচল বাংলা গানের সুরের ছন্দে। গতকাল সকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উদ্বোধন করা রোলবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা হলো প্রাণজুড়ানো। তবে এরপরই বিপত্তির শুরু।

শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচ দিয়ে বিকাল ৩টায় রোলবল বিশ্বকাপ শুরুর কথা ছিল। এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হয় হ্যান্ডবল মাঠে! উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে গড়ে তোলা স্টেজটা ঠিক সময়মতো সরানোই গেল না! উদ্বোধনী দিনের এ অব্যবস্থাপনা অবশ্য ভুলিয়ে দেন বাংলাদেশের রোলবল খেলোয়াড়রা। আসিফ-হৃদয়রা ১৯-১ গোলে উড়িয়ে দেন হংকংকে! ১৫ মিনিট করে মোট ৩০ মিনিটের খেলা। প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৭-১ ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে করে আরও ১২ গোল! অবশ্য শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল হংকং। তবে হৃদয়দের দুরন্ত আক্রমণে একের পর এক গোল হজম করে হংকং। আক্রমণভাগের খেলোয়াড় দ্বীন হাসান হৃদয় একাই করেন ১১ গোল! ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশ রোলবল দলের অধিনায়ক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমরা এ জয়ে দারুণ খুশি। যেভাবে প্রথম ম্যাচটা খেলতে চেয়েছিলাম সেভাবেই খেলতে পেরেছি। পিচে প্রথম দিকে ধুলা ছিল বলে একটু সমস্যা হয়েছিল। আশা করি, পরের ম্যাচ থেকে এ সমস্যা থাকবে না।’

 

 

রোলবল বাংলাদেশে খুব একটা পরিচিত খেলা নয়। সারা দুনিয়ায় এর নামডাক খুব একটা ছড়ায়নি। তবে ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খেলাটা। ২০১১ সালে রোলবলের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারতের পুনে শহরে। সেবার স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ডেনমার্ক। ২০১৩ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। সেখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০১৫ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপের আয়োজন করে ভারতই। এবারও চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। চতুর্থবারের মতো রোলবল বিশ্বকাপ আয়োজন করছে বাংলাদেশ।

রোলবল খেলার উদ্ভাবক ভারতের পুনে শহরের রাজ ধাবাড়ে। স্কেটিং করে খেলাটা খেলতে হয় ঠিক হ্যান্ডবলের মতো। উভয়পক্ষে ছয়জন করে খেলোয়াড় কোর্টে থাকতে পারেন একসঙ্গে। এর মধ্যে একজন থাকেন গোলরক্ষক। বাকি পাঁচজন গোলের জন্য মাঠজুড়ে খেলে বেড়ান। বর্তমানে ফুটবলের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ডের মতো দলও রোলবল স্কেটিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ৩৯টি দল অংশ নিচ্ছে পুরুষ ও মেয়ে উভয় ইভেন্টে। অবশ্য গতকাল পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ৩৪টা দল ঢাকায় পৌঁছেছে।

এদিকে গতকাল সকালে উদ্বোধনকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘রোলবল বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রতিফলিত হলো বাংলাদেশ খেলার দেশ, শান্তির দেশ। এতগুলো দেশের খেলোয়াড়দের আগমন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অবশ্যই উজ্জ্বল করেছে।’ ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর এই প্রথম এত বড় বিশ্বকাপের আসর বসছে বাংলাদেশে। অবশ্য একদিক থেকে এই টুর্নামেন্ট আরও বড়। এতগুলো দেশের অংশগ্রহণে এর আগে কোনো টুর্নামেন্টই অনুষ্ঠিত হয়নি বাংলাদেশে। এবার এই টুর্নামেন্টটা সফলভাবে শেষ করতে পারলেই হয়!

সর্বশেষ খবর