বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

এ কেমন রান আউট

মেজবাহ্-উল-হক

এ কেমন রান আউট

বল ব্যাটে লেগেছে কি লাগেনি বোঝা যায়নি। কিন্তু লঙ্কান উইকেটরক্ষক ডিকওয়েলা বল গ্লাভসবন্দী করেই কট-বিহাইন্ডের আবেদন করেন। বোলার স্যান্ডাকনসহ অন্য ফিল্ডাররাও যোগ দেন কিপারের সঙ্গে। বল না দেখেই রান নেওয়ার জন্য দৌঁড় দেন তামিম ইকবাল। সঙ্গে সঙ্গে উইকেট ভেঙে দেন ডিকওয়েলা। আউট! রান আউট তামিম।

একটু আগেও যে ব্যাটসম্যান বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিলেন তার উইকেটটা এতো সহজে পাওয়া যাবে তা যেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা কল্পনাও করেননি। অবিশ্বাস্য লাগছিল অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের কাছেও। আউটের ধরন দেখে তিনি হাসছিলেন। তামিমও যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন— এমন একটি কাজ তার মতো একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের পক্ষে করা সম্ভব! এ কেমন রান আউট!

তামিম-সৌম্যের ওপেনিং জুটিটা দারুণ জমে উঠেছিল। দুই ব্যাটসম্যান যেন প্রতিযোগিতা করে হাফ সেঞ্চুরি করলেন। পার্টনারশিপেও সেঞ্চুরি হলো। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৪৯৪ রানের বড় স্কোর করলেও তামিম-সৌম্য লঙ্কান দলপতি হেরাথের গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছিলেন। বার বার বোলিং পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। বাংলাদেশের সমর্থকদের স্মৃতিতে হয়তো তখন খুলনা টেস্টের সেই দৃশ্যটি উঁকি দিচ্ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম-ইমরুল মিলে ৩১২ রানের ঐতিহাসিক এক জুটি গড়েছিলেন। গতকালও দুই ওপেনার দারুণ আস্থার সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু তামিমের একটি ভুলে ১১৮ রানে ভেঙে যায় জুটি।

ওয়ানডে ডাউনে মুমিনুল এসে ৭ রান করেই সাজঘরে ফিরে গেছেন। দুই উইকেটে ১৩৩ রান করে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। এখনো শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৩৬১ রানে পিছিয়ে টাইগাররা। ফলোঅন এড়াতে প্রয়োজন আরও ১৬২ রান। হাতে রয়েছে ৮ উইকেট।

বোকামি দণ্ড হিসেবে তামিম আউট হয়ে গেলেও আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার অপরাজিত রয়েছেন ৬৬ রানে। ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা! অসাধারণ এক ইনিংস। যদিও চার রানের মাথায় একবার নতুন জীবন পেয়েছেন তিনি। লাকমলের বলে গালিতে সৌম্যের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন পেরেরা। তবে এরপর আর লঙ্কান বোলারদের কোনো সুযোগ দেননি সৌম্য। গতকাল পুরোটা সময় বোলারদের শাসন করেছেন।

লঙ্কান বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন তামিম ইকবালও। আউটের দৃশ্যটি বাদ দিলে বাকি সময়টা ভীষণ সতর্ক হয়েই খেলেছেন এই ড্যাসিং ওপেনার। হাফ সেঞ্চুরি করার পরও আরও বেশি সতর্ক ছিলেন। লক্ষ্য ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে দিনটি পার করে দেওয়া। সেটা অসম্ভবও ছিল না। কেননা তামিম যখন আউট হয়ে যান তখন দিনের খেলা বাকি ছিল আর মাত্র ১০ ওভার।

বাংলাদেশের বোলাররাও গতকাল দারুণ বোলিং করেছেন। আগের দিনের ৩২১/৪ স্কোর লাইনটা সকালের সেশনে হয়ে গিয়েছিল ৩৯৮/৪। তখন মনে হচ্ছিল ৬০০ কিংবা ৭০০ রান করতে চলেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু বোলাররা মাত্র ৯৬ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ছয় উইকেট তুলে নেন। উইকেট শিকারে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের এই তরুণ অলরাউন্ডার একাই নিয়েছেন চার উইকেট। শুধু তাই নয়, অসাধারণ একটি ক্যাচও লুফে নিয়েছেন।

তবে তামিম ইকবালের ক্যাচটি হতে পারে ২০১৭ সালে সেরা ক্যাচ! ১৯৪ রানে অপরাজিত মেন্ডিস চেয়েছিলেন ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেতে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লং অন দিয়ে বল উড়িয়ে মারেন। দেখে মনে হচ্ছিল ছক্কাই হবে! কিন্তু বাউন্ডারি রশির কয়েক ইঞ্চি ভিতর দাঁড়িয়ে প্রথমে বলটি অসাধারণ দক্ষতায় তালুবন্দী করেন। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে বলটি শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে সীমানার বাইরে চলে যান। দ্বিতীয় দফায় বলটি লুফে নেন। এই ক্যাচটিই যেন বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল। তারপর ব্যাটিংয়ে তামিম-তাণ্ডব। শেষ বিকালে সেই তামিমের একটুখানি ভুলেই ছন্দপতন ঘটে। তবে এখনো যে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে দারুণ সুযোগ— একথা অকপটে বলা যায়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর