রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

শততম টেস্টে মানসিক চাপ

মেজবাহ্-উল-হক

শততম টেস্টে মানসিক চাপ

দিলরুয়ান পেরেরার বলে সাজঘরে ফিরেন তামিম ইকবাল। সতীর্থের বিদায়ে হতাশ টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম —ক্রিকইনফো

দিনের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে যান। ধারাভাষ্যকার হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘সৌম্য সরকার কি মাঠে নামার আগে ওয়ার্ম-আপ করেননি?’ ওয়ার্ম-আপের প্রসঙ্গ আসারই কথা। মহাগুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম দিনে প্রথম বলেই কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাটসম্যান সৌম্য। খেলবেন কি খেলবেন না, ভাবতে ভাবতেই ক্যাচ উঠে যায়।

প্রথম বলে বোকামি করার পরও সতর্ক হননি সৌম্য। দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, বোল্ড হওয়ার পরও রিভিউর আবেদন করেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। এখানেই বোঝা যায় সৌম্য মানসিকভাবে কতটা বিপর্যস্ত ছিলেন। বল লেগে যে বেল পড়ে গেছে তা তিনি লক্ষ্যই করেননি। উল্টো কট-বিফাইন্ড ভেবে রিভিউ চান।

দিনের তৃতীয় ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান মুমিনুল হক। এবারও একটি হাস্যকর কাণ্ড ঘটে! অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের সঙ্গে পরামর্শ না করেই রিভিউর আবেদন করেন। অথচ তামিম তাকে রিভিউ না নেওয়ার কথা বলছিলেন। কারণ তামিম পরিষ্কার দেখছিলেন বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর ছিল।

ঘটনা দুটি থেকেই বোঝা যায় গতকাল বাংলাদেশ দল মানসিকভাবে কতটা খারাপ অবস্থায় ছিল। কোনো দল টেস্টে এমন বিধ্বস্ত মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামলে ফল যে তাদের পক্ষে আসবে না তা বোঝার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

দিনের ষষ্ঠ ওভারে ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে থাকা তামিমও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। তবে ড্যাসিং ওপেনার যে বলে আউট হয়েছেন তাকে দোষ দেওয়ার উপায় নেই। সেটাই ছিল পেরেরার দিনের সেরা ডেলিভারি। একসঙ্গে বল টার্ন ও বাউন্স করায় বিভ্রান্ত হয়ে যান তামিম। মূলত ম্যাচটা তখনই হাতছাড়া হয়ে যায়।

১৩তম ওভারে লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ তো জোড়া আঘাত হানেন। বাংলাদেশের সেরা দুই উইকেট তুলে নেন। চতুর্থ বলে সাকিবকে বিদায় করে দেওয়ার পর শেষ বলে বোকা বানিয়ে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে।

টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দিনের শুরুতেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের পরাজয়। কিন্তু ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক তখনো উইকেটে। মুশফিক উইকেটে থাকবেন আর জানান দেবেন না তা কী করে হয়? লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়েই লড়াই জমিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন নিজের মতো করে। কিন্তু দুঃস্বপ্নের দিনে মুশফিকও পারলেন না। লিটনের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটির পর সাজঘরে ফিরে যান। তারপর শেষের ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসাটা ছিল হারের আনুষ্ঠানিতা মাত্র।

কয়েক দিন পরই কলম্বোয় শততম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচকে কেন্দ্র করে উদ্যাপনের নানারকম প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগেই তো গল টেস্টে মানসিকভাবে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন টাইগাররা। অথচ গতকাল ড্র করতে পারলে কলম্বোয় ফুরফুরে মেজাজে শততম টেস্ট খেলতে নামতে পারতেন মুশফিকরা। তা অসম্ভবও ছিল না। শেষের দিন ১০ উইকেট হাতে থাকার পরও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারতে হলো। সেই হারটাও কিনা ২৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে।

আগের দিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। বিনা উইকেটে ৬৭ রান করে দিন শেষ করেছিলেন। দুই ব্যাটসম্যান দুই রকমভাবে নিজেদের উপস্থাপন করছিলেন। তামিম ছিলেন ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। আর সৌম্য মারকাটারি ব্যাটিং করেছেন।

তামিমের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ড্র করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সৌম্য তাণ্ডবে ব্যাটিং জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। কাল প্রথম ঘণ্টাতেই সব সম্ভাবনা কর্পূরের মতো উড়ে গেল।

আগের দিনের বিধ্বংসী সৌম্যকে দিয়েই কাল বাংলাদেশের ইনিংসের ধস শুরু হয়। তারপর টি-ব্রেকের আগেই ১৯৭ রানে গুটিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে তবু ৩১২ রান করেছিলেন মুশফিকরা, কাল তো ২০০ রানও হলো না। টাইগারদের ধসিয়ে দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ লঙ্কান দলপতি রঙ্গনা হেরাথ। তিনি একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। জয়ের পর তাই উচ্ছ্বসিত হেরাথ, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। দলের প্রত্যেক সদস্য আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছেন। কোচিং স্টাফ, আমার পরিবার— সবার কাছ থেকেই আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তবে উইকেট এখনো ব্যাটিং করার জন্য দারুণ। এমন উইকেটেও আমরা দারুণ বোলিং করেছি বলেই ম্যাচ জিতেছি। আমি বলব, এটা দলীয় সমন্বয়ের ফল।’

শেষ দিনে বাজে ব্যাটিং প্রদর্শন করে ম্যাচ হারায় ভীষণ হতাশ মুশফিকুর রহিম, ‘টেস্টে পঞ্চম দিনে উইকেট যতটা খারাপ হওয়ার কথা এখানকার (গল) উইকেট ততটা খারাপ হয়নি। এখনো ব্যাটিংবান্ধব উইকেট রয়েছে। তবে লঙ্কান বোলাররা দারুণ বোলিং করেছেন। এটা ঠিক যে, আমাদের লক্ষ্যটা অনেক বড় ছিল, কিন্তু আমরা সেভাবে ব্যাটিং করতে পারিনি। দিনের প্রথম সেশনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে আমরা ভালো করতে পারিনি। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশা করছি পরের টেস্টে আমরা ভালো করব। আরও ভালো পরিকল্পনা নিয়ে খেলব। এই ম্যাচে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। অভিনন্দন রঙ্গনাবাহিনী!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর