শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন

পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের শততম টেস্টে ৪৯ রানের ইনিংস খেলার পথে ড্রাইভ খেলছেন তামিম ইকবাল

টেস্ট ক্রিকেটে সকালে ও শেষ বিকালের কয়েক ওভার ব্যাটসম্যানদের কাছে খুবই আতঙ্কজনক! আগের দিনের সব চেয়ে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটসম্যানও সকালে ধরাশায়ী হয়ে যান! আবার একটুখানি অসাবধানতার কারণে সারা দিন ব্যাটিং করা ব্যাটসম্যানও আউট হয়ে যেতে পারেন শেষ বিকালে। বোলাররা সকালে পিচের ময়েশ্চার থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেন, শেষ বিকালে বোলিংয়ে একটুখানি পরিবর্তন এনে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানান।

গতকাল শেষ বিকালের ধাক্কাতেই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের। ১৯২/স্কোর লাইনটা হঠাৎ হয়ে যায় ১৯৮/৫। সারা দিন দারুণ খেলেও শেষ ৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেন মুশফিকরা। মাত্র ৬ রানের মধ্যে শেষ মুহূর্তে আউট হয়ে যান বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, তাইজুল ইসলাম ও সৌম্য সরকার। দিন শেষে বাংলাদেশ করেছে ৫ উইকেটে ২১৪ রান। রানের গড়টা ভালোই ছিল কেবল ৩টি উইকেট বেশি পড়েছে।

শততম এই টেস্টে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৫ রান। দুই ওপেনার যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন মনে হচ্ছিল যেন বিনা উইকেটেই দিনটি শেষ করে দেবে বাংলাদেশ। লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথের কপালে চিন্তার রেখা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। বোলিং পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। কিন্তু ইনিংসের ২৮তম ওভারে হঠাৎ ছন্দপতন হয়ে যায়। নিচু হয়ে যাওয়া এক বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান তামিম ইকবাল। মাত্র ১ রানের জন্য তার হাফ সেঞ্চুরি হয়নি। ৪৯ রানের ইনিংস খেলে তামিম সাজঘরে ফিরে যান।

তামিমের দুর্ভাগ্যই বটে! মাঠের আম্পায়ার তাকে আউট দেননি। রিভিউয়ে তার ভাগ্য কাটা পড়ে যায়। যে বলে তামিম লেগ বিফোর হয়েছেন দেখে মনে হচ্ছিল বলটি তার ব্যাটে লেগেছে। শব্দ হয়েছিল। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা যায় বলে সরাসরি তামিমের প্যাডে আঘাত করে—এলবিডব্লিউ!

ইমরুল কায়েস উইকেটে গিয়েই যেন সেট হয়ে যান! মাঝে যে তিনটি টেস্টে তিনি ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি, সেটা তার ব্যাটিংয়ে কোনো প্রভাব ফেলেনি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৫ রান হওয়ার পর হঠাৎ আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার। তার আগেই খেলেন ৬১ রানের দারুণ এক ইনিংস। টানা তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। গল টেস্টের দুই ইনিংসেও দুটি অর্ধশতক ছিল তার। দুই ইনিংসেই প্রথম দিন অপরাজিত থাকার পর দ্বিতীয় দিন সকালেই আউট হয়েছিলেন তিনি।

দারুণ জমে উঠেছিল ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমানের জুটি। দুই ব্যাটসম্যানই আগের টেস্টে ছিলেন না। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন কুমার দাসের জায়গায় দলে সুযোগ পেয়েছেন তারা। এই জুটিতে ওভারপ্রতি চারের বেশি রান উঠতে থাকে। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার যখন বাকি মাত্র আর ৪ ওভার, তখনই ভুল করে বসেন ইমরুল। স্যান্ডকনের বলে এলবিডব্লিউ।

দিনের খেলা শেষ মুহূর্তে— তাই মুশফিক নিজেও নামেননি, সাকিবকেও নামতে বলেননি। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামিয়ে দেন তাইজুল ইসলামকে। কিন্তু লাভ হয়নি। তাইজুল প্রথম বলেই আউট। পরের ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন সাব্বির রহমানও। মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশ যেন স্বর্গ থেকে নরকের পথে ধাবিত হয়।

দারুণ ব্যাটিং করেও শেষ বিকালের ধাক্কায় দিনটি নিজের করে নিতে পারল না বাংলাদেশ। টাইগাররা এখনো লঙ্কানদের চেয়ে ১২৪ রানে পিছিয়ে। হাতে রয়েছে ৫ উইকেট। আজ সকালের একটা ঘণ্টা দেখেশুনে পার করে দিতে পারলে এখনো বড় লিড নেওয়া সম্ভব। কেননা বাংলাদেশের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিক এখন উইকেটে। তা ছাড়া অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মেহেদী হাসান মিরাজ রয়েছেন। দুজনই লড়াকু ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ের পাশাপাশি মিরাজ ব্যাটিংয়েও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। আর প্রথম টেস্ট হলেও পরিপক্ব মোসাদ্দেক।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে সকালের সেশনের ওপর। আজ প্রথম সেশনে দ্রুত উইকেট না হারালে বড় স্কোর করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। কেননা গলের উইকেটের মতো কলম্বোর উইকেটও ব্যাটিংস্বর্গ! কোনো জু জু নেই। দরকার কেবল ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীলতা। শ্রীলঙ্কার লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৯৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত করেছে ৩৩৮ রান। গতকাল লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দারুণ লড়াই করেছেন দিনেশ চান্ডিমাল। নিজে ১৩৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন পাশাপাশি লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকেও দারুণ একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন। ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নামা সুরঙ্গ লাকমল খেলেছেন ৩৫ রানের দারুণ এক ইনিংস। ৯ নম্বরে নেমে অধিনায়ক হেরাথ করেছেন ২৫ রান। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়েই প্রথম সেশন শেষ করে দিয়েছিল লঙ্কানরা। এখন দেখার বিষয়, সাকিব-মুশফিক থাকার পরও আজ কেমন ব্যাটিং করে বাংলাদেশ!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর