শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সেঞ্চুরি টেস্টে সাকিবের সেঞ্চুরি

মেজবাহ্-উল-হক

সেঞ্চুরি টেস্টে সাকিবের সেঞ্চুরি

শততম টেস্টে সেঞ্চুরির পর সাকিবকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন মোসাদ্দেক—এএফপি

সকালের সূর্য যে সব সময় দিনের পূর্বাভাস দিতে পারে না তা যেন আরেকবার প্রমাণ করে দিলেন সাকিব আল হাসান! আগের দিন ছয় রানে তিন উইকেট পতনের পরও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মাত্র ৮ বলে খেলেছিলেন ১৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। অথচ কাল সাকিব ছিলেন ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক! ১৫৯ বলে খেলেছেন ১১৬ রানের অসাধারণ ইনিংস। ঐতিহাসিক শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে সাকিব যেন নিজের নামটা ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লিখে রাখলেন!

আগের দিন সাকিবের ‘পাগলামি’ ইনিংস দেখে যারা সমালোচনা করেছিলেন, তারা নিশ্চয় কালকের ইনিংসটি দেখে বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন! দলের বিপর্যয়ের সময় বুক চিতিয়ে লড়াই করলেন সাকিব। তার সেঞ্চুরি ইনিংসটাও আলোক ঝলমলে। আগের দিনের উগ্র মেজাজি সাকিব কাল ঠাণ্ডা মাথায় লঙ্কান বোলারদের সব পরিকল্পনা লণ্ডভণ্ড করে দেন।

দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করেছেন। কোনো বাজে শট খেলেননি। সাকিবের এই সেঞ্চুরি আগের যে কোনো সেঞ্চুরি থেকে আলাদা। দেশের সেঞ্চুরি টেস্টে সেঞ্চুরি বলে কথা! তাই এই সেঞ্চুরির গুরুত্বই অন্যরকম।

এমন সেঞ্চুরির জন্যই তো একজন ব্যাটসম্যান আরাধনা করে থাকেন। ঐতিহাসিক শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে সাকিব একদিকে যেমন নিজের নামটা ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লিখে রাখলেন, তেমনি চরম বিপর্যয় থেকে দলকেও টেনে তুললেন। সাকিবের সেঞ্চুরিতে ভর করেই শততম টেস্টে বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশ এখন ড্রাইভিং সিটে!

১৯৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটি কিনা শেষ পর্যন্ত করে ফেলল ৪৬৭ রান। ম্যাচটি দেখে না থাকলে অবিশ্বাস্যই মনে হবে। কালকের দিনটি নিজের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। কাল সাকিবকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। মুশফিক আউট হয়েছেন ৫২ রান করে, আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে মোসাদ্দেক করেছেন ৭৫ রান। অভিষেক টেস্টেই দুই দুটি রেকর্ড স্পর্শ করেছেন মোসাদ্দেক। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সর্বোচ্চ রান এবং সপ্তম উইকেট জুটিতে সাকিবের সঙ্গে সর্বোচ্চ রান (১৩১ রান) করেছেন। তবে কাল সঙ্গীর অভাবে মোসাদ্দেকের সেঞ্চুরি না হওয়ায় যেন কষ্টই পেয়েছেন সাকিব, ‘যদি আমি আরও কিছু সময় ব্যাট করতে পারতাম, তাহলে হয়তো মোসাদ্দেক সেঞ্চুরিটা করতে পারত। তবে তার ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্য ছিল খুবই ইতিবাচক দিক। ভবিষ্যতে সে আমার প্রধান তারকা হবে।’

 

বাংলাদেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডবুকে ঢুকে গেছেন সাকিব। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার তিনি। দেশের শততম  টেস্টে সেঞ্চুরি করার প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ১৯১২ সালে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন চার্লস কেলেওয়ে আর ওয়ারেন ব্র্যাডসলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান বিলি ওয়েড নিজেদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। যদিও সেই ম্যাচে জিততে পারেননি প্রোটিয়ারা। ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

নিউজিল্যান্ডের শততম টেস্টেও দুই সেঞ্চুরি করেন তাদের দুই ব্যাটসম্যান বেভান কংডন ও ব্রায়ান হেস্টিংস। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ড্র করেছিল নিউজিল্যান্ড। ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের হয়ে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন মাজিদ খান। গত বছর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার গ্রায়েম ক্রিমারও তাদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যায় জিম্বাবুয়ে।

এবার সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় যুক্ত হলো সাকিব আল হাসানের নাম। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজের রেকর্ডের কথা ভেবে নয়, বড় ইনিংস খেলেছেন দলের প্রয়োজনের কথা মাথা রেখেই। গতকাল কলম্বোতে ম্যাচ শেষে সাকিব বলেন, ‘আগের দিন আমরা যেখানে শেষ করেছিলাম, আমার দরকার ছিল বড় স্কোর। লিড নেওয়া খুবই দরকার ছিল। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। এটাই সেই পরিশ্রমের ফল। এই ইনিংসটা আমার সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে একটি।’ তিনি বলেন, ‘এমন উইকেটে ভালো করতে হলে ধৈর্য ধরে উইকেটে পড়ে থাকতে হবে। আগের দিন শেষ বিকালে দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই আজ ভালো ব্যাটিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি দিনেশ চান্দিমালের ইনিংস থেকে শিক্ষা নিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর