মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন অধ্যায়ের সূচনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুন অধ্যায়ের সূচনা

শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পর আনন্দে আত্মহারা অধিনায়ক মুশফিক ছুটে যাচ্ছেন সতীর্থদের কাছে। বিমর্ষ হয়ে তা দেখছেন লঙ্কান অধিনায়ক হেরাথ —ফাইল ফটো

শততম টেস্টের ঐতিহাসিক জয়ের রেশ এখনো কাটছে না। জয়ের আনন্দে বুঁদ হয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন প্রিয় দল ও ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। অসাধারণ, দুর্দান্ত জয়ের পর এখন ক্ষণ গুনতে শুরু করেছেন পরবর্তী জয়ের। কলম্বোর পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের স্বপ্নের জয়ের পর অনেকেই আবার বাংলাদেশের আগের জয়গুলো নিয়ে বসে পড়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টের জয়, না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিংবা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম জয়টিকে এগিয়ে রাখবেন— এ নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঝড় তুলছেন আড্ডার টেবিলে। ক্রিকেটপ্রেমীরা নিজেদের যুক্তির বিচারে জয়গুলো নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে থাকলেও শততম টেস্টে জয়টি একেবারেই আলাদা মাইলফলক হয়ে থাকবে এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। ঐতিহাসিক এই জয়ের পর থেকেই হয়তো সাদা পোশাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই পাল্টে যাবে। সূচনা হবে নতুন অধ্যায়ের।

১৪০ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলছে ১০টি দেশ। দেশগুলো টেস্ট খেলেছে ২ হাজার ২৫৬টি। এর মধ্যে মাত্র চারটি দেশ নিজেদের ১০০তম টেস্টে জয় পেয়েছে। বাংলাদেশের আগে এই কৃতিত্ব অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের। অন্তত এই বিবেচনায় কলম্বোয় শততম টেস্টটি এগিয়ে অন্য যে কোনো জয়গুলোর চেয়ে। তার পরও ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়, ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুটি জয়, ২০১২ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে হারানো এবং গত অক্টোবরে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে একেকটি মাইলফলক। ১০০ বাংলাদেশের ‘লাকি’ নম্বর। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টি ছিল শততম ওয়ানডে। ওই দিনটি আবার বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় এক দিন। ওইদিন প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশের তীরবর্তী অঞ্চল। সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত জয়ের আগে টাইগারদের খাতায় জয় ছিল মাত্র ৪টি। কেনিয়া, পাকিস্তান, স্কটল্যান্ড ও হংকংয়ের বিপক্ষে। শততম ওয়ানডে জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিত শক্ত করে দিয়েছিল। এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছিল। যে রাস্তার সারথি হয়ে পরের দুই বছরে টাইগাররা হারায় অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে। নটিংহামে হারায় অস্ট্রেলিয়াকে এবং বগুড়ায় শ্রীলঙ্কাকে। শততম ওয়ানডেতে জয়ের পর বাংলাদেশের জয়ের গ্রাফ উপরে উঠতে থাকে দ্রুত। ঘরের মাঠে এবং বাইরে নিয়মিত জয় পেতে থাকেন টাইগাররা। সিরিজ জেতেন ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিগুলোর বিপক্ষে।

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টি সাদা পোশাকে বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর টেস্ট অভিষেক। প্রথম টেস্ট জয় পায় বাংলাদেশ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৬ রানের জয়টি সমালোচকদের জবাব দিয়েছিল শক্ত হাতে। ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্টে ৯৫ রানের জয় এবং গ্রানাডায় ৪ উইকেটের জয় বাড়িয়ে দিয়েছিল টাইগারদের আত্মবিশ্বাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে টানা দুই জয় মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের বিশ্বাসকে আকাশচুম্বী করেছিল। আত্মবিশ্বাসের পারদে যোগ করেছিল ‘আমরাও পারি’! এরপর ২০১২ সালে হারারেতে বিপরীত পরিবেশে জয় তুলে দেশের বাইরে জয় তুলে নেওয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করেন টাইগাররা। এবারের জয় একেবারেই নতুন ইতিহাস। ১০০তম টেস্ট শুধু একবারই লেখা হয় ইতিহাসের পাতায়।

কলম্বোয় ঐতিহাসিক জয়ের আগে মুশফিকদের বিশ্বাসটাকে আরও শক্তপোক্ত করেছিল মিরপুরের অসাধারণ জয়টি। চট্টগ্রামে ২২ রানের হারের পর মিরপুরে ‘ক্রিকেটের জনক’ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন সাকিব, তামিমরা। অ্যালিয়েস্টার কুকদের বিপক্ষে জয়টিকে অনেকেই আবার বাংলাদেশের সেরা জয় বলতে কার্পণ্য করছেন না। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড কিংবা শ্রীলঙ্কা— যার বিপক্ষেই জয় তুলে নিক না কেন বাংলাদেশ, এটাই সত্যি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়টি। ১০০তম টেস্টে জয় থেকেই হয়তো নতুন বাঁকের সন্ধান পাবে বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর