বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ এবার মাশরাফির

মেজবাহ্-উল-হক

চ্যালেঞ্জ এবার মাশরাফির

শততম টেস্ট জিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে টাইগাররা। এবার ওয়ানডে সিরিজে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কোচ হাতুরাসিংহে অধিনায়ক মাশরাফিকে পরামর্শ দিচ্ছেন

টেস্ট নিয়ে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল না। তারপরেও শ্রীলঙ্কায় শততম ম্যাচটি জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম লিখেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

কিন্তু ওয়ানডে নিয়ে তো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রত্যাশার পাহাড়! শ্রীলঙ্কা এখন বাংলাদেশের সমমানের দল। ঘরের মাঠেও তাদেরকে ফেবারিট বলার উপায় নেই। কেননা বাংলাদেশ গত দুই বছরে ওয়ানডেতে ক্রিকেটবিশ্বে শক্তিশালী একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন যেকোনো দলকে বলে-কয়ে হারানোর ক্ষমতা রাখে।

শততম টেস্টে মুশফিকের দল জিতে যাওয়ায় মাশরাফির জন্য চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে গেছে। ম্যাশ হয়তো এমন চ্যালেঞ্জ ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছেন। তা ছাড়া টেস্টে পাওয়া জয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আরও বেশি উজ্জীবিত করবে বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘ওয়ানডে স্কোয়াডের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই টেস্ট স্কোয়াডে ছিল। তাই শততম টেস্টটি জেতার পর মানসিকভাবে অনেকখানি এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।’

শ্রীলঙ্কা নিজেদের মাটিতে সব শেষ সিরিজে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। তারপরেও বাংলাদেশ দল লঙ্কানদের দেখে ভয় পায়নি। বরং প্রথম দিন থেকেই ভালো খেলেছে। আত্মবিশ্বাসের কারণেই শেষ পর্যন্ত ভালো করেছে টাইগাররা। টেস্টের পারফরম্যান্সটা এবার ওয়ানডেতে প্রদর্শন করার কথা বললেন মাশরাফি, ‘টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতে অবশ্যই প্রত্যাশা বেশি। আমাদের মতো সমর্থকদেরও তাই। লাল বল থেকে সাদা বলে আসা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, মানসিকভাবে তৈরি হওয়ার বিষয় থাকে। প্রত্যাশা আছে ভালো করার ব্যাপারে। এজন্য ভালো খেলতে হবে। টেস্টেও আমরা শুরু থেকে ভালো খেলেছি, ফলাফল ভালো হয়েছে। ওয়ানডেতেও সেটার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করব।’

শ্রীলঙ্কায় টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করেছেন সাকিব-তামিমরা। তারপরেও ওয়ানডে লড়াইয়ে নামার আগে ব্যাটিং নিয়েই যত ভাবনা মাশরাফির। তবে ম্যাশ মনে করেন, ব্যাটিং ভালো হলে শ্রীলঙ্কাকে হারোনো সম্ভব। তার দাবি, ‘ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকতে পারে। কারণ ওদের কয়েকজন ভালো বোলার আছে। আর আমরা পাঁচটা টেস্ট খেলার পর সাদা বলে খেলব। এখন যেটা হবে, আমাদের রান বের করতে হবে। ওদের কিছু কঠিন বোলার আছে, তাদের কাছ থেকে রান  বের করাটা কঠিন হবে। তবে মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকতে পারলে এবং শুরুটা ভালো হলে সিরিজ জয় কঠিন হবে না।’

মাশরাফির সবচেয়ে বড় শক্তি, তিনি দলকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। কোন ক্রিকেটারের কাছ থেকে কিভাবে তার সেরাটা বের করে নিয়ে আসতে হবে তা খুব ভালো করেই জানেন। তবে মাশরাফি অতীতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তার কথা, অতীতে কি হয়েছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বর্তমানের ওপরই তার সবচেয়ে বেশি ভরসা। ম্যাশ বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পেছনে কী হয়েছে সেটা থেকে সুবিধা পাই না। তবে কোনো খেলোয়াড় এসব থেকে অনুপ্রাণিত হলে অন্য কথা। আমার অতীত থেকে কোনো কিছু হয় না। আমি আগে অনেক ম্যাচ  হেরে এসেছি। এর মানে এটা নয় যে আমি জিততে পারব না।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে রানে ফিরেছেন দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা। শততম টেস্টে সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করেছেন। আর তামিম পঞ্চম দিনে চতুর্থ ইনিংসে ৮২ রানের ইনিংস খেলে তার ক্লাস বুঝিয়ে দিয়েছেন। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। যেকোনো সময় যেকোনো ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের নিউক্লিয়াস। রানে ফিরেছেন ওপেনার সৌম্য সরকারও। তবে মাশরাফির কাছে সবচেয়ে বড় স্বস্তির ঘটনা নিশ্চয়ই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের ফর্মে ফেরা।

ইনজুরি কাটিয়ে আবার পুরনো ফর্মে ফিরেছেন সাতক্ষীরার সুপারম্যান খ্যাত এই বোলার। শততম টেস্টে জয়ের নেপথ্য নায়ক কিন্তু তিনিই ছিলেন। চতুর্থ দিনে তার জাদুকরি এক স্পেলই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে স্বপ্নের পথে। সাকিব তো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অসাধারণ বোলিংও করেছেন। দুর্দান্ত পারফর্ম শ্রীলঙ্কায় টেস্টে সিরিজ সেরা হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে আবারও শীর্ষে উঠে গেছেন। পেছনে ফেলেছেন ভারতীয় তারকা অলরাউন্ডার রবিচন্দন অশ্বিনকে। আবারও তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর জায়গা দখল করে নিয়েছেন তিনি। ওয়ানডে সিরিজের আগে এই খবর হয়তো সাকিবকে মানসিকভাবে আরও এগিয়ে রাখবে।  

চলতি বছর এখনো কোনো ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাশরাফিরা সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেলসনে। তবে নিউজিল্যান্ড সফরটি মোটেও সুখকর ছিল না। সিরিজের তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছিলেন মাশরাফিরা। এরপর পাঁচটি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। তিন মাস পর আবার লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ ওয়ানডে খেলতে নামছে। প্রথম ম্যাচটি হবে ডাম্বুলায়। এখন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টেস্টের পর ওয়ানডের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর