বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাগ্যবান চার অধিনায়ক

শততম টেস্টে জয়

রাশেদুর রহমান

ভাগ্যবান চার অধিনায়ক

ক্রিকেটে কত রকমের রেকর্ডই না হয়! এর মধ্যে ভাঙা-গড়ার ইতিহাসও কম নয়। তবে কিছু রেকর্ড আছে যা ইতিহাসে টিকে থাকবে শত-শত বছর। শতাব্দী পেরিয়ে হয়ত কেউ একবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ দিন কয়েক আগে তেমনই এক রেকর্ড গড়ল। নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তানের পাশে স্থান করে নিল। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নাম জুড়ে গেল কিংবদন্তির অধিনায়ক সিড গ্রেগরি, স্যার গ্যারি সোবার্স এবং মুশতাক মুহাম্মদদের সঙ্গে। ক্রিকেটে তখন একটাই ফরম্যাট। টেস্ট। ইংল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ হচ্ছে (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা)। সে সময় প্রোটিয়ারাই ছিল ক্রিকেটের নবাগত। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিড গ্রেগরির অস্ট্রেলিয়া খেলতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ১৯১২ সালের ২৭ মে’র সেই টেস্ট ছিল অসিদের শততম ম্যাচ। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চার্লস কেলওয়ে (১১৪) এবং ওয়ারেন বার্ডসলির (১২১) শতকে ৪৪৮ রান সংগ্রহ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে দুই ইনিংস মিলিয়ে (২৬৫ ও ৯৫) ৩৬০ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংস ও ৮৮ রানের জয় নিয়ে সিড গ্রেগরির নেতৃত্বে মাঠ ছাড়ে অসিরা। সিড গ্রেগরি অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে মহা তারকার খ্যাতি পাননি। ৫৮ টেস্টে তার রান মাত্র ২২৮২। তবে শততম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেই তিনি ইতিহাসের পাতায় টিকে আছেন বহুকাল ধরে।

স্যার গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন অজেয় দল গড়ে তুলেছে। ১৯৬৫ সালের মার্চে জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে অস্ট্রেলিয়া এই দুরন্ত ক্যারিবীয় বাহিনীর মুখোমুখি হয়। ক্রিকেটের মুরব্বি অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে নিজেদের শততম টেস্টে যেন ছেলেখেলাই খেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে করা ২৩৯ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ইনিংসে করেছিল ২১৭ রান। জবাবটা ভালোই দিয়েছিল অসিরা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭৩ রান করে মোট ৩৯৬ রানের টার্গেটে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠালে ২১৬ রানেই থেমে যান সিম্পসনরা। গ্যারি সোবার্স বাহিনী ১৭৯ রানের জয় তুলে নেয় নিজেদের শততম টেস্টে। ইতিহাসের পাতায় স্যার গ্যারি সোবার্স অবশ্য অন্য কারণেও বেঁচে থাকবেন বহুকাল। ক্যারিবীয় এ অলরাউন্ডার ৯৩ টেস্টে ৮০৩২ রান করা ছাড়াও ২৩৫ উইকেট শিকার করেছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে তাকেই ধরা হয়।

ক্রিকেটের আঙ্গিনায় পাকিস্তানের পথচলা শুরু ১৯৫০’র দশকে। তবে দল হিসেবে পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে বেশিদিন সময় নেয়নি তারা। ১৯৭৯ সালে নিজেদের শততম টেস্ট খেলতে নামে পাকিস্তান। মুশতাক মুহাম্মদের নেতৃত্বে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় তারা। প্রথম ইনিংসে দুরন্ত অসি বোলিংয়ের সামনে মাত্র ১৯৬ রানেই থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। তবে ইমরান খান, সরফরাজ আর ওয়াসিম রাজারা অস্ট্রেলিয়াকে আটকে দেন ১৬৮ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মজিদ খানের শতকে (১০৮) ৩৫৩ রান করে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার সামনে ছুড়ে দেয় ৩৮২ রানের লক্ষ্য। অ্যালান বোর্ডার সেঞ্চুরি (১০৫) করলেও অস্ট্রেলিয়া ৩১০ রানের বেশি করতে পারেনি। পাকিস্তান নিজেদের শততম টেস্ট জিতে নেয় ৭১ রানে। মুশতাক মুহাম্মদ এরপর আর বেশিদিন ক্রিকেট খেলেননি। ওই বছরই অবসরে যান। মোট ৫৭ টেস্টে ৩৬৪৩ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। উইকেট শিকার করেছেন ৭৯টি। ওয়ানডেও খেলেছেন ১০টি। তবে শততম টেস্টে পাকিস্তানকে জয় উপহার দিয়েই ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী নাম লিখিয়েছেন মুশতাক মুহাম্মদ।

অস্ট্রেলিয়ার সিড গ্রেগরি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গ্যারি সোবার্স এবং পাকিস্তানের মুশতাক মুহাম্মদের পাশে নাম লেখালেন মুশফিকুর রহিমও। কলম্বোর পি সারা ওভালে এক ঐতিহাসিক জয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। শক্ত হাতে হাল ধরেছেন প্রয়োজনের মুহূর্তে। শততম টেস্ট জিতে কালজয়ী অধিনায়কদের পাশে নাম লিখিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী আসন নিলেন বগুড়ার ছেলে মুশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর