বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভেস্তে গেল মোহামেডানের ঐক্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভেস্তে গেল মোহামেডানের ঐক্য

১৫ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ফুটবল লিগে শিরোপা জিততে পারছে না। ২০০২ সালে প্রিমিয়ার লিগে শেষবারের মতো ট্রফি জিতে। পেশাদার লিগে ঢাকা আবাহনী সর্বোচ্চ ৫, শেখ জামাল ৩ ও শেখ রাসেল একবার করে শিরোপা জিতেছে। সেখানে মোহামেডানের কিনা রানার্সআপই বড় প্রাপ্তি। প্রথম তিন মৌসুমে রানার্সআপ হলেও কয়েক মৌসুম ধরে পেশাদার লিগে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের অবস্থা বড্ড নাজুক। গেল লিগে কোনোরকম রেলিগেশন রক্ষা করে। অবস্থান ছিল আটে। মোহামেডানের দল রেলিগেশন ফাইট দেবে যা কখনো স্বপ্নেও ভাবা যায়নি।

১৯৭৪ সালে নবম ও ১৯৭৭ সালে লিগে সপ্তম স্থান দখল করলেও পরবর্তীতে মোহামেডান পুনরায় জ্বলে উঠে। কিন্তু দিনের পর দিন ক্লাবটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত সমর্থকরা। কেননা অতীতে বেশকটি খ্যাতনামা দলের ক্রীড়াঙ্গনে নাম-গন্ধও এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মোহামেডান যেন সেই পথে হারিয়ে না যায় তা গুরুত্ব দিয়ে কিছুদিন আগে ক্লাবে এক মিলনমেলা ঘটেছিল। সেখানে অভিমানে দূরে থাকা সংগঠকরা জোর গলায় বলেছিলেন এখন থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। সদস্যসচিব লোকমান হোসেন ভূঞাও বলেছিলেন আমি এমন দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ধারণা করা হচ্ছিল এই ঐক্যতে আসন্ন ফুটবল মৌসুমে শক্তিশালী দল গড়বে মোহামেডান। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। শেখ রাসেল, শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনী, নবাগত সাইফ পাওয়ার টেক ও ঢাকা আবাহনী ইতিমধ্যে ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। এটা ঠিক মোহামেডানে এবার বেশ কজন অভিজ্ঞ ফুটবলার যোগ দেওয়া নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয় বলে দলে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি তাদের পুরনো ক্লাব। সেক্ষেত্রে তারা কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা দেখার বিষয়। ক্রিকেটেও আহামরি দল গড়তে পারেনি।

যারা ক্লাবের স্বার্থে সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা কিন্তু শর্তজুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান কমিটি তা তোয়াক্কা না করায় সবকিছু ভেস্তে গেছে। মোহামেডানের ঘরের লোক বলে পরিচিত বাদল রায় জানালেন, আমরা কমিটি পরিবর্তনের কথা বলিনি। নিবেদিত সংগঠকদের কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া শক্তিশালী দল গড়তে যে ধরনের ফান্ড দরকার সেটাও জোগাড় করে দিতাম। এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে লোকমান ভাইয়ের এক সভা ডাকার কথা ছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তা ডাকা হয়নি। এই অবস্থায় আমরা কাজ করি কীভাবে?

বাদল রায় দৃঢ়ভাবে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মোহামেডানে কোনো গ্রুপিং বা দ্বন্দ্ব নেই। দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবে না। তাই মোহামেডান ক্লাব ধ্বংস হয়ে যাক আমরা কেউ চাই না। প্রয়োজনে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করব। তিনি খেলাধুলাকে ভালোবাসেন। নিশ্চয় মোহামেডানের উন্নয়নে গাইড দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ দেশের অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক লোকমান হোসেন ভুঞা বলেন, ক্লাব উন্নয়নে সবাই মিলে কাজ করুক এটা কে না চায়। এ জন্য আমি কিছুদিন আগে বেশ কজনের সঙ্গে বৈঠকে বসি। এই বৈঠকে ক্লাব উন্নয়নে অনেক আলোচনা হয়। বিশেষ করে ফুটবলের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এ নিয়ে আমি ক্লাব সভাপতির সঙ্গে কথা বলি। সভাপতি এ কথাও বলেন, যদি কেউ কাজ করতে চান তাহলে ফুটবলে আলাদা কমিটি করে দেন। সত্যি বলতে কি চাপ কমাতে আমিও চেয়েছিলাম ফুটবলটা অন্যরা দেখাশোনা করুক। সবকিছুই গুছিয়ে এনেছিলাম।

তাহলে তা বাস্তবে রূপ নিল না কেন? লোকমান বলেন, সেই বৈঠকে আমি বলে আসি, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব। বিশ্বাস করেন সভাপতি বা পরিচালকরা কোনো ব্যাপারে আপত্তি তোলেনি। বৈঠক ডাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ কেউ বললেন, লোকমান ভাই থাকলে কেউ সহযোগিতা করবেন না। আরেক অভিজ্ঞ সংগঠক বললেন, লিমিটেড কোম্পানি ভেঙে দিয়ে মোহামেডানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা কিন্তু ওই বৈঠকে বলেছিলেন ক্লাব উন্নয়নে তারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে চায়। এই কি তার নমুনা? আমি ক্লাবের নির্বাচিত ডাইরেক্টর ইনচার্জ। চিরদিন এই পদে থাকবো না। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচিত সদস্যকে কি সরানো যায়। তাছাড়া ওই বৈঠকে তারা বলেছিলেন বৈঠক ডাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাব। অথচ রাতারাতি সুর বদল হয়ে গেল। আর মোহামেডান তো লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে সব সদস্যের সমর্থনে। হুট করে কি তা ভাঙা যায়। যাক অনেক আপত্তিকর কথা শুনছি। এ নিয়ে আমি বিচলিত নই। বরং আহ্বান জানাচ্ছি আসুন মোহামেডান উন্নয়নে মতবিরোধ ভুলে মিলেমিশে কাজ করি।

সর্বশেষ খবর