বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রস্তুতি ম্যাচে মাশরাফি ঝড়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রস্তুতি ম্যাচে মাশরাফি ঝড়

হাফ সেঞ্চুরির পথে মোসাদ্দেকের একটি দুরন্ত শট। সৌম্য, মোসাদ্দেক আর সাব্বিরদের ব্যাটিংয়ের পর মাহমুদুল্লাহ ও মাশরাফি ঝড় রানের পাহাড়ে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে শেষরক্ষা হলো না —এএফপি

ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সানজামুল ইসলামের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশের ছুড়ে দেওয়া ৩৫৫ রানের টার্গেট থেকে বাংলাদেশ তখনো ১১৬ রান দূরে। বল বাকি মাত্র ৬৭টি। স্ট্রাইকরেট বল প্রতি প্রায় ২! হাতে উইকেট ৩টি। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জেতা কল্পনাতীত! তার ওপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়া বাকি সবাই টেল এন্ডার ব্যাটসম্যান। সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করে ফেলেছিলেন মাশরাফি এবং রিয়াদ। মাশরাফির টর্নেডো ব্যাটিংয়ে জয় প্রায় তুলেই নিয়েছিল বাংলাদেশ তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটিতে। কিন্তু জয় পাই পাই করেও পায়নি মাশরাফি বাহিনী। শেষ ওভারের শেষ বলে হেরেছে মাত্র ২ রানে। হারলেও তবে ২৫ মার্চ ডাম্বুলায় ওয়ানডে সিরিজের আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাসটাকে ঝালিয়ে নিয়েছে আরও একবার। মাশরাফির ১৬৫.৭১ স্ট্রাইক রেটের ৩৫ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫২।  

কলম্বোর পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে নিজেদের ১০০তম টেস্টে দুর্দান্ত জয় তুলে বাংলাদেশ। অসাধারণ, ঐতিহাসিক ওই জয়ে এ দেশের ক্রিকেট এখন আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চ চূড়ায়। ঐতিহাসিক জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে টাইগাররা ২৫, ২৮ মার্চ ও ১ এপ্রিল তিনটি ওয়ানডে খেলবে। টেস্ট সিরিজ খেলেছে মুশফিকের নেতৃত্বে। ওয়ানডে সিরিজের অধিনায়ক মাশরাফি। শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। গতকাল কলম্বো ক্লাব গ্রাউন্ডে হাই স্কোরিং ম্যাচে ২ রানে হারলেও সিরিজে ফেবারিট হিসেবেই নামবেন মাশরাফিরা।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক বোর্ড সভাপতি একাদশ ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৫৪ রান করে। ধনঞ্জয় পেরেরা, বিক্কারাডি ও ডি সিলভারা এতটাই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন যে, মাশরাফি, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, শুভাগত হোমদের পাড়া মহল্লার বোলার মনে হয়েছে। মূল একাদশের সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, তামিম ইকবালদের বিশ্রাম দিতে খেলানো হয়েছে আবুল হাসান রাজু ও সাইফুদ্দিনকে। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরছেন আজ রাজু ও সাইফুদ্দিন। স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের চড়াও ব্যাটিংয়ে টাইগার বোলারদের বিবর্ণ মনে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর খেলতে নামা মাশরাফি ৯ ওভারের স্পেলে রান দিয়েছেন ৬৬। তাসকিন ছিলেন আরও খরুচে। ৬ ওভারে দিয়েছেন ৫১। ওভার প্রতি স্ট্রাইকরেট ৮.৫০। রুবেল ৮ ওভারে ৬৭, শুভাগত একমাত্র বোলার হিসেবে ১০ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ৫৯। এমন বোলিং পারফরম্যান্স ওয়ানডে সিরিজে ভাবাবে টিম ম্যানেজমেন্টকে কোনো সন্দেহ নেই।

৩৫৫ রানের টার্গেট। আকাশ ছুঁই টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন ইমরুল কায়েস। এরপর সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান ১৭.১ ওভারে ১১৬ রান যোগ করেন। সৌম্য স্বভাবজাত মেজাজে ব্যাটিং করে ৪৩ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ রান করেন। সাব্বির ৭২ রানের ইনিংস খেলেন ৬৩ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। সৌম্য ও সাব্বির সাজঘরে ফিরেন মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে। মুশফিক ২০ রান করেন ২৩ বলে। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬৬ রান যোগ করেন ১০.১ ওভারে। তরুণ মোসাদ্দেক ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন ৫০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায়। শততম টেস্টে উপেক্ষিত মাহমুদুল্লাহ তাকে না খেলানোর জবাব দেন ৭১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে। এই ইনিংসটি টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপে ফেলে দিবে ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডেতে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মাশরাফি। টর্নেডো গতিতে ব্যাটিং করে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন মাত্র ৩৫ বলে। এতে ছিল ৪টি ছক্কা ও চারটি চার। ৪৩ নম্বর ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে মাশরাফি নেন ১৬ রান। পরের ওভারে আবার এক ছয় ও এক চার হাঁকান। এভাবেই চার-ছক্কার ঝড় তুলে ওয়ানডে সিরিজের আগে দলকে চাঙ্গা করার ব্যাটিং করেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি।  

সর্বশেষ খবর