শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুরনো রূপে ফিরছে ক্রীড়াঙ্গন!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পুরনো রূপে ফিরছে ক্রীড়াঙ্গন!

পুরনো রূপে ফিরে যাচ্ছে কী ক্রীড়াঙ্গন? এই প্রশ্নটি এখন ক্রীড়ামোদীদের মুখে মুখে। কেননা ফেডারেশনগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার জাতীয় ক্রীড়াপরিষদ নির্বাচনের বদলে অ্যাডহক কমিটি গঠন করছে। গঠনতন্ত্রে আছে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু কিছু ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ ৯০ দিন পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। তারপরও নির্বাচন দেওয়ার লক্ষণ নেই। টেনিস ফেডারেশনে তো ১০ বছর ধরে নির্বাচনই হচ্ছে না। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে পুনরায় আরেকটি অ্যাডহক কমিটি গড়া হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ক্রীড়াপরিষদ। তাই কেউ আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। সত্যি বলতে কি জাতীয় ক্রীড়াপরিষদের এমন কর্মকাণ্ডে স্থবির হয়ে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ২/৩টি ফেডারেশনে নির্বাচনও হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেমে যায়। অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ফেডারেশন এগুলো পরিচালিত হতে থাকে। এখানে যোগ্যতা নয় কে কোন রাজনীতিতে বিশ্বাসী তা গুরুত্ব দিয়ে কমিটি গঠন হতো।

১৯৯৬ সালে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিকেএসপিতে জাতীয় ক্রীড়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ক্রীড়াঙ্গনে গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। থাকতে হবে জবাবদিহিতা। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে ফেডারেশনের গঠন করতে হবে। সত্যি বলতে কি এই দাবি অনেক যোগ্য সংগঠকেরই ছিল। অ্যাডহক কমিটির কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় ক্রীড়াঙ্গন অচল হয়ে পড়েছিল। কাজ গুছিয়ে নিতে একটু দেরি হলেও ওবায়দুল কাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন শুরু হয়। একেরপর এক সব ফেডারেশনে নির্বাচন। অ্যাডহক কমিটির বিলুপ্তি ঘটে পুরোপুরি।

২১ বছর ধরে এভাবে চলছে ক্রীড়াঙ্গন। এটাও ঠিক নির্বাচনের পর ফেডারেশনগুলো পুরোপুরি স্বচ্ছভাবে চলছে তাও বলা যাবে না। বিশেষ করে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কোনো কোনো ফেডারেশনে নির্বাচন এলে যেন টাকা উড়ে। কিন্তু তা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব তো ক্রীড়াপরিষদের। তারা কি পেরেছে কাউকে সতর্ক করে দিতে। বরং এসব কাজের সঙ্গে তারাও জড়িয়ে পড়ে। অতীতে এমনো দেখা গেছে ক্রীড়াপরিষদে বসেই নির্বাচন কমিটি ঠিক করতে। তাই অনেক যোগ্য সংগঠকের কমিটিতে ঠাঁই মেলে না।

এখন আবার দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মনোযোগী হয়ে পড়েছে অ্যাডহক কমিটি গড়ায়। ক্রীড়াপরিষদের এমন ভূমিকায় বিস্মিত ক্রীড়ামোদীরা। সাইক্লিং, অ্যাথলেটিক্স, ভারোত্তোলন, টেনিস ও মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ। এখানে কয়েকটি ফেডারেশন কাউন্সিলর ঠিক করে নির্বাচনের তাগাদা দিয়েছিল ক্রীড়াপরিষদকে। তারপরও নির্বাচনের বদলে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমন ফেডারেশনে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে যিনি বিতর্কিত কাজের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। মামলাও হচ্ছে, তাহলে কোন পথে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন।

এ ব্যাপারে গতকাল আলাপ হয় জাতীয় ক্রীড়াপরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কেন যে এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি সব কিছু প্রস্তুত করার পর নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেব। তিনিই তফসিল ঘোষণা করবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেশন তো আর নির্বাচনের তরিখ ঘোষণা করতে পারে না। কেউ কেউ মামলাও করেছেন, এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’

ক্রীড়াপরিষদের নীতিমালায় ১৩নং অনুচ্ছেদে আছে অ্যাডহক কমিটিতে সাত জনের বেশি থাকতে পারবে না। অথচ দেখা যাচ্ছে এই সংখ্যাও ২৩ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অশোক বলেন, ‘এটা ভুল ধারণা। এই নিয়ম জেলা ক্রীড়া সংস্থার জন্য। ফেডারেশনের বেলায় আমরা এখনো আলাদা নিয়মনীতি করতে পারিনি।’ টেনিস ফেডারেশনের প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ফেডারেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাও হয়েছিল। কিন্তু একজন মামলা করায় তা স্থগিত হয়ে যায়। অশোক দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ক্রীড়াপরিষদ নিয়ম মেনেই অ্যাডহক কমিটি গঠন করছে। এখানে আমাদের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই।

সর্বশেষ খবর