বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রেকর্ড বুকে তাসকিনের নাম

আসিফ ইকবাল

রেকর্ড বুকে তাসকিনের নাম

হ্যাটট্রিকের পর তাসকিনের বাঁধভাঙা উল্লাস —এএফপি

ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ‘হ্যাটট্রিক ম্যান’ পাকিস্তানের জালালউদ্দিন। ১৯৮২ সালে হায়দরাবাদের নিয়াজি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা তিন বলে উইকেট নেওয়ার পর বিস্ময়ে চোখ বড় হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি পেসারের। অবিশ্বাস্য ও বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে জিওফ লওসন (যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের কোচ হয়েছিলেন) কিন্তু হেসেছিলেন! প্রথম হ্যাটট্রিক বলে কথা। এরপর সময়ের চোরা স্রোতে ৩৫ বছর পর গতকাল ৪১ নম্বর হ্যাটট্রিকটি করেন বাংলাদেশের সুদর্শন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। ডাম্বুলার রানগিরি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাসকিন হ্যাটট্রিক করেন ইনিংসের শেষ ওভারে। নুয়ান প্রদীপকে বোল্ড করে বিস্মিত না হয়ে আনন্দে ও উচ্ছ্বাসে প্রজাপতির রঙিন পাখায় ভাসেন ‘স্পিড স্টার’। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে বিরল রেকর্ডটি গড়েন সুদর্শন ও সুঠামদেহী তাসকিন। এর আগে কাজী শাহাদাত হোসেন রাজিব, আবদুর রাজ্জাক রাজ, রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলাম হ্যাটট্রিক করেছিলেন টাইগারদের পক্ষে।

তাসকিন গতকাল যখন শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন, তখন স্বাগতিকদের স্কোর ৩০৭/৭ উইকেট। হাতছানি ডাম্বুলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩২৪ রান টপকে ফেলার। প্রথম দুই বলে এক বাউন্ডারিসহ ৫ রান দিয়ে সেই আশা জাগিয়েও ফেলে সিরিজে ফিরতে মরিয়া থারাঙ্গা বাহিনী। কিন্তু ৫০ নম্বর ওভারের তৃতীয় বল থেকেই শুরু হয় তাসকিন ম্যাজিক। রান বাড়াতে মরিয়া গুনারতুড়িয়ে মারতে চাইলেন তাসকিনকে। কিন্তু মিড অফে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। পরের বলে সুরঙ্গা লাকমল পুল করেন। কিন্তু শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো মুস্তাফিজুর রহমানকে ফাঁকি দিতে পারেনি। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে আশা জাগিয়ে তুলেন হ্যাটট্রিকের। ওভারের পঞ্চম বলে মারলেন ইয়র্কার। সম্পূর্ণ পরাস্থ নুয়ান প্রদীপ বোল্ড। হ্যাটট্রিক! শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে যায় ৩১১ রানে। মাত্র ২৫ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন। তার হ্যাটট্রিকের ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু রেকর্ড বুকে তাসকিনের নামটি রয়ে যাবে আজীবন। গতকালের রেকর্ডময় ম্যাচটিতে তাসকিনের বোলিং স্পেল ৮.৫-০-৪৭-৪। তাসকিনের অভিষেক ভারতের বিপক্ষে ২০১৪ সালে। অভিষেক ম্যাচেই ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আলো ছড়িয়েছিলেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল, তাতে বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাসকিন। ২৫ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে স্পিড স্টারের উইকেট সংখ্যা ৪০টি। এখন পর্যন্ত যে পাঁচটি হ্যাটট্রিক করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা, তার তিনটিরই প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে এবং তিনটির ভেন্যুই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। ২০০৬ সালের ২ আগস্ট হারারেতে টাইগারদের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। রাজিবের স্পেল ছিল ১০-২-৫২-৫। রাজিব হ্যাটট্রিক করলেও ২ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ৩ ডিসেম্বর মিরপুরে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন বাঁ হাতি স্পিনার খান আব্দুর রাজ্জাক রাজ। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬ উইকেটে। রাজ্জাকের বোলিং স্পেল ছিল ৯.২-২-৩০-৫। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন পেসার রুবেল হোসেন। কার্টেল ওভারের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ডিএল মেথডে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারিয়েছিল ৪৩ রানে। ম্যাচসেরা রুবেলের বোলিং স্পেল ৫.৫-০-২৬-৬। যা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলিং। তাইজুল ইসলামের হ্যাটট্রিকটি এক কথায় অসাধারণ। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকটি করেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল।

সর্বশেষ খবর