শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাসী হাতুরাসিংহে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাসী হাতুরাসিংহে

অনুশীলনে নির্ভার মুশফিক সোহান ইমরুল

ডাম্বুলার রানগিরি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ায় হতাশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। ক্রিকেটারদের মতো হতাশায় ভুগছেন বাংলাদেশের লাখো-কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। প্রথম ওয়ানডে জেতার পর ডাম্বুলাতেই সিরিজ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন টাইগাররা। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি মাশরাফিদের সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দেয়। দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও সিরিজ জয়ের স্বপ্ন কিন্তু পূর্ণিমার আলোর মতো কিরণ ছড়িয়ে যাচ্ছে এখনো। এজন্য আগামীকাল কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে কাজের কাজটুকু সেরে নিতে জিততে হবে মাশরাফি, সাকিব, তামিমদের। জিতলেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জেতার অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব দেখাবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দেশের বাইরে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর তৃতীয় টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সিরিজ জেতার রেকর্ড গড়বেন টাইগাররা। সেই রেকর্ড গড়ার বিষয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী টাইগার কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে।

সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ড (এসএসসি) শ্রীলঙ্কার অন্যতম পুরনো ভেন্যু। ১৯৫২ সাল থেকে এখানে নিয়মিত ক্রিকেট হতো। এর আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বিমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানেই শ্রীলঙ্কা তার প্রথম ওয়ানডে জয় পায় ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ম্যাচটি জিতেছিল দ্বীপরাষ্ট্র। সেই অর্থে এসএসসি কিন্তু পয়মন্ত ভেন্যুই শ্রীলঙ্কার জন্য। তবে বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের না হলেও পয়মন্ত নয়। এখানেই দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৭৬ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবেছিল ২০০২ সালে। এখানে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১০টি ওয়ানডে খেলেছে। জয় সাকুল্যে একটি। সেটা আবার দুর্বল হংকংয়ের বিপক্ষে। হার বাকি ৯টিতে। ১০টি ম্যাচের চারটির প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। বাকি ছয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত (২), পাকিস্তান (১), অস্ট্রেলিয়া (১), হংকং (১) ও নিউজিল্যান্ড(১)। 

এসএসসিতে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে খেলে ১৯৯৭ সালে এশিয়া কাপে। ১০৩ রানে হেরেছিল টাইগাররা। এশিয়া কাপের ওই আসরের পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হার মানে ৯ উইকেটে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগাররা আরও তিনটি ম্যাচ খেলে এখানে। ২০০২ সালে ৪ ও ৫ আগস্টের পরপর দুই ম্যাচে টাইগাররা হেরেছিল যথাক্রমে ৫ ও ৮ উইকেটে। একই বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯ উইকেটে ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ১৬৭ রানে। ২০০৪ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে। হংকংয়ের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ১১৬ রানে। অবশ্য এশিয়া কাপের পরের দুই ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭৬ রানে ও ভারতের কাছে হেরে যায় ৮ উইকেটে। এই আনন্দ-বেদনার ভেন্যুতেই মাশরাফিবাহিনী আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলতে নামছে। যদি আজ জিতে যায় টাইগাররা, তাহলে সিরিজ জিতবে মাশরাফিবাহিনী। হেরে গেলে সমতা থাকবে সিরিজে। ২০১৩ সালে দুই দেশের সিরিজটি ১-১-এ সমতা ছিল।

যদি ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততো বাংলাদেশ, তাহলে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বরে উঠে আসতো। সিরিজ জিতলেও র‌্যাঙ্কিংয়ে কোনো উন্নতি হবে না টাইগারদের। ৭ নম্বরেই রয়ে যাবে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে শীর্ষ ৮ দল। তাই শীর্ষ আটে থাকতে মরিয়া দলগুলো। কিন্তু টাইগার কোচ হাতুরাসিংহে এখনই র‌্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তিনি ভাবছেন ম্যাচ বাই ম্যাচ, ‘র‌্যাঙ্কিং নিয়ে বাড়তি ভাবনায় মশগুল থাকার কোনো কারণ নেই। আমরা সিরিজ জেতার জন্যই খেলতে নামব। আমাদের ভাবনা জুড়ে এখন কলম্বোর ওয়ানডে।’ প্রথম ওয়ানডেতে ৩২৪ রান করে টাইগাররা ম্যাচ জিতেছিল ৯০ রানে। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। ৩১১ রান করে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি টাইগাররা। ব্যাটিং না করলেও বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন আহমেদ। পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে শততম টেস্ট জেতার পর ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডে জয়। সব মিলিয়ে ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন মাশরাফিরা। শীর্ষদের আত্মবিশ্বাস দেখে কোচেরও প্রত্যাশা ম্যাচ জেতার, ‘ম্যাচ জেতার বিষয়ে ক্রিকেটাররা অনেক আত্মবিশ্বাসী। এজন্য ঠিক পথে হাঁটতে হবে। সেরাটা খেলতে হবে।’

ডাম্বুলার প্রথম দুই ওয়ানডে হয়েছে ফ্লাড লাইটের আলোয়। সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে আগামীকাল শেষ ওয়ানডে হবে দিনের আলোয়।  

সর্বশেষ খবর