রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটিং ধসে স্বপ্ন ভঙ্গ

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিং ধসে স্বপ্ন ভঙ্গ

টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। দলও হেরেছে বড় ব্যবধানে। কিন্তু আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমেও ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মিরাজ —এএফপি

চট্টগ্রামে ইমার্জিং এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল ও শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-২৩। আবার কলম্বোতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল ও শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল। কালকের দিনটি হতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় একদিন! অবিস্মরণীয় একদিন! কিন্তু হয়ে গেল উল্টো। চট্টগ্রামের পর কলম্বোতেও বাজেভাবে হেরে গেল বাংলাদেশ। কালকের দিনটি যেন হয়ে গেল দেশের ক্রিকেটের ‘কালোদিন’!

ব্যাটিং ধসের কারণে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের তরুণরা লঙ্কানদের কাছে হেরে যায় ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। একই কারণে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ৭০ রানে হেরে গেলেন মাশরাফিরা। চট্টগ্রামের পরও কলম্বোতে ব্যাটিং ধসেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল বাংলাদেশের।

ম্যাচের ফল যাই হোক, টস জয়টা ইদানীং বাংলাদেশের জন্য এক দুর্লভ ঘটনা! শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের এক ম্যাচেও টস জিততে পারেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও টস হেরেছেন মাশরাফি। কিন্তু গতকাল সেই টস জিতেও কেন যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক। ব্যাটিং স্বর্গে প্রতিপক্ষকে প্রথমে ব্যাট করতে দিয়ে যেন ‘খাল কেটে কুমির আনেন’! প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৭৬ রান করে শ্রীলঙ্কা। শেষের ৫ ওভারেও লঙ্কানরা ওভারপ্রতি ১০ করে রান করেছে। যদিও মাঝের ৩৫ ওভারে আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের বোলারদের। কিন্তু শুরু আর শেষে দাপট দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৮০ রানের স্কোর পায় লঙ্কানরা। কিন্তু জয়ের জন্য এই স্কোর যথেষ্ট ছিল না! সকালে উইকেট দেখে লঙ্কান ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার রাসেল আরনল্ড বলেছিলেন, এমন উইকেটে জিততে হলে প্রথমে যারা ব্যাট করবে তাদেরকে অন্তত সাড়ে তিনশ রান করতে হবে! কিন্তু না, আরনল্ডের পূর্বাভাস সত্য হয়নি। বাংলাদেশকে মাত্র ২৮১ রানের টার্গেট দিয়েই বিশাল ব্যবধানে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। টাইগারদের হতাশ করে দিয়ে ১-১ সমতায় ওয়ানডে সিরিজ শেষ করলো লঙ্কানরা!

ক্রিকেট এমনই, কখনো কখনো এমন ঘটনা ঘটে যা আন্দাজ করা যায় না! তখন কোনো পূর্বাভাসই সঠিক হয় না। কিন্তু প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে আসলে তো কথাই নেই! বাংলাদেশের ইনিংসের কথাই চিন্তা করুণ। যেখানে নবম উইকেটে আসে হাফ সেঞ্চুরি জুটি সেখানে গোটা ইনিংস মিলে অর্ধশতক জুটি গড়ে উঠেছিল আর মাত্র একটি। কলম্বোর উইকেটে যে কোনো জু জু ছিল না তা মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে।

স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো ব্যর্থ। একমাত্র সৌম্য সরকার ছাড়া বাকি পাঁচ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান— তামিম ইকবাল (৪), সাব্বির রহমান (০), মুশফিকুর রহিম (০), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭) ও মোসাদ্দেক হোসেনের (৯) কেউ-ই দুই অঙ্কের কোটাও ছুঁতে পারেননি। তাদের ৫ জনের রানের যোগফল মাত্র ২০! সৌম্য সরকার ৩৮ রানের ইনিংস খেললেও তার আউট হওয়ার দৃশ্যটি ছিল খুবই হাস্যকর। দিলরুয়ান পেরেরার বল এগিয়ে গিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং! দলে শুধুমাত্র ব্যাটিংই যাদের কাজ তারাই যদি কিছু না করতে পারেন তাহলে কি আর জয়ের আশা করা যায়! তারপরেও কাল বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২১০ রানের যে সম্মানজনক স্কোর করেছে তা দুই অলরাউন্ডার ও বোলারদের কল্যাণে!

সর্বোচ্চ ৫৪ রানের ইনিংস খেলেছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। চতুর্থ উইকেটে সৌম্যকে নিয়ে গড়েছিলেন ৭৭ রানের জুটি। সাকিব যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ জয়ের আশাও ছিল। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হয়ে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওয়ানডেতে এটি মিরাজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।

১২৭ রানের মাথায় বাংলাদেশের ৭ উইকেটের পতন ঘটেছিল। সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে লঙ্কানদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন মিরাজ। অষ্টম উইকেটে মাশরাফির সঙ্গে গড়েন ২৮ রানের জুটি। তারপর তাসকিনের সঙ্গে ৫৪ রানের আরেকটি দারুণ জুটি। এই জুটি দুটিই কিনা গতকাল বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি।

লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের লড়াই দেখে মনে হয়েছে, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা উইকেট উপহার দেওয়ার প্রতিযোগিতায় না নামলে সহজেই জিতে যেতে পারত বাংলাদেশ। সেটা হতো বিদেশের মাটিতে ওয়ানডেতে টাইগারদের সবচেয়ে বড় সিরিজ জয়! কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় স্বপ্ন ভঙ্গ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর