সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারুণ্যনির্ভর ঘরোয়া ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তারুণ্যনির্ভর ঘরোয়া ফুটবল

জাতীয় দলের লাগাতার ব্যর্থতায় এবার ঘরোয়া মৌসুমে তারকা ফুটবলারদের ডিমান্ড কমেছে ক্লাবগুলোর কাছে -ফাইলফটো

আসন্ন ফুটবল মৌসুমে দলবদল শুরু হয়ে গেছে। ৩১ এপ্রিল শেষ হবে এর কার্যক্রম। পেশাদার লিগের পাশাপাশি একই সঙ্গে চলছে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ঘর বদলের পালা। বড় দলগুলো দলবদল সম্পন্ন করবে আরও পরে। তবে পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে ঘর গুছিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। অধিকাংশ দলের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। দলবদলে ডিমান্ড থাকে তারকা ফুটবলারদের নিয়ে। এবার কিন্তু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারকার বদলে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তরুণদেরই। নবাগত সাইফ স্পোর্টিং ও চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়া পেশাদার লিগে অন্য দলগুলো তরুণ ফুটবলারদেরই প্রাধান্য দিয়েছে।

কথা হচ্ছে তারকা বা পরিচিত ফুটবলাররা এবার গুরুত্ব পাচ্ছেন না কেন? এদের ছাড়া সাফল্য পাওয়া কি সম্ভব ? কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনাও করেছেন। দেখেছেন লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও তারকা ফুটবলারদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া আবার অনেকেই ক্লাবের শৃঙ্খলা মানতে চান না। লিগ চলাকালে কোনো ফুটবলার ক্ষ্যাপ খেলছেন। তবে মূল প্রভাবটা পড়েছে জাতীয় দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে। কোনো টুর্নামেন্টেই জ্বলে উঠতে পারছে না। ভুটানের কাছে হেরে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানিতে নেমে গেছে। পরিচিত ফুটবলাদের ওপর তাই আস্থা রাখা যাচ্ছে না।

এক সময় তারকা ফুটবলার ছাড়া ট্রফি জেতাটা চিন্তাই করা যেত না। এখন অবস্থা পুরোপুরি ভিন্ন। তারকা বললেও মাঠে এখন সেই গুণটা কারও ভিতর খুঁজে পাওয়া যায় না। গেল মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ও চট্টগ্রাম আবাহনী বিগ বাজেটে তারকানির্ভর দল করেছিল কিন্তু লিগ জিততে পারেনি। বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা আবাহনী। তারকাদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। অন্যদিকে লিগে চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ না হলেও আরামবাগ, রহমতগঞ্জ, ব্রাদার্স, মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তর বারিধারার তরুণ ফুটবলারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় বড় দলের পয়েন্ট তারা কেড়ে নিয়েছে। গত মৌসুমে আটে থাকলেও আগের মৌসুমে একেবারে অপরিচিত তরুণদের নিয়ে ঢাকা মোহামেডান তৃতীয় স্থান দখল করে।

শেখ রাসেল, লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি, ঢাকা মোহামেডান ও চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী পরিচিত ফুটবলারদের পাশ কাটিয়ে  তরুণদেরই প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে সঙ্গে রাখা হচ্ছে অভিজ্ঞ ফুটবলারদেরও। এবারে লিগে দুইজন বিদেশি খেলতে পারবে। সেক্ষেত্রে সব দলই বেকায়দায় পড়ে গেছে। এখন তারা পজিশন বিচার করে দল সাজাচ্ছে। প্রতিটি দলই বলছে এবার তারা দর্শকদের ভালো খেলা উপহার দিতে চায়। অভিজ্ঞ, তরুণ ও ভালোমানের দুজন বিদেশি ফুটবলার নামাতে পারলে অবশ্যই জ্বলে ওঠা সম্ভব।

ফুটবলে জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন শীর্ষস্থানীয় দলগুলো তারকা ছাড়া কিছুই ভাবতো না। বিশেষ করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান-আবাহনী বিগ বাজেটে দল গড়তো। এই সময়ে তারকার বদলে তরুণ নিয়ে দল গড়েও শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে। ১৯৮০ সালেরই কথা ধরা যাক।  সেবার মোহামেডানে রামা লুসাই, বাদল রায় ও ডিফেন্ডার বাদল ছাড়া কোনো পরিচিত মুখ ছিল না। সালাম মুর্শেদী, গাফফার বা মোসাব্বের তারকারখ্যাতি পেয়েছিল ঠিকই তখনতো নাম-ডাক ছিল না। অথচ তরুণদের ওপর নির্ভর হয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান।

১৯৯৪ সালে মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয় কাদের দিয়ে।  সেবার তো মুক্তিযোদ্ধা ঘর  ভেঙে তছনছ করে দেয় আবাহনীকে। অনেকের ধারণা ছিল জনপ্রিয় দলটি মাঠে দাঁড়াতেই পারবে না। অথচ তরুণদের নিয়ে ঠিকই বিজয় নিশানা উড়িয়েছিল।

সুতরাং তরুণদের ওপর ভরসা পাওয়ার উদাহরণ একেবারে কম নয়। ব্রাদার্স ইউনিয়ন তো ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তরুণদেরই মাধ্যমে।

বড় বড় দলগুলো তারকানির্ভর হওয়ার সাবেক ফুটবলাররা খুশি। ছাইদ হাসান কানন বলেন, এতে করে নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলবে। শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘তরুণদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। দুইজন করে বিদেশি খেলায় লোকালরা এবার আর সাইড লাইনে বসে থাকবে না। ১২টি দল খেলবে, নিশ্চয় কিছু ফুটবলার তো বের হয়ে আসবে। যাদের দিয়ে উপকৃত হবে দেশ।’

সর্বশেষ খবর