বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে খুদে সংস্করণে বড় তারকার বিদায়

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রিকেটে খুদে সংস্করণে বড় তারকার বিদায়

মাশরাফি যেন এক পরশ পাথরের নাম। যার স্পর্শে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। মাশরাফির কৃতিত্বে যারা দ্বিমত পোষণ করেন, তাদের উদ্দেশে বলি, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের করুণ অবস্থার কথা মনে পড়ে! হারতে হারতে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। কিন্তু মাশরাফিকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়ার পরই যেন দলটা বদলে যায়। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। তারপর ঘরের মাঠে টানা পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন! কয়েক মাস আগেই যে দলটি হারের বৃত্তে আটকে গিয়েছিল সেই দলটিই মাশরাফির নেতৃত্বে সাফল্যের জোয়ারে ভাসতে থাকে।

মাশরাফি এক প্রতিবাদী ক্রিকেটারের নাম। নড়াইল এক্সপ্রেস কাউকে ভয় পান না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফিক্সিং কাণ্ডের কথা স্মরণ করে দেখুন! ওই সময়ের দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স কিন্তু ফিক্সিং করার প্রথম প্রস্তাবটা অধিনায়ক মাশরাফিকে দিয়েছিল। ছিল কোটি টাকার অফার। কিন্তু ম্যাশ সেই প্রস্তাব জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারপর সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু মাশরাফির কাছে পাত্তা পায়নি ফিক্সাররা।

এটা ঠিক যে, মাশরাফি টি-২০-তে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না। অবসর নেওয়ার একটা গুঞ্জনও ছিল। তাই বলে দেশের বাইরে কেন হঠাৎ করে টসের আগে জানিয়ে দেবেন অবসরের সিদ্ধান্ত! নিশ্চয়ই এর পেছনে কারণ আছে। আছে কোনো রহস্য! নিশ্চয়ই কলম্বোতে দল গঠন নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে! শ্রীলঙ্কায় নিয়ে গিয়েও পেসার রুবেলকে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না দিয়েই দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এটা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন মাশরাফি। শততম টেস্টে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে নেওয়া হয়নি। কোচ হাতুরাসিংহে ও বোর্ড কর্তারা নাকি টি-২০-তে মাহমুদুল্লাহকেও নিতে চাননি! অন্তরালে হয় তো আরও কাহিনী রয়েছে, যে কারণেই হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন মাশরাফি।

মাশরাফির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার সতীর্থরাও আগে থেকে কিছু জানতেন না। ম্যাচের আগে খবরটি শোনার পর তারাও ভেঙে পড়েছিলেন। হঠাৎ এমন এক যোদ্ধা ক্রিকেটারের বিদায় কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না। ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল তার ফেসবুক ফ্যান পেজে লিখেছেন, ‘আমাদের অধিনায়ক মাশরাফি ভাইকে নিয়ে যাই বলি, তাই কম হবে। তার হয় তো বলার মতো কোনো বিশ্বরেকর্ড নেই, নেই ৪০০ বা ৫০০ উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তার কারণেই ড্রেসিং রুমকে পরিবারের মতো মনে হয়। আমার কাছে মাশরাফি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। আপনাকে খুবই মিস করব ক্যাপ্টেন!’

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ট্যাটাসটি আবেগে ঠাসা। লিখেছেন, ‘মাশরাফি ভাই, প্রথমে টি-২০ ক্যারিয়ারে আপনার অবদানের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমরা আপনাকে খুবই মিস করব, বিশেষ করে আমি। আপনি আমার ভাই, আমার এমন এক বন্ধু যার কাছে সবকিছুই শেয়ার করতে পারি। আপনি একজন যোদ্ধা, গ্রেট লিডার, ক্যাপ্টেন এবং সত্যিকারের এক চ্যাম্পিয়ন।

আপনার অবসর ঘোষণায় খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমাদের দল তথা ক্রিকেট পরিবার ভীষণভাবে আহত। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। ম্যাশ আপনাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। সম্মান করি। আপনি কিংবদন্তি।’

ফেসবুকে তাসকিনের অভিব্যক্তি, ‘জানি না আর কত দিন এই হাতটা খেলার মাঠে আমার কাঁধে পাব। জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার আগে থেকেই আপনি আমার আইডল। আর গত তিন বছর ধরে একজন অভিভাবকের থেকেও অনেক বেশি কিছু। সব সমস্যার সমাধক হিসেবেও বার বার আপনাকেই জ্বালাব ১০০% সিওর ...ভাইয়া জীবনে যাদেরকে অফুরন্ত ভালোবাসি এবং যাদেরকে মানি তার মধ্যে আপনি অন্যতম ...অনেক কিছু নেওয়ার বাকি আছে আপনার কাছে থেকে.. শেখার আশার অপেক্ষায় থাকলাম।’

মাশরাফির বিদায়ের ঘোষণায় শোকাভিভূত ক্রিকেটপ্রেমীরা। এমন এক ক্রিকেট যোদ্ধার এভাবে বিদায় কেউ মেনে নিতে পারছেন না। ক্রিকেট যোদ্ধা মাশরাফিকে সম্মানজনকভাবে বিদায় জানানো হোক। বীরের বিদায় বীরের মতোই হওয়া উচিত!

সর্বশেষ খবর