শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া অধিনায়ক মাশরাফি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া অধিনায়ক মাশরাফি

ক্যারিয়ারের শেষ টি-২০ ম্যাচে উইকেট পাওয়ার পর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অভিনন্দন ইমরুলের —এএফপি

খালেদ মাহমুদ সুজন কি মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বলেছেন, ‘তুই খুবই ভাগ্যবান, অধিনায়ক হিসেবে মাঠ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিস!’ পরশু রাতে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির সন্মানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দেওয়া নৈশভোজে সাবেক অধিনায়ক ও অধুনা টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ এমনটা বলতেই পারেন। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু থেকে শুরু করে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান, প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশারসহ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ অধিনায়কদের কেউ অধিনায়ক থাকাকালীন অবসরের ঘোষণা দিতে পারেননি। মাশরাফিই একমাত্র ভাগ্যবান অধিনায়ক যিনি মাঠ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। টেস্ট খেলছেন না ২০০৯ থেকে। টি-২০কেও বিদায়। তবে ওয়ানডে খেলবেন। তার নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে বাংলাদেশ কোনো সন্দেহ নেই। গতকাল টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেন মাশরাফি। ব্যাটিংয়ে শূন্য করেছেন। স্যার ব্রাডম্যানও টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে শূন্য করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে সাফল্য না পেলেও বোলিংয়ে উইকেট নেন একটি। জয় দিয়েই টি-২০ ক্রিকেটে ইতি টানলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আইকন’।    

ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েও মাঠ থেকে বিদায় বলতে পারেননি তিনি। মাঠ থেকে বিদায় বলতে পারেননি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে (১৯৯৯) বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘কারিগর’ আকরাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন সংবাদ সন্মেলন করে। দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়কে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে হয় হঠাৎ। দুর্জয় এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন পরিচালকও তিনি। দেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলামও সুযোগ পাননি অবসরের ঘোষণা দিতে। তিনি এখন প্রবাসী। পরিবার পরিজন নিয়ে থাকছেন মেলবোর্নে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন আড়ালে। অবশ্য পরবর্তীতে পাইলটকে কোনো একটি সিরিজ চলাকালীন ক্রেস্ট দিয়ে সন্মাননা জানিয়ে অবসরের কথা বলার সুযোগ দিয়েছিল বিসিবি। একই উপায়ে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সফল ক্রিকেটার হাবিবুল বাশারকে সন্মাননা দিয়েছিল বিসিবি। মোহাম্মদ আশরাফুলকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক হিসেবে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি।

লিপু, নান্নু, আকরাম, বুলবুল, দুর্জয়, পাইলটরা মাঠ থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিতে পারেননি। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ২০০৬ সালে বগুড়ায় মাঠ থেকে তাকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তৎকালীন বোর্ড কর্মকর্তারা। ওই ম্যাচে খালেদ মাহমুদ খেলেছিলেন একজন সাধারণ সদস্য হয়ে। তারপরও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারের মধ্যে খালেদ মাহমুদই প্রথম মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন। একজন অধিনায়ক ও ক্রিকেটারের মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারাকে সন্মানের মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার, ‘মাঠ থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেওয়া কিংবা মাঠ থেকে ক্যারিয়ারকে বিদায় বলতে পারা অনেক সন্মানের। এটা সবার ভাগ্যে হয় না। আমি বলবো মাশরাফি সে অর্থে ভাগ্যবান। অবশ্য তিনি টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। এখনো ওয়ানডে খেলবেন।’

মাশরাফির অবসরের গুঞ্জন বেশ অনেকদিন ধরেই ভেসে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু মাশরাফি তাতে কখনোই কান দেননি। বরং উড়িয়ে দিয়েছেন। সবসময়ই বলেছেন, ‘যতদিন ফিট থাকবেন, ততদিনই খেলবেন।’ অথচ প্রথম টি-২০ ম্যাচের দিন ফেসবুকে হঠাৎ করে টি-২০ ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে স্ট্যাটাস লিখেন। ম্যাচ শুরুর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন টি-২০ ক্রিকেট ছাড়ার। সে অর্থে গতকালই খেলে ফেলেছেন শেষ টি-২০ ম্যাচ। ফল যাই হউক না কেন, এখন পর্যন্ত টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি আজীবন টিকে থাকবেন। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, মেধা, প্রাজ্ঞতা, বন্ধুত্বের জন্য। তিনি ছিলেন একাধারে ক্রিকেটার, যোদ্ধা, বন্ধু ও অভিভাবক। তাই তার অবসরের ঘোষণায় সতীর্থরা কেঁদেছেন। ভবিষ্যতে মাশরাফির চেয়ে অনেক সফল ক্রিকেটার ও অধিনায়ক আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আইকন’ একজনই; মাশরাফি। যিনি সাত সাতটি অস্ত্রোপচার নিয়ে খেলেছেন, খেলছেন। খেলা ছাড়ার পরও ছায়া হয়ে থাকবেন ক্রিকেটের সঙ্গে। 

সর্বশেষ খবর