শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘বুড়ো’ মিসবাহর অবসর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

‘বুড়ো’ মিসবাহর অবসর

বয়স তিরেশের কোটা পার হলেই অবসরের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেলেও তিনি দিব্যি খেলে যাচ্ছিলেন। দারুণ পারফর্ম করছিলেন। ফিটনেসও দারুণ তার। তবে অবশেষে থামতেই হলো। ৪৩ বছর বয়সে এসে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ‘বুড়ো’ মিসবাহ। পাক দলপতি গতকাল লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পরই ক্রিকেটকে গুডবাই বলে দেবেন। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজটি শুরু হবে ২১ এপ্রিল থেকে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মিসবাহ বলেন, ‘এটি আমার শেষ টেস্ট সিরিজ। অবসর নেওয়ার কথা আমি কিছুদিন আগে পিসিবির (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড) সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমার চেষ্টা থাকবে শেষটা যাতে ভালো করতে পারি।’

সিনিয়র ক্রিকেটারদের অবসর নিতে বাধ্য করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড অনেক সময় বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে থাকে। মিসবাহর বেলায়ও কি তেমন কিছু হয়েছে? পাক দলপতি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার ব্যাপারে আমার ওপর কোনো রকম চাপ ছিল না। আমার পরিকল্পনা ছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের পরই অবসর নেব। কিন্তু অন্য একটা কারণে আমি এখনো খেলে যাচ্ছি। সবকিছু মিলে ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এখন অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ আমাকে বাধ্য করছে। আমি আমার নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে দেখেছি অবসর নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। এই সিদ্ধান্তটা আমি নিজে থেকেই নিয়েছি। কোনো ক্রমেই কারও এটা ভাবার সুযোগ নেই যে, বোর্ডই আমাকে বলে দিয়েছে এটা আমার শেষ সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি এই সিরিজের পরই ক্রিকেটকে গুডবাই জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

পাকিস্তান টানা ছয় ম্যাচে হেরেছে। তার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবধান ছিল ৩-০ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে হেরেছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছিলেন মিসবাহ। রান করেছিলেন মাত্র ৪৪। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুই টেস্টেও সুবিধা করতে পারেননি। তিন ম্যাচে তার মোট রান ছিল মাত্র ৭৫। সব মিলে তিন টেস্টে তার গড় ছিল মাত্র ১২.৬৬। মিসবাহর অধীনে মেলবোর্ন টেস্টে পাকিস্তান ইনিংস ও ১৮ রানে হেরেছিল। ওই ম্যাচে দ্বিতীয় পাকিস্তানের ব্যাটিং ধস হয়েছিল। সে ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি মিসবাহ। তারপর ইংরেজি নববর্ষ টেস্টে সিডনিতে ২২০ রানের বিশাল ব্যবধানে অসিদের কাছে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তান। দলের এমন বাজে পারফরম্যান্সের পরই নিজের শেষটা দেখে ফেলেছিলেন মিসবাহ।

পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পরই। মিসবাহ ৭২ টেস্টে ৪৯৫১ রান করেছেন। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে সপ্তম সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। ২০১০ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় মিসবাহর। নেতৃত্ব পাওয়ার আগে পাকিস্তানের হয়ে মাত্র ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন। মিসবাহ ৫৩ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে পাকিস্তানকে ২৪টি জয় এনে দিয়েছেন। টেস্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়কত্বের মুকুট তার মাথায়। নেতৃত্ব পাওয়ার পর মিসবাহর ব্যাটিংয়েও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। রান করেছেন ৫০.৫৫ গড়ে। সব মিলে টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৪৫.৮৪। মিসবাহর অধিনায়কত্বেই প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল পাকিস্তান।

নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মিসবাহ বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে মানব জীবনের মতো। সব সময় প্রবাহ এক রকম থাকে না। এখানে ব্যর্থতা থাকবে, সাফল্য থাকবে— তবে সবকিছুর মধ্যেই শেখার অনেক কিছু আছে। গত ছয় বছরেও এমনভাবেই চলেছে। ব্যর্থতা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। সব সময় ভালো করার চেষ্টা থাকতে হবে। প্রতিটি ম্যাচেই আপনি জিতবেন এমন নয়। তবে পরাজয় থেকে অনেক বেশি কিছু শেখা যায়। সব মিলে আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর