রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাশরাফিকে ঘিরে যত আলোচনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাশরাফিকে ঘিরে যত আলোচনা

মাশরাফি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন টি-২০ আর খেলবেন না। কিন্তু তা মানতে পারছেন না ভক্তরা। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে মাশরাফির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাশরাফির টি-২০ ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে এখন ক্রিকেটাঙ্গন টালমাটাল! ম্যাশ-ভক্তরা প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। মানববন্ধন করছেন। মাশরাফিকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। আবার বোর্ড কর্তাদের কথায় বিষয়টিতে রহস্যময় করে তুলছে! যেখানে মাশরাফি নিজেই টি-২০ থেকে অবসর নেওয়ার কথা বলেছেন, সেখানে বিসিবি থেকে বলা হচ্ছে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ টি-২০ ছাড়েননি! সব কিছু মিলে কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে সময় কাটছে!

সামনেই যে পর পর দুই মাসে দুই দুটি ওয়ানডে সিরিজ আছে তা নিয়ে কি আদৌও কোনো পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের! ১২ মে শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ত্রি-দেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, আর ১ জুন থেকে শুরু হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। দুই টুর্নামেন্টেই কিন্তু বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন মাশরাফি। এই মুহূর্তে ম্যাশের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করা কি বোর্ডের জন্য শুভকর কিছু হবে?

কোনো ক্রিকেটার আজীবন খেলবেন এমন নয়। সেটা মাশরাফিও জানেন। তা ছাড়া টি-২০তে মাশরাফি খুব একটা সফলও নন। তাই তিনি টি-২০ থেকে অবসর নিতেই পারেন। কিন্তু তাকে সম্মানজনকভাবে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা ছিল বিসিবির দায়িত্ব! কিন্তু বিসিবি যে সে দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ! তা না হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কেন?

এরপর বাংলাদেশের টি-২০ খেলার সম্ভাবনা রয়েছে জুলাই মাসে (যদি পাকিস্তান বাংলাদেশ সফর করে)। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ ত্রি-দেশীয় সিরিজ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এমন সময় কেন টি-২০ নিয়ে এমন হার্ডলাইনে যেতে হবে বোর্ডকে? কেন এখনই টি-২০র নেতৃত্ব থেকে মাশরাফিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে? যদি টি-২০তে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হয় সেটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের আগেই তো নেওয়া যেত!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন বইছে সুবাতাস! শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন সিরিজেই ১-১ সমতায় শেষ হওয়ায় টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটাও কয়েক ধাপ বেড়ে গিয়েছিল। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে খেলতে পারলে দুই টুর্নামেন্টেই আসবে বড় সাফল্য!  কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মাশরাফিকে নিয়ে যে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এতে ক্রিকেটাররা কি স্বস্তিবোধ করছেন? এমন ঘোলাটে পরিস্থিতি আরও কত দিন থাকবে? ইউরোপ সফরের আগে এমন পরিস্থিতি কি গোটা দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না! বোর্ডের কি উচিৎ নয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মাশরাফির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা! এতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই  বড় লাভ হবে!

ত্রি-দেশীয় সিরিজ শুরু হতে আরও মাস খানেক বাকি। তবে এই সিরিজে ভালো করতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের জন্য সুখবর হচ্ছে, এই ত্রি-দেশীয় সিরিজে মাশরাফিরাই ফেবারিট। কেননা আয়ারল্যান্ডের চেয়ে এমনিতেই সব দিক থেকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। আর আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তির কারণে নিউজিল্যান্ডের সেরা ১০ ক্রিকেটার খেলতে পারবেন না। নতুন ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া নিউজিল্যান্ড দল খেলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।

কিউইদের অধিনায়কও নতুন। আয়ারল্যান্ডে যাবে টম লাথামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড। দলে বড় তারকা বলতে একমাত্র রস টেলর। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন খেলছেন না। নেই মার্টিন গাপটিল, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কোরি অ্যান্ডারসনের মতো তারকা ক্রিকেটার। এছাড়া অ্যাডাম মিলনি, মিচেল ম্যাকক্লাঘন, লুক ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি ও কলিন ডি গ্রান্দোম আইপিএলের কারণে খেলতে পারছেন না।

ত্রি-দেশীয় সিরিজে প্রথম ম্যাচ ১২ মে। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। ১৭ মে দ্বিতীয় ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আইরিশদের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে ১৯ মে এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ ২৪ মে। এরপর আয়ারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ চলে যাবে ইংল্যান্ডে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ত্রি-দেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা ভালোই হবে। তবে এটাও ঠিক যে, ত্রি-দেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে টাইগারদের আত্মবিশ্বাসেও একটা ধাক্কা লাগবে। কেননা চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে বাংলাদেশকে আরও কঠিন পরীক্ষার পড়তে হবে। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তাই এখন মাশরাফি ইস্যুতে যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ততই মঙ্গল!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর