বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রীড়াঙ্গনে নতুনত্ব আসবে কী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়াঙ্গনে নতুনত্ব আসবে কী

শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেছে একি নির্বাচন না সিলেকশন ছিল। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এই প্রশ্ন। আসলে বিতর্কটা তৈরি করেছেন দুই সহ-সভাপতি প্রার্থী। একজন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান। আরেকজন অবশ্য নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের আগের দিন দুই জনই দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, প্যানেলের বাইরে কেউ নির্বাচিত হতে পারবেন না। তারা সৈয়দ শাহেদ রেজার প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত। আসলে বিওএর নির্বাচনে প্যানেলের বাইরে পাঁচ জন প্রার্থী ছিলেন। আগের রাতে দুই জন আবার ঘোষণা দেন তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত প্যানেলের বাইরে থেকে একজন সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ, আরেক নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিন জনই হেরে গেছেন। তারা হারবেন এ ব্যাপারে কারও সংশয় ছিল না।

হেরে যাওয়ার পর তিন প্রার্থী সেভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। তা ব্যতিক্রমই বলা যায়। কারণ বাংলাদেশের কালচারে নির্বাচনে হারলে নানা রকম অভিযোগ তোলা হয়। সে পথ তারা অনুসরণ করেননি। কিন্তু কেউ যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান পরবর্তীতে কারও পক্ষে প্রচার অভিযানে অংশ নিতে পারেন কিনা!’ সভাপতি, মহাসচিব ছাড়াও আরেক জন সহ-সভাপতি ও যুগ্ম মহাসচিব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তারাতো পুরোপুরি নীরব ছিলেন। হয়তো টেলিফোনে কারও কাছে ভোট চাইতে পারেন। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রচার অভিযানে অংশ নেননি। তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তা কি নির্বাচনী লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।

নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোয়িশনের চার্টারে কি আছে তা জানা নেই। তবে বিওএর গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলে নির্বাচন ঘিরে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। অবশ্য পরবর্তীতে গঠনতন্ত্রে তা পরিবর্তন হয়েছে কি না তা জানা নেই।

বিওএর নির্বাচনে এবার আরেকটি বিষয় সবাইর চোখে পড়েছে। অ্যাডহক কমিটি বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেশনের কেউ কেউ এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং জয়ীও হয়েছেন। অলিম্পিক চার্টার অনুযায়ী তো শুধুমাত্র নির্বাচিত ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা। এ ব্যাপারে সহ-সভাপতি পদে সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী বাদল রায় বলেন, ‘অতীতেও এমন হয়েছে। তবে নিয়মটি আমার পরিষ্কার জানা নেই। তা ছাড়া এ নিয়ে এখন প্রশ্নই বা উঠবে কেন? নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন, তিনি তো সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। বিতর্ক থাকলে অবশ্যই মনোনয়ন বাতিল হয়ে যেত। সুতরাং বিওএর নির্বাচন পুরোপুরি আইন মেনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাক ক্রীড়াঙ্গনে এমন কোনো ফেডারেশন নেই যে নির্বাচনে বিতর্ক মুক্ত। সেক্ষেত্রে বিওএ ঘিরে প্রশ্ন উঠাটা অস্বাভাবিকের কিছু নয়। এখন নতুন কমিটি কি করতে পারবে সেটাই প্রশ্ন। মহাসচিব শাহেদ রেজা দৃঢ়ভাবে বলেছেন সমস্যা থাকতেই পারে। কথা দিচ্ছি এসবের সমাধানও বের করা যাবে। শাহেদ রেজার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু জাফর ইমামের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিওএর মহাসচিব থাকা অবস্থায় অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তিনি পারেননি বললে ভুল হবে। আশপাশের চাটুকারদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অপ্রিয় হলেও সত্যি যে শাহেদ রেজার আশপাশে সেই চরিত্রের লোকের সংখ্যা একেবারে কম নয়।

অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, মাহবুব আরা গিনি, আবদুস সাদেক, বাদল রায়, শওকত আলী খান, জাহাঙ্গীর, নুরুল ফজল বুলবুল, আসাদুজ্জামান কোহিনুরের মতো অভিজ্ঞ সংগঠকরা বিওএর নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। এরা পরীক্ষিত সংগঠক। এদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারলে বিওএতে অবশ্যই নতুনত্ব আনতে পারবে।

সামনে এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস ও এস এ গেমস। এক্ষেত্রে বিওএকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশিক্ষণ বা সুযোগ সুবিধা নিয়ে ক্রীড়াবিদদের অভিযোগের শেষ নেই। বিওএ অর্থ সমস্যার কথা বলে। কিন্তু কোন খেলা ভালো করার সম্ভাবনা বেশি তা গুরুত্ব দিলেই তো ফ্যান্ড নিয়ে এত সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নতুন কমিটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে আগামী বছর ঢাকায় এস এ গেমস হওয়ার কথা। কমিটি বড়, কিন্তু এখানে বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে মহাসচিবকেই। অন্য সদস্যরা কি করছেন তা গুরুত্ব পায় না। খারাপ কিছু ঘটলে দায়ভার এসে পড়ে মহাসচিবের কাঁধে। শাহেদ রেজা ক্রীড়াঙ্গনের পোড় খাওয়া মানুষ। চার বছর দায়িত্ব পালনে কম শিক্ষা হয়নি তার। আগে যাই ঘটুক নতুন কমিটি ক্রীড়াঙ্গনে নতুনত্বের উদাহরণ তৈরি করবে এই প্রত্যাশা সবারই।

সর্বশেষ খবর