বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেসি-রোনালদোর ম্যাচ দেখে কী শিখছেন মামুনুলরা

ফুটবলে দুর্দশা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মেসি-রোনালদোর ম্যাচ দেখে কী শিখছেন মামুনুলরা

জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে কেউ সুবিধা করতে পারছে না। জয় যেন বাংলাদেশের কাছে স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না ফুটবলাররা। বাংলাদেশের মান কখনো গর্ব করার মতো ছিল না। কিন্তু এখনকার মতো খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি। এক সময় যে মালদ্বীপ বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সামনে দাঁড়াতেই পারত না, তারাও এগিয়ে গেছে। মালদ্বীপের কাছে জাতীয় দলের হারটা এখন নতুন কিছু নয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নেপাল তো অনেক আগে থেকেই জয় পাচ্ছে। ১৯৮৪ সালে প্রথম সাফ গেমসেই ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে নেপাল সোনা জিতেছিল। তবে পাকিস্তান আমলে আগাখান গোল্ড কাপে নেপাল ঢাকার ক্লাবগুলোর সামনে দাঁড়াতেই পারত না।

মালদ্বীপ বা নেপালের কাছে হারটা এখন স্বাভাবিক ঘটনাই বলা যায়। কিন্তু যে ভুটান কোনোভাবে ফুটবলে লাথি মারতে পারত, তাদের কাছে বাংলাদেশ হারবে  তা কি কেউ কল্পনা করেছিল? সেই কল্পনাও এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এশিয়া কাপ প্রাক-বাছাইপর্বে গত বছর ঘরের মাঠে ড্র আর থিম্পুতে ভুটান যেন বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। ১৯৮০ সালে ঢাকা লিগে মোহামেডানে খেলতে এসেছিলেন ভুটানের ওই সময়ের সেরা ফুটবলার খড়ংগ বাসনাত। একটা কি দুটো ম্যাচ খেলেছিলেন। তাও পুরো সময় ধরে নয়, পারফরম্যান্স পছন্দ না হওয়ায় কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু অল্পক্ষণ খেলিয়ে তাকে তুলে নেন। এরপরও বাসনাত বলেছিলেন, তার ফুটবল ক্যারিয়ারে আর কিছু পাওয়ার নেই। মোহামেডানের মতো ক্লাবে খেলতে নেমে তার জীবনটা ধন্য। শুধু কি তাই, দেশের ফেরার পর ঢাকা লিগে খেলার জন্য তৎকালীন ভুটানের রাজা বাসনাতকে সংবর্ধনাও জানান। একবার চিন্তা করুন, ভুটান ফুটবলে বাংলাদেশকে কোন দৃষ্টিতে দেখতো।

সেই ভুটান এখন বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে গেছে। এই ভুটানের কাছে হারার পরই বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন কিরণ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, সাংবাদিকদের অতিরঞ্জিত লেখা ফুটবলের ক্ষতি করছে। লিখলে ক্ষতি, তাহলে কি ভুটানের হারটা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল? এই হারে দীর্ঘদিন ফিফা স্বীকৃত টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশকে বাইরে থাকতে হবে। ডিসেম্বরে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এত লম্বা বিরতির পর দেশের মাটিতেও ফুটবলাররা সুবিধা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাফুফে অবশ্য বেশ কটি প্রীতিম্যাচ খেলার চিন্তা-ভাবনা করছে। শুধু কি প্রীতিম্যাচ দিয়ে ঝালাই করা যাবে? জাতীয় দল ব্যর্থ, ক্লাবগুলোও একই চেহারা। পেশাদার লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। ফেডারেশন কাপও জিতেছিল। বাংলাদেশের সেরা দল হিসেবেই এএফসি কাপে অংশ নিচ্ছে তারা। কিন্তু পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। টানা তিন ম্যাচে হেরেই পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার আশা শেষ করে দিয়েছে। দ্বিতীয় লেগেও পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আশির দশকে এশিয়ান ক্লাব কাপে মোহামেডান যে দাপট দেখিয়েছিল তাতে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে অনেকে আশাবাদী হয়ে ওঠেন। ভাবা যায়, সেই সময় ইরান, উত্তর কোরিয়া ও কাতারের চ্যাম্পিয়ন দলকে রুখে দিয়েছিল মোহামেডান। অন্যদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর বাংলাদেশের ফুটবল যে লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে।

না আছে মান, না আছে দর্শক। এমন করুণ পরিণতির জন্য কর্মকর্তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যান। বলেন ৭০ ও ৮০ দশকের সঙ্গে এখন তুলনা করাটা কি ঠিক হবে। ওই সময় বিখ্যাত ফুটবলারদের খেলা টিভিতে কি সরাসরি দেখা যেত। আপনারাই বলুন, মেসি, রোনালদো, নেইমার, সুয়ারেজদের প্রতিদিন ম্যাজিক দেখার পর কি গ্যালারিতে কষ্ট করে এসে খেলার আগ্রহ থাকে? দর্শকশূন্যতা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মেনে নিতে হবে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, ওই সময় দেশ-বিদেশের এত চ্যানেলও ছিল না। রবিবার সকালে শুধু বিটিভিতে ইংলিশ লিগের হাইলাইটস দেখাত। সেই খেলা দেখে তখনকার অনেক ফুটবলারই মাঠে সেভাবে জ্বলে উঠতেন।

এখনকার ফুটবলাররা কি শুধু মেসি, রোনালদোদের খেলা দেখেন, তাদের কাছে কি শেখার কিছুই নেই। সত্যিই তারা ভাগ্যবান প্রতিদিনই বিশ্ব তারকাদের খেলা দেখছেন। অনেক খেলোয়াড়কে দেখা যাচ্ছে মেসি, রোনালদো বা নেইমারদের চুলের স্টাইল অনুসরণ করতে। কিন্তু ফুটবলে ক্যারিশমা তো শিখছে না। ফুটবলের কোচের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু টিভি দেখেও অনেক কিছু শেখার আছে। মামুনুলরা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছে না কেন?

জাতীয় দলের সাবেক এক কোচ বললেন, এখানে আগ্রহ থাকতে হবে। তা এখনকার ফুটবলারদের ভিতরে নেই। যতই খারাপ খেলুক প্রতি মওসুমে তো ক্লাব থেকে লাখ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। সুতরাং মেসি বা রোনালদো কি করছেন তাতে তাদের কি আসে যায়।

সর্বশেষ খবর