রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক

বেতন বেড়েছে ক্রিকেটারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক

টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, টি-২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান

নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশের ক্রিকেট। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের নিয়োগ দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন টি-২০ ক্রিকেটের নতুন অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসানের নাম ঘোষণা করেন। দ্বিতীয়বারের মতো টি-২০ ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিব স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজার। শ্রীলঙ্কার টি-২০ সিরিজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেসের অবসরেই সাকিব পুনর্নির্বাচিত হলেন। অবশ্য বেশ অনেকদিন ধরেই টি-২০ অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নাম ভেসে বেড়াচ্ছিল বাতাসে। নতুন যুগে পা রাখা বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং টি-২০ ক্রিকেটে সাকিব। গতকাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ক্রিকেটারদের বেতন, ম্যাচ ফি ও উইনিং বোনাসও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দুই অধিনায়কের যুগে পা রাখে বাংলাদেশ। সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মুশফিক নেতৃত্ব দেন এবং ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে মাশরাফি। এরপর থেকে সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত দুই অধিনায়কের ফরম্যাটেই হেঁটেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। টি-২০ সিরিজ শুরুর আগে হঠাৎ করে পাল্টে যায় চিত্র। প্রথম টি-২০ ম্যাচের আগে মাশরাফিসহ চার সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিসিবি সভাপতি। শোনা যায়, এরপরই টি-২০ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মাশরাফি। অনেক দিন ধরেই ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, টি-২০ ক্রিকেটে মাশরাফি, মুশফিক ও তামিম ইকবালকে চাচ্ছেন না কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। কোচ বিসিবি সভাপতিকেও জানিয়েছেন, টি-২০ ক্রিকেটে নতুন অধিনায়ক নিয়োগ দিতে। কোচের আগ্রহেই সরে দাঁড়াতে হয়েছে মাশরাফিকে। মাশরাফির সরে দাঁড়ানোর পর পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নাম উঠে আসে। গতকাল সভা শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে সাকিবকে অধিনায়ক নিয়োগের বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘সাকিব যেহেতু সহঅধিনায়ক ছিলেন। এমনিতেই তার নাম চলে এসেছে। তবে এটাও ঠিক আরও কয়েকজনের নাম ছিল। কিন্তু সব কিছু বিবেচনা করেই সাকিবকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওর পারফরম্যান্স কিন্তু এখন অসাধারণ।’ সাকিব এর আগে ২০০৯-১০ সালে টি-২০ অধিনায়ক ছিলেন। টি-২০ ছাড়াও টেস্ট ও ওয়ানডের অধিনায়কও ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারে ৫৯ টি-২০ ম্যাচে রান করেছেন ১২০৮ এবং উইকেট নিয়েছেন ৭০টি। এছাড়া ৪৯ টেস্টে তার রান ৩৪৭৯ ও উইকেট ১৭৬টি এবং ১৬৯ ওয়ানডেতে রান ৪৭৭৬ ও উইকেট ২২১টি। 

গতকাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ১৬ নম্বর বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাসিক বেতন বাড়ানো চুক্তিভুক্ত পাঁচ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের। বাড়ানো হয়েছে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-এর ম্যাচ ফি এবং উইনিং বোনাস। ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের আগের বেতন ছিল আড়াই লাখ টাকা। নতুন চুক্তি অনুযায়ী এখন মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা বেতন পাবেন ৪ লাখ টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগরির বেতন ছিল ২ লাখ টাকা। এখন বেড়ে সেটা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির বেতন দেড় লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ টাকা। ‘সি’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন নতুন চুক্তিতে দেড় লাখ টাকা। আগে ছিল ১ লাখ টাকা। ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে চুক্তিভুক্ত হন নুতন ক্রিকেটাররা। আগে বেতন ছিল ৭৫ হাজার টাকা। সেটা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ টাকা। পারিশ্রমিকের পাশাপাশি বেড়েছে ম্যাচ ফিও। টেস্টে ম্যাচ ছিল ২ লাখ টাকা। এক লাফে বেড়ে সেটা এখন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ওয়ানডের ১ লাখ টাকা ম্যাচ ফি এখন ২ লাখ টাকা। টি-২০ ম্যাচ ফি ৭৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের বিচারে। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়নি চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা। তবে ১৪ থেকে বেড়ে সেটা ১৬ হতে যাচ্ছে। আগের চুক্তিভুক্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন নাসির হোসেন, আরাফাত সানি ও আল-আমিন। তাদের জায়গায় আসছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও নুরুল হাসান সোহান। মাসিক বেতন ও ম্যাচ ফি বাড়ানোর সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে উইনিং বোনাসও। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিন দলকে হারালে আগে উইনিং বোনাস ছিল ৩ হাজার ডলার। এখন সেটা ৪ হাজার ডলার। ৪-৬ র‌্যাঙ্কিংয়ের দলকে হারালে উইনিং বোনাস ২ হাজার ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ডলার। ৭-৯ নম্বর দলকে হারালে উইনিং বোনাস দেড় হাজার ডলার থেকে বেড়ে হচ্ছে আড়াই হাজার ডলার। সাত থেকে নয় নম্বর দলকে হারালে দেড় হাজার থেকে বেড়ে আড়াই হাজার ডলার। ওয়ানডের শীর্ষ তিন দলকে হারালে উইনিং বোনাস বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দেড় হাজার থেকে  আড়াই হাজার ডলার। ৪-৬ নম্বর দলকে হারালে ১ হাজার ডলারের জায়গায় ক্রিকেটাররা এখন পাবেন ২ হাজার ডলার। ৭-৯ নম্বর দলকে হারালে উইনিং বোনাস ১ হাজার ডলার। টি-২০ ক্রিকেটেও বাড়ছে উইনিং বোনাস। টাইগাররা জিতলেই এখন থেকে পাবেন ১ হাজার ডলার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর