শিরোনাম
রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দলবদলে সেই উত্তেজনা কোথায়

দেয়াল টপকিয়ে ক্লাব পালানো

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দলবদলে সেই উত্তেজনা কোথায়

ফুটবলে দলবদল শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল। কিন্তু এতদিন ধরে খেলোয়াড়দের ঘর বদল চলছে তা কি বুঝা যাচ্ছে? এক সময়ে তিনদিনের দলবদল চলতো। সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল তখন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বড় দল বা বড় তারকা দলবদলের দিন স্টেডিয়াম পাড়ায় উত্তেজনা থাকত তুঙ্গে। দুই দলের কাড়াকাড়ির জন্য পুলিশ পাহারায় কমিশনে দলবদলের কাজ সম্পন্ন করা হতো। রাস্তায় খেলোয়াড় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। অনেক খেলোয়াড়কে ক্লাবে বন্দি রাখার ঘটনাও ঘটেছে। ১৯৭৯ সালে আবুল আজাদ থেকে মোহামেডানে যোগ দেন। সেই  মৌসুমে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও আবুলের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তারকার খ্যাতিও পেয়ে যান তিনি। ১৯৮০ সালে তাকে নেওয়ার আগ্রহ দেখায় আবাহনী ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। কিন্তু মোহামেডান আগেই সিদ্ধান্ত নেয় তাকে ছাড়বে না। কিন্তু নাছোড় বান্দা ব্রাদার্স। আবুলকে পাওয়ার জন্য তারা মোহামেডানে খালি চেক ও একটি চিঠি ফেলে আসে। আবুলকে লেখা এই চিঠিতে উল্লেখ ছিল, খালি চেকে তুমি তোমার ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে ব্যাংকে চলে যাও। না, আবুল সেই চিঠির সাড়া না দিয়ে মোহামেডানে থেকে যান এবং ১৯৮৯ সালে এই ক্লাব থেকেই অবসর নেন।

১৯৭৪ লিগে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। মোহামেডান সেবার সুপার লিগেই উঠতে পারেনি। নবম স্থানে ছিল। ১৯৭৫ সালে শক্তিশালী দল গঠন করে মোহামেডান।

অধিনায়ক গোলাম সারওয়ার টিপু ও শামসুল আলম মঞ্জু আবাহনী ছেড়ে মোহামেডানে যোগ দেন। বিশেষ করে মঞ্জুর দলবদল নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়।

মোহামেডানে যোগ দেওয়ার পর সমর্থকদের সেই কি উচ্ছ্বাস। ফুটবল ফেডারেশন থেকে কাঁধে তুলে মঞ্জুকে মোহামেডান ক্লাবে আনা হয়। ৭০ ও ৮০ দশকে দলবদলের উত্তেজনা ছিল অন্যরকম। এখনকার ক্রীড়ামোদীদের কাছে তা অবিশ্বাস্যই মনে হবে।

শেখ মো. আসলাম, খোরশেদ বাবুল ও ইমতিয়াজ সুলতান জনির দলবদল নিয়েও অনেক নাটক হয়। ওই সময় মোহামেডান-আবাহনীর খেলোয়াড়দের দল পরিবর্তন মানেই হৈ চৈ পড়ে যাওয়া।

১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে অভিষেক হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের। কিন্তু শিরোপা রেসে থাকার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে শক্তিশালী দল গড়া শুরু করে। মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্স ভেঙে চুরমান করে ফেলে মুক্তিযোদ্ধা। বিশেষ করে আবাহনীর সব তারকা ফুটবলারই সেবার মুক্তিযোদ্ধায় যোগ দেন। মোহামেডান বা আবাহনী তাদের খেলোয়াড় ছাড়তে চাচ্ছিল না। ক্লাবে বন্দি করে রেখেছিল। কিন্তু গভীর রাতে খেলোয়াড়রা প্রাচীর টপকিয়ে ক্লাব থেকে গুলশানে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে চলে যান। সব খেলোয়াড়কেই সেবার বিশেষ কমিশনে মুক্তিযোদ্ধা দলে টানে। মনু, সম্রাট হোসেন এমিলিকে নিয়ে উত্তেজনা কি কম ছিল? সাব্বির মোহামেডান ছাড়েনি, কিন্তু তাকে ঘিরেও কম উত্তেজনা হয়নি।

দলবদলে এসব ঘটনা এখন অবিশ্বাসই মনে হবে। পেশাদার লিগে এক মাস ধরে দলবদল চলছে, ফুটবলপ্রেমীদের এ নিয়ে কি কোনো আগ্রহ আছে। ক্লাবগুলো ঘর গুছিয়ে নিলেও এখনো দলবদলের কাজ সম্পন্ন করেনি।

শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র, শেখ জামাল ২৬ কিংবা ২৭ এপ্রিলের মধ্যে দলবদলের কাজ সম্পন্ন করবে। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান আগামীকাল দলবদল করবে। বাকি দলগুলোও মঙ্গলবার থেকে খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করতে বাফুফে ভবনে যাবে। ফুটবল মাঠে তো উত্তেজনা থাকতোই, দলবদলের উত্তেজনা সামাল দিতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসও ছুড়তে হয়েছিল। এখন সেসব ঘটনা গল্পই মনে হবে।

সর্বশেষ খবর