শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপে বিজিবি চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপে বিজিবি চ্যাম্পিয়ন

চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে নিয়ে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে উৎসবে মেতেছেন বিজিবির কাবাডি খেলোয়াড়রা। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে তারা নৌবাহিনীকে পরাজিত করেন —রোহেত রাজিব

এক টুর্নামেন্টই দেশের কাবাডির চেহারা বদলে গেছে! গতকাল বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপে শিরোপা জিতেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। উপভোগ্য ফাইনালে তারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ২৯-২৭ পয়েন্টে পরাজিত করে। জাতীয় খেলা, অথচ এর কোনো প্রাণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। জোড়াতালি দিয়ে ঘরোয়া আসর মাঠে নামানো হচ্ছিল। যার প্রভাব পড়েছে জাতীয় দলে। আশির দশকে শুরুতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা না এলেও রুপার পদক জুটছিল। এখন তো পুরুষ দলের পদক পাওয়াটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মে কাবাডি হাঁটছিল অনিশ্চয়তার পথে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষ্যই দেখা যাচ্ছিল না। চরম হতাশা নেমে আসে জাতীয় এ খেলায়। অথচ বিশ্বে কাবাডিতে শক্ত অবস্থানের থাকার কথা বাংলাদেশের। ইরান বা অন্যান্য দেশ পরে এসেও কাবাডিতে জ্বলে উঠছে। সত্যি বলতে কি জাতীয় খেলার পারফরম্যান্স নিয়ে যেন হাসি-তামাশা চলছিল।

একের পর এক দায়সারাভাবে টুর্নামেন্ট চলছিল। না ছিল আকর্ষণ, না প্রাণের ছোঁয়া। অথচ প্রতিবেশী ভারতের ঘরোয়া আসর বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। যাক অনেক দিন পর কাবাডি ঘিরে দর্শকদের মধ্যে উৎসব লক্ষ্য করা গেল। দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন হয় বসুন্ধরা প্রেজেন্টস স্বাধীনতা কাপ কাবাডি। ১০ দলের মধ্যে চূড়ান্তপর্বের লড়াই। পল্টন ময়দানের কোর্ট ছাড়িয়ে মিরপুর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে খেলা। যা কাবাডির নতুন চমকই বলা যায়। প্রতিটি ম্যাচেই উপচেপড়া দর্শক যা ফুটবলকেও হার মানিয়েছে। ফাইনালে শুধু গ্যালারি নয়, ইনডোর স্টেডিয়ামের বাইরেও হাজার হাজার দর্শকের দেখা মিলে। বাংলাদেশে কাবাডিতে যা নতুন ইতিহাসই বলা যায়। 

বসুন্ধরা স্পন্সরে এবারে স্বাধীনতা কাপ এতটা প্রাণবন্ত বা উৎসবে রূপ নেবে তা ভাবাই যায়নি। খেলোয়াড়রা অকপটে স্বীকার করেছেন এই টুর্নামেন্ট তাদের জাগিয়ে তুলেছে। কাবাডি ফেডারেশনের উচিত হবে এ ধারা ধরে রাখা। তাহলে জাতীয় খেলার প্রাণ ফিরে আসবে। ক্রীড়াঙ্গনে বসুন্ধরা অনেক খেলাতেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এবার প্রথমবার কাবাডির সঙ্গে জড়িয়ে ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। যা সামনে শক্তির টনিক হিসেবে কাজ করবে। সন্ধ্যায় শুরু হয়েছিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। কিন্তু দুপুর থেকেই ইনডোর স্টেডিয়াম আঙ্গিনায় ছিল উৎসবের আমেজ। কাবাডিতে বিজিবি পরীক্ষিত দল। কত শিরোপা যে জিতেছে হিসাব মেলানো মুশকিল। ফাইনালে নৌবাহিনীর বিপক্ষে পরিষ্কার ফেবারিট। তারপরও কে যে বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপ ট্রফি জিতবে এনিয়ে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনার শেষ ছিল না। কাবাডিকে ঘিরে এতটা উৎসব আর উত্তেজনা থাকবে তা কি ভাবা যায়? ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। কোর্টে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছিল না। প্রথমার্ধে ১৭-১২ পয়েন্টে বিজিবি এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় নৌবাহিনী। উত্তেজনায় কাঁপছিল গ্যালারি। শেষ পর্যন্ত রাকিব হোসেনের ক্যারিশমায় বিজিবি ২৯-২৭ পয়েন্টে ট্রফি জিতে ঘরে নিয়ে যায়। জয়ের পর বিজিবি খেলোয়াড়দের সেকি আনন্দ। রাকিবকে কাঁধে তুলে বিজিবি পতাকা হাতে নিয়ে পুরো কোর্ট প্রদক্ষিণ করে চ্যাম্পিয়নরা। অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন ২০ বছর ধরে খেলছি কিন্তু ক্যারিয়ারে এত জমজমাট কখনো দেখিনি। তাই বসুন্ধরা গ্রুপ ও কাবাডি ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। চ্যাম্পিয়ন দল ২ লাখ ও রানার্সআপ ১ লাখ ও সেমিফাইনলে ওঠা দুদলকে ৫০ হাজার টাকা পুরসৃ্কত করা হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাইদুল ইসলাম, স্পন্সর বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুব হায়দার খান (অব.), সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জন ফ্রিজেল, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত রি সং হিয়ন, কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ছাড়াও অন্য কর্মকর্তা ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক।

সর্বশেষ খবর