শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেখ রাসেলের দলবদলে সরগরম বাফুফে ভবন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শেখ রাসেলের দলবদলে সরগরম বাফুফে ভবন

দলবদলের পর ক্লাব পতাকা হাতে নিয়ে ক্যামেরাবন্দী হলেন শেখ রাসেলের ফুটবলাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সকাল থেকেই নীরব ছিল বাফুফে ভবন। কর্মচারী ছাড়া আর কারোর দেখা মিলছিল না। দুপুরের পর হঠাৎ সরগরম হয়ে উঠল দেশের ফুটবল হেড কোয়ার্টার। সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যান ছুটাছুটি করছেন। কি এমন ঘটতে যাচ্ছে যে সবার মধ্যে এত ব্যতিব্যস্ততা। কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝা গেল আসল ঘটনা। দেশের জনপ্রিয় ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ফুটবলাররা দলবদল করতে এসেছেন। প্রায় মাসব্যাপী এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। এতদিন লিগ কমিটির কর্মকর্তারা সঠিক সময় উপস্থিত থাকলেও অনেকটা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় পার করেছেন। কারণ কোনো আলোচিত ক্লাবই দলবদলের কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। গতকালই বড় দলের মধ্যে শেখ রাসেলের আগমন ঘটল। গত মৌসুমে দলটির দলবদল ছিল বেশ বর্ণাঢ্য। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ফুটবলাররা এসেছিলেন বাফুফে ভবনে। এবার সেই চেহারাটা দেখা যায়নি।

দীর্ঘ সময় বলে দলবদলে আগের সেই উত্তেজনাটা নেই। ক্লাবগুলোর কাছে তা আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন মৌসুমের জন্য পছন্দের খেলোয়াড়দের নিশ্চিত করে প্রায় প্রতিটি দলই আগেই ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। অধিকাংশ ক্লাব অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছে। শেখ রাসেল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজস্ব মাঠে গত মাসেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়ে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স যাচাই-বাছাই করে গতকাল রেজিস্ট্রেশনের কাজটিও সম্পন্ন করে ফেলল শেখ রাসেল। অভিজ্ঞ ও তরুণদের সংমিশ্রণে এবার দল গড়া হয়েছে। গতকাল অবশ্য শুধুমাত্র স্থানীয় ফুটবলাররা দলবদলে অংশ নেন। ৩০ এপ্রিল বিদেশি ফুটবলারদের রেজিস্ট্রেশন করবে বলে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক জানান।

এবার বিদেশিদের নিয়ে ক্লাবগুলো কিছুটা বিপাকে আছে। আগে পেশাদার লিগে পাঁচজন বিদেশির নাম রেজিস্ট্রেশন করা যেত। মাঠে নামতে পারতেন চারজন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবার তিনজন রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। একাদশে রাখা যাবে দুই বিদেশিকে। তাই প্রতিটি ক্লাবই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিদেশি ফুটবলারদের বাছাই করছে। ক্রীড়াঙ্গনে শেখ রাসেলের আগমন প্রায় দুই যুগ হতে চলেছে। ২০১২-২০১৩ মৌসুমে ফুটবলে ট্রিপল শিরোপা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাদের। টেবিল টেনিস লিগেও বেশ কবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনে শেখ রাসেল রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে যাই হোক, শেখ রাসেল পেশাদার লিগে পেশাদারিত্বের শর্ত মেনেই মাঠে নামছে। খেলোয়াড়দের কোনো অভিযোগ নেই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও চেয়ারম্যান ক্লাবকে সময় দিচ্ছেন এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গেও আলোচনা করছেন। তবু শক্তিশালী দল গড়ার পরও দুই বছর ধরে শেখ রাসেলে কোনো সাফল্য নেই। আগের বার দুর্ভাগ্যক্রমে শিরোপা জিততে পারেনি। গতবার সপ্তম স্থান দখল করলেও বেশ কটি ম্যাচে পক্ষপাতিত্ব রেফারিংয়ের শিকার হয়ে মূল্যবান পয়েন্ট হারায় শেখ রাসেল।

শেখ রাসেল মূলত তারকানির্ভর দল গড়ে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমী আনা হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে তরুণরা। বেশ কজন খেলোয়াড় এবার দল ছেড়ে চলে গেছেন। এ নিয়ে মোটেই বিচলিত নন অভিজ্ঞ কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। তিনি বলেন আমাদের দলে যেসব তরুণ যোগ দিয়েছেন তাদের অনুশীলনে আমি সন্তুষ্ট। এবারের মৌসুমে তারাই হবে ট্রাম্পকার্ড। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও আছেন, বিদেশি কালেকশনও বেটার। তাহলে কি শিরোপার লক্ষ্যেই মাঠে নামবে। মানিক বলেন, শেখ রাসেল শিরোপা ছাড়া কিছুই ভাবে না। চ্যাম্পিয়ন হব-ই এর নিশ্চয়তা দিতে পারি না। আশা রাখি সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটাতে পারব। আমাদের মূল প্রেরণা চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান স্যার। তিনি আমাদের নিবেদিত প্রাণ। সবই দিচ্ছেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে এবার তার হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া। ক্লাবের পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে দল গঠনে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। কি পারব তা কথায় নয় মাঠেই জবাব দিতে চাই।

এবার যারা খেলবেন

বিপ্লব ভট্টাচার্য, মোঃ জিয়াউর রহমান, মাকসুদুর রহমান, আতিকুর রহমান মিশু, মোনায়েম খান রাজু, শহিদুল আলম সাহেদ, রোমান হোসেন, ফজলে রাব্বি, সবুজ বিশ্বাস, আলমগীর কবির রানা, রাসেদুল আলম মনি, সোহেল রানা, বিশ্বজিত ঘোষ, খালেকুজ্জামান, মোঃ জুলফিকার, কায়সার আলী রাব্বি, মেহরাব হোসেন নয়ন, মোবারক হোসেন, রাসেল মিয়া, আমিনুর রহমান, অরূপ কুমার বৈদ্য, উত্তম কুমার বণিক ও ফরহাদুজ্জামান বাবু।

সর্বশেষ খবর