শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

টাইগারদের টার্গেট কি শিরোপা

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের টার্গেট কি শিরোপা

ইংল্যান্ডে পৌঁছার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বরণ করে নেয় ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) —সৌজন্য

বছর দুয়েক ফ্লাশব্যাকে চলে যান— ২০১৫ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ! কখনো কি মনে হয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে তরুণ একদল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে প্রতিকূল কন্ডিশনে দাপট দেখাবে! প্রচণ্ড রকমের আশাবাদী ক্রিকেটামোদীরও হয়তো মনে হয়েছিল টাইগাররা সর্বোচ্চ গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারাবে। সব ম্যাচে হারতে পারে এমন আশঙ্কাই ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে তো হারিয়েছেই, ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেটশক্তিকে অ্যাডিলেডে নাকাল করে দিয়ে পরাজিত করেছে। নিউজিল্যান্ডকে তাদের ঘরের মাঠে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ দলের সাফল্যের নেপথ্যে ছিল বিশ্বকাপ শুরুর আগে করা অনুশীলন ক্যাম্প।

এবার কয়েক মাস আগের কথা ভাবুন— নিউজিল্যান্ড সফর!

২০১৫ সালের অনুশীলন ক্যাম্পের সফলতার কথা মাথায় রেখে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দুই সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু এবার ফল শূন্য (আপাতদৃৃষ্টিতে)। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০— তিন সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ টাইগাররা। তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের ইংল্যান্ডের সাসেক্সে ১০ দিনের অনুশীলন ক্যাম্পটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

তার আগে বলা জরুরি, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৬ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের মধ্যে অনেক পার্থক্য! দুই সফরে বড় ফ্যাক্টর ছিল উইকেট/পিচ! বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হলেও উইকেট তৈরি করেছিল আইসিসি। সব দলের কথা চিন্তা করেই উইকেট বানায় ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা। উইকেট তৈরির ক্ষেত্রে আইসিসির কাছে স্বাগতিক দল আলাদা গুরুত্ব পায় না। আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজে স্বাগতিক দল প্রতিপক্ষের দুর্বলতা ও নিজেদের শক্তিমত্তা বিশ্লেষণ করে উইকেট বানায়। প্রতিটি দলই এমন উইকেট করে যা নিজেদের জন্য স্বর্গ এবং প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে যায় মৃত্যুকূপ! নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে সব শেষ সিরিজে বাংলাদেশের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ এটি।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আইসিসির টুর্নামেন্ট। তাই উইকেটও তৈরি করবে আইসিসি। সেটা অবশ্যই সব দলের কথা চিন্তা করে তৈরি করবে। তাই কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজের উইকেটের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উইকেট কখনই এক রকম হবে না!

২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় দল ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হয়। অথচ সেই ভারতই আবার ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। এখানেই বোঝা যায় উইকেটের ক্যারিশমা।

তবে আবহাওয়াও একটা বড় ফ্যাক্টর। যদিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খেলে তারা অভ্যস্ত। তার পরও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখে অনুশীলন ক্যাম্প!

এমন চিন্তা মাথায় রেখেই সাসেক্সে অনুশীলন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছে ক্রিকেট বোর্ড। যদিও কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ-এ-তে টাইগারদের সঙ্গী স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এমন কঠিন গ্রুপ থেকেও স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। দেশত্যাগের আগে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বলেছেন, কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর দল। কিন্তু এই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবশেষ পাঁচ ওয়ানডের মধ্যে তিনটিই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতেই ইংল্যান্ডকে হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে টাইগারদের।

ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। কার্ডিফের সেই স্মৃতি এখনো ক্রিকেটামোদীদের রোমাঞ্চিত করে। মোহাম্মদ আশরাফুলের ১০১ বলে করা সেঞ্চুরি আর শেষ ওভারে অসি গতি তারকা জেসন গিলেস্পির বলে আফতাব আহমেদের ছক্কা এখনো স্মৃতিপটে ভাসে। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের সুখস্মৃতি মাত্র এই একটিই। তবে ২০১১ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে খেলার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সবচেয়ে চেনা প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। যাদের বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশও করেছে আবার তাদের কাছে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে। তবে এটা তো ঠিক, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে প্রতিটি দলকে হারানোর সামর্থ্য থাকতে হবে। টাইগারদের সেই সামর্থ্য যে আছে তা গত দুই বছরের ফল সাক্ষ্য দিচ্ছে!

কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের টার্গেট কী? যদিও এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি দলপতি মাশরাফি। কিন্তু টাইগারদের দৃষ্টি যে শিরোপা, তা মুখে না বললেও প্রস্তুতি দেখেই বোঝা যায়! এখন দেখা যাক, ময়দানের লড়াইয়ে কেমন করে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর