শনিবার, ৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিমিং কন্ডিশনে স্পিনের দাপট

মেজবাহ্-উল-হক

সিমিং কন্ডিশনে স্পিনের দাপট

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন হচ্ছে পেস বোলারদের স্বর্গ। কিন্তু সেই স্বর্গেও দাপট দেখানোর ক্ষমতা রাখেন স্পিনাররা! তার বড় উদাহরণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আসরটি। দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাঁধে ভর দিয়েই শিরোপা জিতেছে ভারত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হচ্ছেন স্পিনার। তা ছাড়া সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে দুজনই স্পিনার। ৫ ম্যাচে ভারতের জাদেজা একাই নিয়েছেন ১২ উইকেট। শীর্ষে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া সেরা পাঁচে ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। তিনি নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রবীন্দ্র জাদেজা অশ্বিনের জাদুকরী বোলিংয়ে জিতে যায় ভারত। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন জাদেজা। ওই আসরে ওভালে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচটির কথা আলাদা করেই বলতে হয়। যে ম্যাচে জাদেজা মাত্র ৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের ধসিয়ে দিয়েছিলেন। আরেক স্পিনার অশ্বিনও দারুণ বোলিং করেছিলেন। তিনি ৩৬ রানে এক উইকেট নিয়েছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত যে দুই উইকেট হারিয়েছিল, সে দুটিও পেয়েছিলেন ক্যারিবীয় স্পিনার সুনীল নারাইন। দুই দলের দুই ইনিংস মিলে পতন ঘটা ১১ উইকেটের মধ্যে ৮ উইকেটই নিয়েছিলেন স্পিনাররা।

শুধু তাই নয়, ওই আসরে গ্রুপ পর্বের যে ম্যাচে নিউজিল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল সে ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন এক স্পিনার—নাথান ম্যাককালাম। তাই ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখলে স্পিন-আক্রমণও যে শক্তিশালী হতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিন-আক্রমণ কতটা শক্তিশালী? অভিজ্ঞ বলতে এক সাকিব আল হাসান। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো থেকেও নেই। কেননা এখন তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে বোলিং করেন না বললেই চলে। যদিও ঘরোয়া লিগে এখনো টপাটপ উইকেট তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। মোসাদ্দেক হোসেনের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ১১ ম্যাচ। তবে স্পিনে বলার মতো কোনো আহামরি পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। শিকার করেছেন ১১ উইকেট। দলে পারটাইম বোলার হিসেবেই তিনি খেলে থাকেন। নিয়মিত বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে টেস্টে তিনি তার ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। তবে ওয়ানডেতে এ পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ৩ ম্যাচ। নিয়েছেন ৪ উইকেট। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেওয়া হয়েছে সানজামুল ইসলামকে। এখনো জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়নি। তবে প্রথম শ্রেণির (লিস্ট-এ) ক্রিকেটে ৬৩ ইনিংসে নিয়েছেন ৮০ উইকেট। এ ছাড়া লঙ্গার ভার্সনে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তিনি। ৫৭ ম্যাচে নিয়েছেন ২১২ উইকেট। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবেই দলের সঙ্গে রয়েছেন এই বাম হাতি বোলার।

এক সময় বাংলাদেশ ছিল স্পিননির্ভর দল। অথচ এখন দলে তারকা স্পিনারই খুঁজে পাওয়া দায়। সাকিবের বলেও আগের মতো ধার আর নেই। তারপরও বাংলাদেশের স্পিন বলতে এখনো সাকিব আল হাসানই সেরা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে খেলা ১৬৯ ম্যাচের মধ্যে বোলিং করেছেন ১৬৮ ম্যাচেই। উইকেট নিয়েছেন ২২১টি। ইকোনমি রেটও দারুণ—৪.৩৭। সাকিব খুব কম ম্যাচই খেলেছেন যে ম্যাচে তাকে ১০ ওভারের কোটা পূরণ করতে হয়নি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তার দিকেই তাকে থাকবেন ভক্তরা।

একাদশে তিন পেসার তো খেলবেনই। টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা—তিন পেসার বোলিং করবেন ৩০ ওভার, ১০ সাকিব। আর বাকি ১০ ওভার বোলিং করার জন্য নির্ভরশীল হতে হয় পারটাইম বোলারের ওপর— মিরাজ, মোসাদ্দেক কিংবা মাহমুদুল্লাহ। যদি কোনো দিন সাকিব সুবিধা করতে না পারেন সেদিন দলকে বড় ঝামেলা পোহাতে হয়।

সর্বশেষ খবর