শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবুজ উইকেটে তামিমের লড়াই

মেজবাহ্-উল-হক

সবুজ উইকেটে তামিমের লড়াই

ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিস্নাত প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে পুল করছেন তামিম ইকবাল —ক্রিকইনফো

সবুজ আর সবুজ! আউটফিল্ড ও পিচের মধ্যে যেন কোনো পার্থক্য নেই। কেবল সবুজ ঘাসের ছোট-বড় সাইজ দেখে বুঝে নিতে হয়। বল এমনভাবে ‘মুভমেন্ট’ করছিল খেলাই যাচ্ছিল না। এমন উইকেটের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

বলের গতি বুঝতে না পেরে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার সৌম্য সরকার। মারকুটে সাব্বির রহমান ভেবেছিলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়েই তিনি রানের খাতা খুলবেন এবং আইরিশ বোলারদের চাপে ফেলবেন। কিন্তু তার কৌশলে কাজ হয়নি। উল্টো থার্ডম্যানে ক্যাচ হয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নেন ২৩ বছর বয়সী আইরিশ মিডিয়াম পেসার পিটার চেইজ। দলীয় ৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন খাদের কিনারে। নির্ভরতার প্রতীক মুশফিক ২২ গজে গিয়ে থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেন। তামিমের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটিও গড়লেন। কিন্তু বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন মুশফিকও। ‘অপয়া-১৩’-তে তিনিও ক্যাচ তুলে দিলেন।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে স্লো-ওভার রেটের জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। গতকাল সেই শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে টাইগার ক্যাপ্টেনকে। তবে এই সুযোগে নেতৃত্ব দিতে নেমে হাফ সেঞ্চুরির অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। হাবিবুল বাশার সুমনের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলকে অর্ধশত ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন সাকিব। বাশার অধিনায়কত্ব করেছেন ৬৯ ম্যাচে, মাশরাফি ৪১ ম্যাচে।

তবে মাইলফলকের ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব। ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দারুণভাবে শুরু করলেও তিনিও চেইজের বলে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচ তুলে দেন। ৭০ রানেই চতুর্থ উইকেটের পতন।

একপাশ থেকে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল তখন আরেক প্রান্তে ব্যাট হাতে নিজের ‘ক্লাস’ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। দারুণ সব শট খেলেছেন। হাফ সেঞ্চুরিও করেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ উইকেটে যাওয়ার পর যেন তামিমের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াও অসাধারণ। রানের গতিও বেড়ে যায়। পঞ্চম উইকেটে দারুণ এক জুটিও গড়ে ওঠে। তামিম-মাহমুদুল্লাহ মিলে গড়েন ৮৭ রানের জুটি।

বাংলাদেশকে বিপদ থেকে টেনে তোলেন দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান। মাহমুদুল্লাহ দারুণ একটি ছক্কাও হাঁকান। ৫৬ বলে করেন ৪৩ রান। অপর প্রান্তে থাকা তামিম তখন অপরাজিত ছিলেন ৬৪ রানে। ৩১.১ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১৫৭। দুই ব্যাটসম্যান যখন দলকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তখনই আঘাত হানে বৃষ্টি।

সবুজ উইকেট, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সেই সঙ্গে বৃষ্টি! আয়ারল্যান্ডের এমন বৈরী পরিবেশ নাকি বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনকও —যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে ভালো খেলতে সহায়তা করবে। সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট অপারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই সবুজ উইকেট নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। ছোট দলগুলো বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য কখনো কখনো এমন উইকেট তৈরি করে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উইকেট এমন হবে না। বরং এমন উইকেটে খেলার কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অনুশীলনটা ভালোই হবে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো করবে।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১৫৭/৪, ৩১.১ ওভার (তামিম ৬৪*, সৌম্য ৫, সাব্বির ০, মুশফিক ১৩, সাকিব ১৪, মাহমুদুল্লাহ ৪৩*, অতি: ১৮। চেইজ ৩/৩৩, ম্যাককার্থি ১/৪৩। [বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকাকালীন স্কোর]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর