সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমন হারে বিস্মিত টাইগাররা

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এমন হারে বিস্মিত টাইগাররা

এজবাস্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের বোলিং পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। তাসকিন আহমেদ এক উইকেট পেলেও ৯ ওভার বোলিং করে ম্যাচে রান দিয়েছেন ৮০ —আইসিসি

এজবাস্টনে একটি মাত্র ওয়ানডে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। সাত বছর আগে ২০১০ সালে এই মাঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। স্বাগতিকদের ৩৪৭ রানের জবাবে তামিম, সাকিব, মাশরাফিদের ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল ২০৩ রানে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু এজবাস্টনে কোনো খেলা নেই। তারপরও ইংলিশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এজবাস্টনের অভিজ্ঞতা অনেকটাই এগিয়ে দেবে বাংলাদেশকে। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের ফলটা ভালো হয়নি এবং ৩৪১ রান করেও হেরে গেছে। এমন হারে বিস্মিত ক্রিকেটাররা। বিস্মিত ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল যেখানে ১০৯ রান, সেটা অনায়াসে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা করে ফেলায় বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এই পেস অ্যাটাক নিয়েই ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল। তারপরও ওভার প্রতি প্রায় ৭ রানের স্ট্রাইক রেট নিয়েও প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে না পারাটা সত্যিই প্রশ্নবোধক। এই পেস অ্যাটাক নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কতটা এগোবে বাংলাদেশ?  

প্রস্তুতি ম্যাচের হারজিত কখনোই পরিসংখ্যানে বড় কোনো প্রশ্নের সৃষ্টি করে না। কিন্তু যে কোনো আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে ৩৪১ রান করে জিততে না পারাটা সত্যিই কষ্টের। ম্যাচ শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে হারের ব্যাখ্যায় ৬১ রান করা ইমরুল কায়েশ বলেন, ‘এমন ম্যাচ হেরে যাওয়ায় গোটা দল বিস্মিত। আমরা সবাই হতাশ। জিতলে আমাদের সবারই ভালো লাগত।’ এজবাস্টনে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ স্কোর ৪০৮। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিল নিউজিল্যান্ড। এছাড়া এই মাঠে তিন শতাধিক স্কোর হয়েছে আরও চারটি। তিনশ রান করে হেরেছে-এমন কোনো রেকর্ড নেই। তাই প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৪১ রান করেও বাংলাদেশের হারে বিস্মিত সবাই। এমন হারকে তাই দুঃখজনক বলেছেন বাঁ হাতি ওপেনার ইমরুল, ‘৩৪১ রান করে ম্যাচ হেরে যাওয়া দুঃখজনক। ম্যাচটি আমাদের হাতেই ছিল। সবকিছুই ভালো হচ্ছিল। একটা সময় মনে হয়েছিল আমরা এমনিতেই ম্যাচ জিতে যাব। ক্রিকেটের হিসেবে তেমনই কথা ছিল। আমরা ব্যাটিংটা যেমন করেছি, তাতে দিনটিও আমাদের ছিল। কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। পাকিস্তান অসাধারণ ক্রিকেট খেলে জয় তুলে নিয়েছে।’

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ১৫ জন ক্রিকেটার খেলেছে। ১১ জন ব্যাটিং এবং ১১ জন ফিল্ডিং করেছে। এমন ম্যাচে তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করেন। ১০২ রানের ইনিংস খেলেন মাত্র ৯৩ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায়। ইমরুল কায়েশ ৬১ রান করেন ৬২ বলে। মুশফিকুর রহিম ৪৬, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৯ রান করেন। প্রথমে ব্যাট করে ১০ ওভারে ৫৮ রান করেছিল মাশরাফিবাহিনী। ২০ ওভারে ছিল ১ উইকেটে ১৩২, ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৯৭ এবং ৪০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭৭ রান। তখন মনে হয়েছিল স্কোর ৪০০ রান না হলেও পৌনে চারশ হবে। কিন্তু শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ ১০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৬৪। শেষ ১০ ওভারের স্কোরেই ম্যাচ থেকে ছিটতে পড়ে বাংলাদেশ।

বোলিং প্রথম ৪০ ওভার পর্যন্ত ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৪০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩৩। শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০৯ রান। শেষ ৩০ বলে ৬৩ রান। এমন সমীকরণের ম্যাচে জেতাই উচিত ছিল টাইগারদের। ৪৬ ওভারে সাকিব রান দেন ১৩, ৪৭ ওভারে মাশরাফি দেন দুই ছক্কায় ১৬, ৪৮ নম্বর ওভারে শফিউল ১০, ২৯ ওভারে তাসকিন দেন ১১ রান। শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার দাঁড়ায় ১৩ রান। মাশরাফির প্রথম ৩ বলেই ফাহিম আশরাফ ৬, ৩ ও ৪ রান তুলে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেন। ফাহিম ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাত্র ৩০ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায়। যদিও এজবাস্টন মাঠের এক পাশের আয়তন ছিল ৪০ গজের মতো। এত কম আয়তনের বিষয়টি কখনোই যুক্তির হাতিয়ার হতে পারে না। ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন খরুচে। চার পেসার মাশরাফি ৯.৩ ওভারে ৬৮, তাসকিন ৯ ওভারে ৮০, শফিউল ৭ ওভারে ৪৬, সৌম্য সরকার ৫ ওভারে ২৫ রান দেন। এছাড়া সাকিব ৬ ওভারে ৪১, সানজামুল ৩ ওভারে ১৭, মোসাদ্দেক সৈকত ৬ ওভারে ২৯ ও মেহেদী মিরাজ ৪ ওভারে ৩০ রান। ম্যাচে দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেনের অভাব পরিষ্কার অনুভূত হয়েছে।

আজ ভারতের বিপক্ষে আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা মাশরাফিদের। ১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল লড়াইয়ে নামার আগে শেষবারের মতো ঝালাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা। ম্যাচটিই পরিষ্কার করে দিবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিটা কতটা পরিকল্পিত হয়েছে টিম মানেজমেন্টের।

সর্বশেষ খবর