সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবলে ম্যাজিকম্যান কামাল বাবু

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলে ম্যাজিকম্যান কামাল বাবু

ফুটবলে বাংলাদেশে ভালোমানের কোচ নেই। এই আক্ষেপ অনেকেই করেন। অথচ আবদুর রহিম, গোলাম সারওয়ার টিপু, আলী ইমাম, অমলেশ সেন, কাজী সালাউদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মানিক, সাইফুল বারী টিটু, মারুফুল হক কোচ হিসেবে ঠিকই সাড়া ফেলেছিলেন। এদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ ক্যারিয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। উল্লেখিত কোচরা মূলত বড় ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলে ছিলেন তারকার ছড়াছড়ি। কিন্তু এক কোচ আছেন, যিনি একেবারে নবীন খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পরবর্তীতে এসব খেলোয়াড়রা দেশের প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার হয়েছেন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কয়েক বছর আগে আক্ষেপ করে বলেছিলেন দেশে কোনো মানসম্পন্ন কোচ নেই। তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় দলে বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সত্যি বলতে কি সালাউদ্দিনের এই বক্তব্য যে সঠিক নয় তার বড় উদাহরণ হতে পারে কামাল বাবুই।

প্রায় দুই যুগ পাড় হতে চলেছে কামাল বাবুর কোচিং ক্যারিয়ার। অথচ কখনো তাকে বড় ক্লাবের দায়িত্বে দেখা যায়নি। ওয়ারী, বিআরটিসি, ফরাশগঞ্জ বেশ কটি দলে খেললেও ফুটবলার হিসেবে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু কোচ হিসেবে তাকে ম্যাজিকম্যান বলা হয়। ছোট দলের কোচ হয়ে প্রতিবছরই আলোড়ন তুলছেন। কামাল বাবু কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার মুসলিম ফ্রেন্ডস রহমতগঞ্জ ক্লাবের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি মৌসুমেই বড় দলের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে রহমতগঞ্জ। গত মৌসুমের কথা ধরা যাক। রহমতগঞ্জে কোনো পরিচিত ফুটবলার ছিলেন না। অচেনা তরুণদের নিয়ে দল গড়া হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল এই দল রেলিগেশন ফাইট দেবে। অথচ কামালের প্রশিক্ষণে রহমতগঞ্জ লিগে যেভাবে জ্বলে উঠেছিল এক কথায় অতুলনীয়। প্রথম পর্বে যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে তাতে মনে হচ্ছিল রহমতগঞ্জ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপের ফাইট দেবে। দ্বিতীয় পর্বে ছন্দ হারিয়ে ফেলায় গোল পার্থক্যে পুরান ঢাকার এই দলকে ৬ষ্ঠ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

গত মৌসুমে রহমতগঞ্জের অচেনা খেলোয়াড়রা ফুটবলপ্রেমীদের নজর কেড়েছিল। তাই বড় বড় ক্লাব বসে থাকেনি, লাখ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে এবার তারা দলে টেনেছেন। স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড় মিলিয়ে ১৮ জন ফুটবলার রহমতগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছেন। কামাল বাবুরও অফার এসেছিল বড় ক্লাব থেকে। তিনি সাড়া দেননি। এবারও রহমতগঞ্জের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন। বললেন, রহমতগঞ্জ দল ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কিছু করার নেই। বড় অঙ্কের অফার পেলে খেলোয়াড়রা বসে থাকবে কেন? মাঠেতো নামতে হবে। অচেনা তরুণদের নিয়েই পুনরায় দল গড়েছে রহমতগঞ্জ। কোনো পরিচিত খেলোয়াড় নেই। অথচ মৌসুমের প্রথম ট্রফিতে রহমতগঞ্জ চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে।

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই টিম বিজেএমসিকে বিধস্ত করেছে। পরের ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেডারেশন কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। শেষ আটে প্রতিপক্ষ ছিল মুক্তিযোদ্ধা। ফেবারিট ধরা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাকে। কিন্তু বাবু কোচিং ক্যারিশমায় রহমতগঞ্জ যেন কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাজিক প্রদর্শন করল। শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনী ও ঢাকা আবাহনী ঘাম ঝড়ানো জয় পেয়ে সেমিতে জায়গা করে নিয়েছে। শক্তিশালী দল গড়েও বিদায় নিয়েছে ঢাকা মোহামেডান ও শেখ রাসেল। কিন্তু রহমতগঞ্জ দাপট দেখিয়ে সেমিফাইনালে উঠে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে। ফেডারেশন কাপ ইতিহাসে রহমতগঞ্জের ফাইনাল খেলার রেকর্ড নেই। বাবুর শিষ্যদের যে গতি তাতে ফাইনালে উঠলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশে এমন কোনো ক্লাব নেই যে বাবুর হাতে গড়া খেলোয়াড় নেই। তিনি কত যে ফুটবলার তৈরি করেছেন তার হিসেব মেলানো মুশকিল হবে। কি আছে বাবুর ভিতর। তিনি কি ফুটবলার তৈরির জাদুকর। বারবার অচেনা খেলোয়াড় নিয়ে চমক দেখানোর রহস্যটা কি?

সর্বশেষ খবর