বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

টেমস পাড়ে ক্রিকেটারদের মিলন মেলা

টেমস পাড়ে ক্রিকেটারদের মিলন মেলা

প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রুবেল হোসেন চমৎকার বোলিং করেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় টাইগারদের শোচনীয় হারে মাঠ ছাড়তে হয় —এএফপি

বাংলাদেশ সময় রাত ১টা। লন্ডনে তখন পড়ন্ত বিকাল। টেমস নদীর পাড়ে তখন বেশ ভিড়। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর ইংলিশরা শান বাঁধানো টেমসের পাড় দিয়ে হাঁটতে পছন্দ করেন। পর্যটকদেরও ভীষণ পছন্দ লন্ডন ব্রিজে (টাওয়ার ব্রিজ) এই টেমস পাড়। টাওয়ার ব্রিজে না এলে যেন যুক্তরাজ্য সফরই অপূর্ণ থেকে যায়।

ইংল্যান্ডে এখন গ্রীষ্মকাল। তারপরও তাপমাত্রা ২০-এর নিচেই থাকে সব সময়। রাতে ও ভোরে থাকে হাড় কাঁপানো শীত। গতকাল বিকালে (পড়ুন গত পরশু) টাওয়ার ব্রিজের পাশ দিয়ে যখন হাঁটছিলাম তখন এখানকার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। টেমসের মিষ্টি বাতাস যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি জাগিয়ে তোলে মনে। বাতাস যে কতটা মধুর হতে পারে, কতটা শান্তির হতে পারে তা বিকালের ম্রিয়মাণ সূর্যালোকে টেমসের পাড়ে না হাঁটলে বোঝা কঠিন!

টাওয়ার ব্রিজ সংলগ্ন টেমসের পাড় থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই ‘গ্যারাঞ্জ সিটি হোটেল’। এই হোটেলেই উঠেছেন মাশরাফিরা। ‘দ্য ওভাল’ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লন্ডন-ভেন্যু) থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ৫ কিমি। সব মিলিয়ে ২২ মিনিটের দূরত্ব। এই হোটেলে উঠেছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলও।

টেমসের পাড় থেকে হোটেলের দিকে যেতেই চোখে পড়ে একটি জটলা। ঠিক জটলাও নয়। মনে হচ্ছিল মৌন মিছিল করে কারা যেন এদিকেই আসছে। রাজনৈতিক নেতাদের মতো একজন হাত নেড়ে নেড়ে নির্দেশনা দিয়ে দলটিকে পথ দেখিয়ে চলেছেন! কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বোঝা গেল এ কোনো রাজনৈতিক নেতা নন—বিরাট কোহলি! পাশে মহেন্দ্র সিং ধোনি, শেখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও অন্যরা। পড়ন্ত বিকালে ভারতের অধিনায়ক সতীর্থদের নিয়ে খেতে ঢুকে পড়লেন পাশের ওয়াগামামা রেস্টুরেন্টে। তবে এর আগেই ভক্তদের সেলফির যন্ত্রণা পোহাতে হলো তাদের। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে খাওয়ার জন্য হোটেল থেকে দলবল নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় না ক্রিকেটারদের। সেটা সম্ভবও নয়। নিজের দেশেও কোহলিরা এভাবে বের হতে পারেন কিনা! এখানে একে তো নিরাপত্তা নিয়ে ঝামেলা নেই। তা ছাড়া পাগল ভক্তও নেই যারা ক্রিকেটারদের এক নজর দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে এবং দেখা মাত্রই নানাভাবে বিরক্ত করবে! 

লন্ডন হচ্ছে মাল্টি কালচারের এক শহর। এখানে কেউ হাফ প্যান্ট পরেছে, অধিকাংশের চুলের কাট অদ্ভুত স্টাইলের! ছেলেদের অনেকে কানে-নাকে-ভ্রুতে দুল পরেছে, কেউবা মাথায় টুপি ও গায়ে জুব্বা (ঢিলাঢালা পাঞ্জাবি) পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়েদের অধিকাংশের শরীর অনাবৃত, আবার কেউবা বোরকায় আবৃত। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না। যে যার মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। এখানে যেন তারকা-মহাতারকা বলে কিছু নেই! সে কারণেই হয়তো কোহলিরাও অন্য আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো হোটেল থেকে বাইরে গিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিকালের নাশতা সেরে ফেললেন। গ্যারাঞ্জ হোটেলের রিসেপশনে দেখা হয় বাংলাদেশের দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে। কাউন্টারে কি যেন কথা বলে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলেন তাসকিন। কাটার মাস্টার বসে প্রবাসী বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। টেমস পাড়ে ক্রিকেটারদের যেন মিলনমেলা বসেছে।

মুস্তাফিজ বেশ নির্ভার। তাকে দেখে, কথা বলে একবারও মনে হলো না তার ভিতর কোনো রকমের মানসিক চাপ রয়েছে। চাপ থাকার কথাও নয়। ইউরোপে খেলতে এসেই (ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সাসেক্সের হয়ে) ইনজুরিতে পড়েছিলেন। এবার এখানে এসেই নিজের আসল ফর্ম ফিরে পেয়েছেন।

ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) যে মুস্তাফিজ আগের আসরে শিরোপা জিততে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্রধান অস্ত্র ছিলেন, সেই মুস্তাফিজ এবার এক ম্যাচ খেলে ভালো করতে না পারায় আর একাদশে জায়গাই পাননি। রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই সময় কাটাতে হয়েছে। মুস্তাফিজ গেল গেল বলে তো সমালোচকরা সোচ্চারও হয়েছিলেন। তবে ইউরোপে এসে ঠিকই হারানো ফর্ম ফিরে পেয়েছেন মুস্তাফিজ। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ম্যাচে বোলিং করে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুস্তাফিজকে বোলিং করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ৩৪১ রানের পাহাড় গড়েও বোলারদের ব্যর্থতায় হেরে গেছে। তাই মুস্তাফিজকে জিজ্ঞেস করলাম, এমন ম্যাচে মাঠের বাইরে থেকে বসে থেকে হারতে দেখতে খারাপ লাগেনি? আরও অনেক প্রশ্ন করেছি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আপনার ভাবনা কী? দলের অন্য ক্রিকেটারের মানসিক অবস্থা কেমন? কোচ কী বলছে? আড্ডায় আরও অনেক প্রশ্নই করেছি। সব কিছুরই উত্তর দিয়েছেন মুস্তাফিজ। তবে আসার সময় বললেন, ‘ভাই একটা অনুরোধ করি, আমার সঙ্গে যা কথা হলো কিছুই লিখবেন না!’ তাই শুধু জানার জন্যই অনেক কিছু জানা হলো, কিন্তু পাঠকের জন্য কিছুই লেখা হলো না। তবে এটা বলতে বাধা নেই, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল লড়াইয়ের আগে টেমস পাড়ে বাংলাদেশ দল বেশ উজ্জীবিত।

সর্বশেষ খবর