সোমবার, ৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘মাস্টার অব ইউরোপ’ রিয়াল মাদ্রিদ

রিয়াল ৪-১ জুভেন্টাস

রাশেদুর রহমান

‘মাস্টার অব ইউরোপ’ রিয়াল মাদ্রিদ

ট্রফি হাতে রিয়ালের উল্লাস

রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশিতে ফুঁ দিতেই মাঠে বসে পড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তারপর মাথা ঠেকালেন কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বরে। প্রচণ্ড আবেগে তিনি যেন অন্য কোনো জগতে চলে গেলেন। রিয়াল তারকারা একে একে রোনালদোর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগলেন। নিষিদ্ধ সীমানায় ততোক্ষণে প্রবেশ করেছেন কোচ জিদানসহ রিয়াল শিবিরের অন্যরা। দলটার মুখে প্রাণখোলা হাসি, চোখ চিক চিক করছে আনন্দের আতিশয্যে। গ্যালারিতে তখন ‘হালা মাদ্রিদ’ কোরাসের সুর ছাড়িয়েছে কার্ডিফের সীমানা। জুভেন্টাসের দুর্ভেদ্য রক্ষণ ভেঙে রিয়াল মাদ্রিদ জয় করেছে ‘ডুয়ো ডেসিমা’ (১২তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ)। রোনালদোর ডাবল আর কাসেমিরো ও মারকো আসেনসিওর গোলে ৪-১ ব্যবধানে ওল্ড লেডিদের উড়িয়ে দিয়েছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। জিদানের মস্তিষ্ক আর রোনালদোর দুরন্ত ফর্মকে রুখতে পারেননি বুফনরা। ইউরোপের সেরা ডিফেন্স লাইন পরাস্ত হলো রিয়ালের কাছে। দুরন্ত সূচনা করেছিল জুভেন্টাস। ম্যাচটার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল শুরুতেই। তবে ম্যাচের ২১তম মিনিটে রোনালদোর আচমকা গোলে জুভেন্টাস কিছুটা থমকে গিয়েছিল। অবশ্য মারিও মানজুকিচ ম্যাচের ২৭তম মিনিটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসেরই এক অসাধারণ গোল উপহার দেন ভক্তদের। হিগুয়েনের পাসে বল বুকে নিয়ে অসাধারণ ভলিতে দর্শনীয় এক গোল করেন তিনি। নাভাসের কিছুই করার ছিল না শুধু দেখা ছাড়া। মানজুকিচের গোলে ম্যাচে ফিরলেও শেষ রক্ষা হয়নি জুভেন্টাসের। ব্রাজিলিয়ান তারকা কাসেমিরো ম্যাচের ৬১তম মিনিটে লম্বা শটে এক গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন। এরপর থেকেই জুভেন্টাসের হাতছাড়া হয়ে যায় ম্যাচ। বুফনরা যেন হাল ছেড়ে দেন। রোনালদো ৬৪তম মিনিটে ও আসেনসিও ৯০তম মিনিটে আরও দুটি গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের ডুয়ো ডেসিমা নিশ্চিত করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা দুটি শিরোপা জিতল রিয়াল মাদ্রিদ। আর কোচ জিনেদিন জিদান আরিগো সাচ্চির পর প্রথম কোচ হিসেবে টানা দুইবার ইউরোপ সেরার মুকুট জিতলেন। সাচ্চি ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে এসি মিলানের কোচ হিসেবে ইউরোপিয়ান কাপ (এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতেছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর রোনালদোরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে ব্যস্ত ছিলেন। বিপরীত দিকে একে অপরকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন বুফনরা। ইতালিয়ান এ কিংবদন্তির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর জেতা হলো না। তিন বার ফাইনালে উঠেও তিনি ইউরোপ সেরার মুকুট জিততে ব্যর্থ হলেন। এর আগে ২০০৩ (এসি মিলান) ও ২০১৫ (বার্সেলোনা) সালে ফাইনালে পরাজিত হয় জুভেন্টাস। এই নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সেরা আসরে সর্বোচ্চ ৭ বার ফাইনালে পরাজিত হলো ওল্ড লেডিরা। অন্যদিকে ১৫ বার ফাইনাল খেলে ১২ বারই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। পরাজয়ের পর রিয়াল মাদ্রিদের ভূয়সী প্রশংসা করলেন জুভেন্টাস অধিনায়ক বুফন। তিনি বলেন, ‘হেরে আমরা সত্যিই হতাশ। তবে রিয়াল মাদ্রিদ যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। তারা দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ খেলেছে। এই ধরনের ম্যাচে যেভাবে খেলা উচিত তারা ঠিক তাই করেছে।’ বুফন তো প্রশংসা করবেনই। কারণ, লড়াইটা মূলত বুফনের সঙ্গে রোনালদোর ছিল। সেই লড়াইয়ে রোনালদো নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন দুইটা গোল করে। অন্যদিকে যে বুফন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পুরো মৌসুমে হজম করেছেন মাত্র তিনটা গোল সেই তিনিই কি না ফাইনালে হজম করলেন ৪টা গোল! রিয়াল মাদ্রিদের এমন দুরন্ত রূপ দেখে ইউরোপিয়ান মিডিয়া রিয়াল মাদ্রিদের নাম দিয়েছে ‘মাস্টার অব ইউরোপ’। যে দল ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদেরকে এই নামটাই বুঝি সবচেয়ে ভালো মানায়।

সর্বশেষ খবর