বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্মৃতির শহরে রোমাঞ্চের অপেক্ষা

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড লড়াই কাল

লন্ডনের মতো কার্ডিফে বৃষ্টি নেই। আকাশে মেঘের উড়াউড়িও নেই। কড়া রোদ্দুর। তবে লন্ডনের তুলনায় এখানে শীত অনেক বেশি। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস। বলতে গেলে, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মনের মতো আবহাওয়া। এমন পরিবেশে ব্লাক ক্যাপসদের হারাতে পারবে টাইগাররা?

তবে কন্ডিশন কিউইদের অনুকূলে থাকলেও রেকর্ড বাংলাদেশের দখলে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কার্ডিফে মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছে টাইগাররা। সেটাও কিনা এক যুগ আগে। যে ম্যাচে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল। বাংলাদেশের কাছে কার্ডিফ এক স্মৃতির শহর। সৌভাগ্যের শহর। অস্ট্রেলিয়া বধের শহর। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে ২০০৫ সালে খেলা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটি। যে ম্যাচের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১০১ বলে খেলেছিলেন ১০০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ঐতিহাসিক সেই জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনও। তিনি খেলেছিলেন ৭২ বলে ৪৭ রানের ধৈর্যশীল এক ইনিংস। 

বল হাতে তিন উইকেট নিয়েছিলেন তাপস বৈশ্য। তবে উইকেট মাত্র একটি পেলেও অসি ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। আফতাব আহমেদের কথা না বললে চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটারের প্রতি বড় অবিচার করা হয়ে যায়। তার ১৩ বলে সাইক্লোন গতির অপরাজিত ২১ রান ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছে। শেষ ওভারে জেসন গিলেস্পিকে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফতাব তা এখনো ক্রিকেটামোদীদের স্মৃতিপটে গাঁথা। সেই সৌভাগ্যের ভেন্যুতেই এবার এক যুগ পর খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড। মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ। জিতলেই সেমিফাইনালের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে মাশরাফিদের।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে বৃষ্টির সৌজন্যে এক পয়েন্ট পাওয়ায় এমনিই উজ্জীবিত বাংলাদেশ। তবে গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচটি স্মৃতির ভেন্যু কার্ডিফে হওয়ায় ক্রিকেটাররা দারুণ রোমাঞ্চিতও। আগের ম্যাচে যেমন বাংলাদেশ ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল, এ ম্যাচেই সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান ফর্মের তুঙ্গে থাকা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, ‘আমাদের একটা ইতিহাস আছে এই মাঠে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সেই ইতিহাসটা যেন ধরে রাখতে পারি। তবে আমি যতই ইতিহাসের কথা বলি না কেন আমার কাছে মনে হয় যে নির্ধারিত ম্যাচে আমাদের ক্রিকেটটা ভালো খেলতে হবে। ক্রিকেটটা যদি আমরা ভালো  খেলি তাহলেই সব করা সম্ভব। তা না হলে সম্ভব নয়।’

সত্যিই ক্রিকেট বড় বৈচিত্র্যময় খেলা। তা না হলে যে দলটি এখনো কোনো জয়ই পায়নি, সেই দলটিই কিনা মাঠে নামছে সেমিফাইনালের রোমাঞ্চ নিয়ে! তবে জিতলেই যে শেষ চার নিশ্চিত হয়ে যাবে এমন নয়! অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের ফলের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হবে। জয় পেতেই হবে স্বাগতিকদের। তবে ইংল্যান্ড এখন দারুণ ফর্মে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক রান তাড়া করেও তারা জিতেছিল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। আর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে ৮৭ রানে। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকবে ইংলিশরাই। তবে তার আগে জিততে হবে বাংলাদেশকে।  কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের নাম এখন সোয়ালেক স্টেডিয়াম। শুধু নামই নয়, অবকাঠামোতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ যখন সব শেষ খেলেছিল তখন ছিল না গ্যালারি। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র। চার পাশেই সুদৃশ্য গ্যালারি।

সোয়ালেক স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে নয়নাভিরাম ভিক্টোরিয়া পার্ক। পাশে দৃষ্টিনন্দন লেক। পার্ক ও লেকের ওপারেই ঐতিহাসিক মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম। যেখানে কয়েক দিন আগেই ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। যে ফাইনালকে কেন্দ্র করে লাখো ভক্ত এসেছিলেন ওয়েলসের রাজধানী শহর কার্ডিফে।

ওয়েলসের ছোট্ট এই শহরে যেখানে হোটেল, মোটেল মিলে মাত্র ৬০-৭০ হাজার মানুষের থাকার জায়গায় রয়েছে। সেখানে হঠাৎ জন বিস্ফোরণ ঘটে। কনকনে শীতের মধ্যে মানুষ রাস্তায় রাত কাটিয়েছিল।

কোনো এক ম্যাচের জন্য যে এত মানুষ আসতে পারে তা কার্ডিফবাসীর কল্পনাতেও ছিল না। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো উন্মাদনা নেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে নিয়ে। তারপরেও বাংলাদেশের ম্যাচ বলে কথা। যুক্তরাজ্যের সেখানেই টাইগারদের খেলা হোক গ্যালারি থাকে বাংলাদেশের সমর্থকদের দখলে। ইতিমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাঙালি দর্শকরা কার্ডিফে আসতে শুরু করেছেন। রোনালদোদের ম্যাচের মতো উত্তাপ না ছড়ালেও কার্ডিফে এখনো গিজ গিজ করছে বাঙালি।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি জিতলেই সৃষ্টি হতে পারে ইতিহাস। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ উঠে যেতে পারে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। ইতিহাসের অংশ হতেই কার্ডিফে ছুটে আসছেন বাঙালিরা।

সর্বশেষ খবর