শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

কার্ডিফে বাঙালিদের আবেগ-উচ্ছ্বাস

কার্ডিফে বাঙালিদের আবেগ-উচ্ছ্বাস

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১৩ রানে ৩ উইকেট পেয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনে ধস নামান। পরে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং ম্যাজিকে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে —ক্রিকইনফো

রাতের ঝুম বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ড ভেজা। তাই খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছিল। কার্ডিফ স্টেডিয়ামের সামনে তখন বড় জটলা! ঠিক জটলা নয়, বাংলাদেশি সমর্থকরা উল্লাস করছিলেন। কারও হাতে লাল-সবুজ পতাকা। কেউবা টেডি টাইগার নিয়ে এসেছেন। সবাই একসঙ্গে উল্লাস করছেন। বাঙালি দর্শকদের এমন উচ্ছ্বাস দেখে আশপাশে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

গতকাল যেন কার্ডিফে ছিল বাঙালিদের ‘ঈদের দিন’! ব্যস্ততাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে কাল কার্ডিফের বাঙালিরা (অধিকাংশ) চলে এসেছিলেন সোফিয়া গার্ডেনে। প্রিয় বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিতে তারা কাল নিয়েছিলেন ছুটি। গ্যালারিতে নিউজিল্যান্ডের দর্শক ছিল না বললেই চলে। যারাও ছিলেন বাঙালিদের উচ্ছ্বাসের ভিড়ে তাদের খুঁজে পাওয়া দায় ছিল। দেশের বাইরে বাংলাদেশ দল গ্যালারি থেকে এমন একতরফা সমর্থন আর কোথাও পেয়েছে কিনা! সার্থকও হয়েছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। শুরুতে ৪ উইকেট পড়ে গেলেও সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর জোড়া সেঞ্চুরিতে অবিস্মরণীয় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমির আশা জাগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।

স্টেডিয়ামের গেটে কথা হয় আহমেদ হোসেনের সঙ্গে, ‘এখানে এসে কী যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমি এখন বাংলাদেশে আছি। একমাত্র খেলা ছাড়া একসঙ্গে এত বাঙালি আমরা একত্রিত হতে পারি না। সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। ভীষণ আনন্দ করছি।’ লন্ডন, বার্মিংহাম কিংবা ম্যানচেস্টারের মতো কার্ডিফে অত বাঙালি নেই। তারপরও তারা ছুটে এসেছিলেন। সিলেটের করিম ১৫ বছর ধরে থাকেন ওয়েলসের এই রাজধানী শহরে। ব্যবসা করেন। এখানে বাড়ি-গাড়ি সবই করেছেন। তার ব্যস্ততার শেষ নেই। কিন্তু সব বাদ নিয়ে কাল ছুটে এসেছিলেন। করিম বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন ছিলাম, তখন দেশের প্রতি ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি। এখন বুঝি। জাতীয় সংগীত যখন গাওয়া হয় তখন আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমার চোখে পানি এসে যায়। আজ আমার হাতে অনেক কাজ ছিল। কিন্তু মনে হয়েছে, বাংলাদেশের খেলা দেখাটাই আমার সবচেয়ে বড় কাজ। গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে চিৎকার করব! এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী আছে!’ রাসেল থাকেন ব্রিস্টলে। কার্ডিফ শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। রেস্টুরেস্টের ব্যবসা করেন। শুক্রবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তার রেস্টুরেন্টে। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে সকালে চলে এসেছেন কার্ডিফে। রাসেল বলেন, ‘আজ আমার রেস্টুরেন্ট বন্ধ। আমার রেস্টুরেন্টের কর্মচারীও সবাই বাঙালি। বাংলাদেশের খেলা বলে আমি সবাইকে ছুটি দিয়েছি। সকালে বাসে আমি কার্ডিফে এসেছি। আমার দুই বন্ধু এসেছে লন্ডন ও ম্যানচেস্টার থেকে।’ শুধু ব্রিটেনের বাঙালি দর্শকরাই নন, কাল কার্ডিফে খেলা দেখতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা থেকেও।

সিডনিতে থাকেন হাসিব হাসান। পেশায় চিকিৎসক। বাংলাদেশের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ দেখতে চলে এসেছেন কার্ডিফে। গতকাল গ্যালারিতেই কথা হয় হাসিবের সঙ্গে, ‘সিডনি থেকে আমরা চার বন্ধু এসেছি এখানে খেলা দেখতে। শুধু এখানে নয়, টাইগারদের খেলা যেখানেই হোক আমরা সেখানেই যাওয়ার চেষ্টা করি। মাঠে এসে চিৎকার করে প্রিয় দেশকে সমর্থন দেওয়ার মজাই আলাদা।’

হাসিব বলেন, ‘আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি সারা বছরই তো কঠোর পরিশ্রম করি। বাংলাদেশকে নিয়ে খুব ভাবার সময় পাই না। তবে যেখানেই খেলা হয় সেখানেই যাওয়ার চেষ্টা করি। এখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’ কার্ডিফে খেলা দেখতে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এসেছেন আহমেদ কামাল। তার হাতে টেডি টাইগার। কামাল বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘হার-জিত বড় বিষয় নয়, এখানে এসে যে প্রিয় বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে পারছি এটাই আমার কাছে অনেক কিছু। আই লাভ বাংলাদেশ! ’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড : ২৬৫/৮ (৫০ ওভার) টেইলর ৬৩, উইলিয়ামসন ৫৭, মোসাদ্দেক ৩/১৩।

বাংলাদেশ :  ২৬৮/৫ (৪৭.২ ওভার) : সাকিব ১১৪, মাহমুদুল্লাহ ১০২*

ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর