শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বড় স্কোরের আক্ষেপ

বড় স্কোরের আক্ষেপ

একেই বলে সৌহার্দ। ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করার পর অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। রোহিত কাল ১২৯ বলে ১২৩ রান করে ভারতের জয়টা সহজ করে দিয়েছেন —এএফপি

সৌম্য সরকার যেন বিরহের কাব্য রচনা করেই চলেছেন! সেমিফাইনালিস্ট একটি দলের ওপেনার হয়েও চার ম্যাচে তার রানের যোগফল মাত্র ৩৪! চার ম্যাচে সৌম্যের স্কোর ২৮, ৩, ৩, ০। একই অবস্থা সাব্বির  রহমানেরও। মহাগুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর পজিশনে নেমে চার ম্যাচেই ব্যর্থ। চার ম্যাচে সাব্বিরের স্কোর ২৪, ৮, ৮, ১৯। শুরুতেই দুই ব্যাটসম্যান আউট হয়ে বাংলাদেশকে ফেলেছিলেন বিপাকে। এজবাস্টনের ব্যাটিং স্বর্গেও ফর্মে ফিরতে পারলেন দুই ব্যাটসম্যান।

গতকাল ৩১ রানে দুই উইকেট হারানোর পরও ১২৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নির্ভরতার প্রতীক তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল কার্ডিফের মতো এবার এজবাস্টনেও রচিত হতে চলেছে আরেকটি মহাকাব্য! তামিম ও মুশফিক পারলেন না। সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর মতো ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তামিম আউট হয়ে গেলেন ৭০ রানে, মুশফিক ফিরে গেছেন ৬১ রানে।

এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুরু থেকেই তামিম অসাধারণ ব্যাটিং করে চলেছেন। প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলেও সেই ইনিংস হয়তো তামিমের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে একটি। কারণ ওই ম্যাচে একপ্রান্ত আগলে রেখে একাই ব্যাটিং করেছেন ড্যাসিং ওপেনার। গতকাল সেঞ্চুরি করার দারুণ সুযোগ ছিল তামিমের সামনে। অসাধারণ ব্যাটিংও করেছিলেন। ভড়কে দিয়েছেন ভারতীয় বোলার হার্দিক পান্ডিয়াকে। ভারতীয় এই পেসারের ৪ ওভার থেকে আসে ৩৪ রান। তামিমের তাণ্ডব সহ্য করতে হয়েছে সেরা স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিনকেও। ২২তম ওভারে অশ্বিনের শেষ তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাকিয়েছিলেন। ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি কার হাতে বল তুলে দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দলের এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়করা অনেক সময় জুয়া খেলেন! বিরাট কোহলিও তাই করলেন- ঝুঁকি নিয়ে বল তুলে দিলেন স্পিনার কেদার যাদবের হাতে। তাতেই বাজিমাৎ। যাদবকে না বুঝে মারতে গিয়েই আউট হয়ে যান তামিম।

কেদার যাদবের স্পিন ফাঁদে আটকা পড়েন আরেক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। ফুল টস বল মারতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। অথচ কাল শুরু থেকে কী দারুণ ছন্দে ছিলেন। ইনিংসের নবম ওভারে কাল ভারতের প্রধান বোলার ভুবনেশ্বর কুমারকে পর পর তিন বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু তামিমের বাইশগজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। তবে তামিম ও মুশফিকের মধ্যে আউট হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

দুই উইকেটে ১৫৪ রান থেকে হঠাৎ বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১৭৯! মাত্র ২৫ রানে সেরা তিন উইকেট নেই। তিন ব্যাটসম্যান তামিম, মুশফিক ও সাকিবকে হারিয়ে যেন খাদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হয়নি। তবে অষ্টম উইকেট জুটি মাশরাফি ও তাসকিন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে কেবল খাদ থেকে টেনে পাড়ে তুলেছেন। সে কারণেই বাংলাদেশের ইনিংসটা ২৬৪ হয়েছে।

মাশরাফি ২৫ বলে করেছেন অপরাজিত ৩০ রান, আর তাসকিন নট আউট ১০। দুই পেসারের ব্যাটিং দেখেই মনে হচ্ছিল, এজবাস্টনের উইকেটে টিকে থাকা কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু বোলারকে উইকেট উপহার দিলে তো আর করার কিছু নেই।

তামিম ও মুশফিকের ব্যাটিং দেখে এক সময় মনে হচ্ছিল তিন শতাধিক রান করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি। ‘তক্তা মার্কা’ উইকেটেও ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। সবচেয়ে বড় ভুলটা বোধ করেছেন তামিম ও মুশফিক দুজনই। কেন না ক্রিকেটে যে ব্যাটসম্যান যখন বড় ইনিংস খেলেন তার দায়িত্বও অনেক বেশি থাকে। তাদের অনেক সতর্ক হয়ে খেলতে হয়। তা পারেননি। দুই জনেই আউট হয়েছেন অখ্যাত এক কেদার যাদবের বলে। অথচ মহারাষ্ট্রের এই স্পিনার আগের ১৮ ম্যাচে নিয়েছিলেন মাত্র ৬ উইকেট। ভারতের বিখ্যাত ব্যাটসম্যানদের কাছে ২৬৫ রান মামুলিই ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। ধাওয়ানের উইকেট হারিয়ে কোহলিরা সহজভাবে জিতেই টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২৬৪/৭, ৫০ ওভার (তামিম ৭০, মুশফিক ৬১, যাদব ২/২২)।

ভারত : ২৬৫/১, ৪০.১ ওভার (রোহিত শর্মা ১২৩*, কোহলি ৯৬*)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর