শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বার বার স্বপ্নভঙ্গ

আসিফ ইকবাল

বার বার স্বপ্নভঙ্গ

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়লো আবার। ফের স্বপ্ন ভঙ্গের কান্নায় কাঁদলো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রম্মপুত্র পাড়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে জায়গা নিয়ে যে স্বপ্নের জন্ম দিয়েছিলেন মাশরাফিরা, বার্মিংহামের এজবাস্টনে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি ও বিরাট কোহলীর দাপুটে ব্যাটিংয়ে কান্নায় রূপ নেয় সেটা। স্বপ্ন ভঙ্গে লেখা হয়নি সোনালী হরফে ইতিহাস। ইতিহাস লিখতে না পারায় বেদনায় যেমন নীল হয়েছেন মাশরাফিরা, ঠিক একইভাবে বড় আসরগুলোতে খেলার চাপ সামাল দিতে না পারার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।  পাঁচ বছর আগে, ২০১২ সালের ২২ মার্চ মিরপুর স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে প্রথম বেদনায় নীল হয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশ। সাকিবকে জড়িয়ে মুশফিকের কান্নার সেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল মুহুর্তে। বিখ্যাত হয়ে গেছে চিরকালীণ। সেই কান্নার ধাক্কা সামলে ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। কষ্টের ওই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের গড়ে নিয়েছিলেন সাকিব. মুশফিক, মাশরাফি, তামিমরা। এগিয়ে যাচ্ছিলেন বীরদর্পে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটই তার প্রমান। ইংল্যান্ডকে ছিটকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন মাশরাফিরা। তখন আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু সেবারও ভারতের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয়। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফিরলেও যে বীজ বপন করে এসেছিল মেলবোর্নে, সেই বীজ এখণ ফলবান বৃক্ষ! শক্ত-পোক্ত তরুণ! টুর্নামেন্ট, বাই লেটারাল সিরিজ মানেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ এখন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনাল খেলা হয়নি ঠিকই। কিন্তু উপরের উঠার সিড়ি পেয়ে যায় টাইগাররা। ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো বাই লেটারাল সিরিজে হারিয়ে নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত করে নেন মাশরাফিরা। সেই শুরু। এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। বীর সেনাপতি হিসেবে দলকে সঠিক পথে নেতৃত্বও দেন মাশরাফি। কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের পরিকল্পনায় মাশরাফি দলকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছেন। টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ১ রানের হারে বিস্মিত হয়েছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-তিন ফরম্যাটেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করার ইঙ্গিত দেয় টাইগাররা। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফিরা এখন ক্রিকেট পরাশক্তিগুলোর একটি। র্যাংকিংয়ের শীর্ষ আটে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড হারিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্ণামেন্টের সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটের। স্বীকারও করেছেন সাকিব, ‘আমি মনে করি খুব ভালো একটি টুর্নামেন্ট খেলেছি। শুরুতে কেউ ভাবেননি আমরা সেমি-ফাইনাল খেলব। কিন্তু খেলেছি। এমন হারে অবশ্য সবাই হতাশ। তারপরও আমরা ভালো করতে চেয়েছিলাম।’ সেমিফাইনালে উঠেও ফাইনার খেলতে না পারায় হতাশ গোটা দেশকে আশ্বস্থ করেছেন ক্রিকেটাররা। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের। আর এই না পারার জন্য মানসিকতার দিকে আঙ্গুল উঠিয়েছেন সাকিব, ‘বড় বড় টুর্ণামেন্টগুলোতে ভালো করতে হলে মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর