রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
তপ্ত ওভালে উত্তপ্ত ফাইনাল আজ

ট্রফি কার পাকিস্তান না ভারতের

ট্রফি কার  পাকিস্তান না ভারতের

ট্রফি হাতে নিয়ে ক্যামেরায় বন্দী হলেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি ও পাকিস্তানের সরফরাজ —এএফপি

হঠাৎ করে প্রচণ্ড গরম ওভালে তথা লন্ডনে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি। মনে হচ্ছে যেন উপমহাদেশের গ্রীষ্মকাল! আর এই তপ্ত ওভালেই আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উত্তপ্ত ফাইনাল! মুখোমুখি চিরবৈরী দুই দল ভারত ও পাকিস্তান।

ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। এই দুই দলের ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা- বাড়তি উত্তেজনা। এর আগে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে মাত্র একবারই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল- ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপে। ১০ বছর পর আবার ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। আজকের এই ফাইনাল নিয়ে দুই দলের ভাবনা দুই রকম। জয়ের জন্য ভীষণ আগ্রাসী ভারত। কিন্তু আবেগে ভাসছেন না ভারতীয় ক্রিকেটাররা। বরং তাদের কাছে মনে হচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা তাদেরই প্রাপ্য। যদি শেষ পর্যন্ত জিততে নাই-ই পারে সে হবে একটা দুর্ঘটনা মাত্র। কোহলি বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে আমরা মোটেও উত্তেজিত নই। এটা আমাদের কাছে অন্য আর ১০টা ম্যাচের মতোই একটি ক্রিকেট ম্যাচ।’

উল্টো চিত্র পাকিস্তান দলে। প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠে রীতিমতো রোমাঞ্চিত দলটি। এই ফাইনাল ছিল পাকিস্তানের কাছে বহু আকাঙ্ক্ষিত। বিশ্বাসই ছিল না, এমন একটি তরুণ দল নিয়ে ফাইনালে উঠতে পারবে। পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই ভীষণ এক্সসাইডেড। সবাই উন্মুখ হয়ে আছে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য। আমাদের দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই তরুণ। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। দেখা যাক কি হয়।’

বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বরাবরই দুই দলের লড়াইটা হয়েছে অসম। এখন পর্যন্ত আইসিসির টুর্নামেন্টে সব মিলে ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। তার মধ্যে পাকিস্তান জিততে পেরেছে মাত্র দুই ম্যাচে। বিশ্বকাপ ও ওয়ার্ল্ড টি-২০তে ভারত কখনো পাকিস্তানের কাছে হারেনি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই দুবার ভারতকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। আইসিসির দ্বিতীয় বৃহত্তর এই টুর্নামেন্টে ভারতও দুবার হারিয়েছে পাকিস্তানকে। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই দলের লড়াইটা সমানে সমান।

তবে এবারের আসরে প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। সে ম্যাচে  কোহলিদের কাছে পাত্তাই পায়নি সরফরাজরা। পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারিয়েছে ভারত। তবে ফাইনালের আগে অতীত কোনো রেকর্ডকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না ভারতের অধিনায়ক। কোহলি বলেন,‘পরিসংখ্যান নিয়ে আমি ভাবি না। প্রতিটি ম্যাচই নতুন। আলাদা পরিকল্পনা করতে হয়। নতুন করে খেলতে হয়। তাই পরিসংখ্যান নিয়ে বসে থেকে লাভ নেই।’ অতীত ইতিহাস নিয়ে ভাবতে চান না পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজও, ‘আগের ম্যাচ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এটা অন্য ম্যাচ। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে হারার পরই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফাইনালেও আমাদের সামর্থ্য দেখিয়ে দিতে চাই।’

ফাইনাল মানেই মহা চাপের ম্যাচ। মাথার ওপর থাকে প্রত্যাশার বোঝা। সেই সঙ্গে এই ফাইনাল হয়ে গেছে দুই দলের জন্য মর্যাদার লড়াই। এমন ম্যাচে হারতে চাইবে না কোনো দলই। ফাইনালে নিজের কৌশল সম্পর্কে সরফরাজ বলেন, ‘আমরা আক্রমণাত্মকই খেলব। যা হয় হবে। পেছনে তাকানোর সময় নেই। যে মোমেন্টাম নিয়ে আমরা  সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছি, ফাইনালেও একই মোমেন্টাম থাকবে।’

চাপের ম্যাচ মানেই বিরাট কোহলির জয় জয়কার। এমন ম্যাচ দারুণ উপভোগ করেন ভারতীয় দলপতি। তবে এবারই প্রথম অধিনায়ক হিসেবে চাপের ম্যাচ খেলতে নামছেন। কিন্তু তারপরেও মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে জানালেন কোহলি। তবে ফাইনালে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে এসে কি করতে হবে তা সবাই জানে। এখানে সবাইকে শুধু বেসিকটা দেখাতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ম্যাচে যে পরিস্থিতির সৃষ্টিই হোক না কেন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। তবে খারাপ পরিস্থিতি সবসময় তৈরি হয় না। যদি সৃষ্টি হয় আমাদের সে রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’ কোহলি বলেন, ‘জিততেই হবে! না জিতলে সব শেষ হয়ে যাবে! এমন করে ভাবার কিছু নেই। তাহলে মনের মধ্যে চাপ তৈরি হবে। তখন স্বাভাবিক পারফরম্যান্সটা প্রদর্শন করা সম্ভব নয়। মনে করতে হবে, এটি একটি ভালো সুযোগ আর সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।’

ইদানীং বিরাট কোহলিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেমিফাইনালে জিতলেও তার লম্বা জিহ্বা বের হওয়ার দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালের আগেও কোহলিকে নিয়ে সরগরম ফেসবুক-টুইটার। পাকিস্তান ভক্তরা বিভিন্ন রকম ট্রল করছে ভারতীয় দলপতিকে নিয়ে। তবে এসব বিষয় মোটেও গায়ে মাখেন না কোহলি, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফানি! আমি সব সময় এসব থেকে দূরে থাকি। তাই কে কি বলছে না বলছে তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনাকে সবার আগে নিজের কাজটা ভালোভাবে করতে হবে!’

সর্বশেষ খবর