সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোহলিকে দাঁতভাঙা জবাব সরফরাজের

কোহলিকে দাঁতভাঙা জবাব সরফরাজের

এমন বাঁধভাঙা উৎসব তো হবেই। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তান। তাই ট্রফি হাতে নিয়ে উৎসবে ভাসছেন দলের ক্রিকেটাররা —এএফপি

মাঝে মধ্যে ওভালের গ্যালারিতে হতাশার সুর বেজে উঠছিল। তখন ব্যাটিং করছিল পাকিস্তান। হঠাৎ ক্যাচ উঠে গেলে সমস্বরে চিৎকার- ‘কাম অন ইন্ডিয়া, কাম অন’! মায়াবি গর্জনে প্রকম্পিত হচ্ছিল ওভাল স্টেডিয়াম! তবে এই গর্জনে যতটা না উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি বোঝা যাচ্ছিল ভারতীয় সমর্থকদের কষ্ট, বেদনা, আর্তনাদ! প্রকাশিত হচ্ছিল দেশের প্রতি তাদের প্রগাঢ় ভালোবাসা। ফিল্ডারের প্রতি দর্শকের সে কী করুণ আবেদন! তবে আউট হওয়ার পর ঠিক উল্টো চিত্র। এমন গর্জন, যেন কান ফেটে যাওয়ার দশা। ছক্কা-চারে ছিল পাকিস্তানি সমর্থকদের চিৎকার! সেই সঙ্গে স্লোগান- ‘পাকিস্তান, জিন্দাবাদ’! তবে এই চিৎকারকে ঠিক গর্জন বলা যায় না। গুটি কয়েক পাকিস্তানি সমর্থকের উল্লাস মাত্র। ওভাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল ভারতীয়দের দখলে। ঠিক দখলে বললে ভুল হবে। সংখ্যায় ছিল ভারতীয় দর্শকরা অনেক বেশি। স্টেডিয়ামের চিত্র দেখে মনে হচ্ছিল ২৬ হাজার দর্শকের মধ্যে কমপক্ষে ২০ হাজার ভারতীয়।

স্টেডিয়ামের বাইরেও জনসমুদ্র। সেখানেও আধিপত্য ভারতের। তবে পাকিস্তানি সমর্থকও কম নয়। প্রিয় দেশের পতাকা হাতে ওভালের চারদিকে প্রদক্ষিণ করছিলেন তারা। একটি টিকিটের জন্য সে কী হাহাকার। ওভাল স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের ঠিক পাশেই বড় গেট। এই গেটের বাইরে থেকেও মাঠের খণ্ডাংশ দেখা দেওয়া। সেখানেই দেখা গেল শত শত দর্শক উঁকি দিচ্ছেন। দর্শকদের দুই গ্রুপ। ভারতের সাফল্যে চিৎকার- ‘জাগো ইন্ডিয়া, জাগো!’ পাকিস্তানের সাফল্যের সমর্থকদের স্লোগান ‘জিতে গা ভাই জিতে গা, পাকিস্তান জিতে গা!’ গতকাল ছিল ছুটির দিন। তাই টিকিট না পেলেও ইউরোপে থাকা সব ভারত-পাকিস্তানি সমর্থক চলে এসেছিলেন ওভালে। এজবাস্টনের মতো ওভালে স্টেডিয়ামে বড় পর্দার খেলার দেখার ব্যবস্থা ছিল না। তারপরেও গ্যালারির দর্শকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গর্জন তুলেছিলেন বাইরের দর্শকরাও।

মাঠের লড়াইয়েও ছিল চরম উত্তাপ। প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। গ্রুপপর্বে দুই মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু সে ম্যাচে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। কোহলিরা জিতেছিল ১২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। ভারতের ৩১৯ রানের জবাবে পাকিস্তান গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৬৪ রানে। কিন্তু গতকালের চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতীয় বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনো করে ফেলেন পাক ব্যাটসম্যানরা। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামান। ১০৬ বলে খেলেন ১১৪ রানের আত্মবিশ্বাসী এক ইনিংস। তিন ছক্কার সঙ্গে ১২টি বাউন্ডারি। আরেক ওপেনার আজহার আলিও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে ফাখারের তুলনায় তিনি কিছুটা ধীরগতিতে রান করেছেন। ৭১ বলে করেছেন ৫৯ রান।

সাইক্লোন ইনিংস খেলেছেন মোহাম্মদ হাফিজ। মাত্র ৩৭ বলে করেছেন ৫৭ রান। গতকাল সুবিধা করতে পারেননি ভারতীয় তিন স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও কেদার যাদব। দারুণ বোলিং করেছেন দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও হার্দিক পান্ডিয়া। কুমার ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৪৪ রান। নিয়েছেন শোয়েব মালিকের উইকেট। পান্ডিয়া ৫৩ রানে শিকার করেছেন ফখরের উইকেট।

রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় ভারত। মাত্র ৬ রানে দুই উইকেট হারায় ভারত। প্রথম দুই ওভারে দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে আউট করে খেলা জমিয়ে তোলেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির।

শেষ পর্যন্ত ভারত ১৫৮ রানে অল আউট হয়ে গেলে পাকিস্তান ১৮০ রানে জিতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তোলে।

সত্যি কথা বলতে কি, পাকিস্তান যে দল নিয়ে খেলতে যায় তাতে অনেকেরই ধারণা ছিল গ্রুপ পর্ব খেলে দেশে ফিরবেন সরফরাজরা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। ১২৪ রানে হেরে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার কাছে ভারত হারলেও কোহলির ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল আবারও তারা ট্রফি জিতবে। কিন্তু সরফরাজের পাকিস্তান তা আর হতে দেয়নি। ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সরফরাজরা কোহলিদের এমন দাঁতভাঙা জবাব দেবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। ম্যাচ শেষে কোহলি স্বীকার করেছেন কাউকে ছোট করে দেখা ঠিক নয়। তার ফল আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তিনি প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে ভূয়সী প্রংশসা করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান : ৩৩৮/৪, (৫০ ওভার), ভারত : ১৫৮/১০ (৩০.৩ ওভার)

সর্বশেষ খবর