মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিপাহি থেকে ক্রিকেট নায়ক

ক্রীড়া ডেস্ক

সিপাহি থেকে ক্রিকেট নায়ক

ফাইনালে সেঞ্চুরির পর ফখর জামান

পাঁচ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন হাসান আলী। তারপরও এবারের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটারের নাম ফকর জামান। একেবারে অচেনা ক্রিকেটার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে অনেকে তার নামই শোনেননি। অথচ এখন তিনি রীতিমতো হিরো বনে গেলেন। এক টুর্নামেন্ট খেলেই ফকরের নাম ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে দলে নেওয়ায় পাকিস্তানের মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় বইয়ে দেয়। সাবেক ক্রিকেটার সাকলাইন মুস্তাক বলেছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কতটা যে আনাড়ি তা প্রমাণ দিল এত বড় টুর্নামেন্টে ফকরের মতো অচেনা ক্রিকেটারকে দলভুক্ত করে। আসলে এমন সমালোচনার যথেষ্ট যুক্তিও ছিল। কেননা পাকিস্তান ছিল এমনিতেই দুর্বল দল। তারা ধরেই নিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপে কোনো ম্যাচ জেতাটাই পাকিস্তানের জন্য কঠিন হবে। এর ওপর ফকরের মতো ক্রিকেটারকে দলভুক্ত করে কীভাবে? সেই ফকর জামান নিজেই প্রমাণ দিলেন কোন যোগ্যতায় তিনি পাকিস্তান দলে খেলার সুযোগ পান। বয়স একেবারে তার কম নয়। ২৮ বছর ছুই ছুই করছে। এই বয়সে জাতীয় দলে ক্রিকেটারদের অভিষেক হয় কমই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিষেক হয় গ্রুপপর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওপেনার হিসেবে ৩১ রানের ইনিংস খেলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫০ রান করেই নজরে আসেন তিনি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত ৫৭। আর এতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেরা একাদশে থাকছেন ফকর। একেতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই তারপর আবার ফাইনাল। ব্যাট-বলে যে আলো ছড়াতে পারবেন তাকে ঘিরেই প্রশংসার ঝড় উঠবে। ফকর জামান সত্যিই স্বার্থক ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমেই ১১৪ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেললেন। ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন। তার সেঞ্চুরিতে মূলত ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। ট্রফি জেতার নায়ক তিনিই। তাই ফাইনালে ম্যাচসেরা পুরস্কারও পেয়েছেন। ম্যাচসেরা পুরস্কার হাতে নেওয়ার পর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ফকর। জীবনে এমন একটা দিন তার আসবে স্বপ্নেও ভাবেননি। ফকর এখন বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচিত নাম। অথচ শৈশব থেকেই ফকরকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। অভাবী ঘরের ছেলে দুবেলা ঠিকমতো খেতেও পারতো না। অভাব দূর করতেই পাকিস্তান নৌবাহিনীর সিপাহী পদে যোগ দেন তিনি। সেখানে থাকতেই ক্রিকেট খেলতেন। কোচ ছিলেন আজাবখান। মূলত তারই অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটার বনে যান ফকর। আজাবই জানালেন, ক্রিকেটের প্রতি ওর আগ্রহ ছিল না। বলত এসব বড়লোকীময় করে কাজ নেই। আমাকে চাকরি করতে হবে না হলে পরিবারের সবাই না খেয়ে মরবে। আজাব নাছোড় বান্দা, ফকরকে বললেন, লেগে থাক, দেখবে একদিন গোটা বিশ্ব তোকে নিয়ে নাচানাচি করবে। সত্যিই হলো আজাবের কথা। সামান্য সিপাই থেকে ফকর এখন ক্রিকেটের মহানায়ক। অথচ এই ফকরকে নিয়ে বর্তমান দলের অনেকেই হাসি-তামাশায় মেতেছিলেন। কারও কারও ধারণা ছিল ফকর যে লন্ডন যাচ্ছে এটাই তার ভাগ্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর