শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

পেসারদের কঠিন পরীক্ষা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পেসারদের কঠিন পরীক্ষা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে

ইংলিশ কন্ডিশন পেসারদের স্বর্গ— ক্রিকেটবিশ্বে বহুল প্রচলিত মিথ। বল সাঁই সাঁই করে এদিক-ওদিক যায়। বলের বাউন্সও বেশি থাকে। সাধারণ গতির বোলারদের খেলতে ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হতো জাঁদরেল ব্যাটসম্যানদের। এমন ধারণাই ছিল এত দিন। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বরং ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে ইংল্যান্ডের উইকেটগুলোতে। ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করতে গিয়ে কতটা ঘাম ছোটাতে হয়েছে, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল, তাসকিনরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। অথচ প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পেরেছে সাকুল্যে একবার। পেসারদের পারফরম্যান্স ছিল চৈত্রে বৃষ্টি পড়ার মতো! চার ম্যাচে বাংলাদেশের চার পেসার মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল ও তাসকিনের উইকেট সংখ্যা মাত্র ৭টি! ভাবা যায়। এমন পারফরম্যান্স নিয়েই টাইগার পেসাররা ঘরের মাটিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আতিথেয়তা দেবে অস্ট্রেলিয়াকে। যদিও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে বধ করতে স্পিন উইকেট বানানোরই পরিকল্পনা থাকবে টিম ম্যানেজমেন্টের, তারপরও স্টিভ স্মিথদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে পেসারদের।

টেস্ট খেলেন না বলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেখা যাবে না মাশরাফিকে। অথচ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার তিনি। খেলেছেন ৩৬ টেস্ট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৪ ম্যাচে ২ উইকেট পেলেও সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন মাশরাফি। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৪.৭০। ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা মাত্র একটি এবং ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৬.৩১! তাসকিনের উইকেট ২টি হলেও স্ট্রাইক রেট ৬.১৩। রুবেলের উইকেট ২টি, স্ট্রাইক রেট ৬.৩৬। মাশরাফি খেললেও বাংলাদেশের পেসারদের মুল স্ট্রাইক বোলার মুস্তাফিজ। অথচ ইনজুরি থেকে খেলায় ফিরে নখদন্তহীন হয়ে পড়েছেন মুস্তাফিজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুস্তাফিজের সফল না হওয়ার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবি পরিচালক ও অধুনা কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে মুস্তাফিজ অফ লাইনে বোলিং করেছেন। ফলে তার বলে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ ছাড়া ইংলিশ উইকেট ব্যাটসম্যানদের সহায়ক ছিল বলে তার বোলিং কার্যকর হয়নি। শুধু মুস্তাফিজ নন, অন্য পেসাররাও নির্দিষ্ট লাইন-লেন্থে বোলিং করতে পারেননি। তাই ব্যর্থ হয়েছেন।’ ন্যাশনাল ম্যানেজার, বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা ভালো করেছেন। পেসাররা ভালো না করার কারণ হিসেবে মনে হয়েছে মুস্তাফিজের অফ ফর্ম। কারণ গত দুই বছর বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকের সাফল্যের পুরোটাই নির্ভর করেছে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সের ওপর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সে পারেনি বলে অন্যদের উপর চাপটা পড়েছে।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুটি টেস্ট খেলবে। উইকেট হয় তো নিজেদের সুবিধায় স্পিন সহায়ক বানানো হবে। ইংল্যান্ডকে যেমন স্পিন উইকেট বানিয়ে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সাকিব, মোসাদ্দেক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুলদের ঘূর্ণির কথা মাথায় রেখেই হয় তো স্পিন উইকেট বানানো হবে। তারপরও পেসারদের আক্রমণ শানাতেই হবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া চড়াও হবে জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সদের গতি, বাউন্স ও সুইং দিয়ে। তাই ডেভিড ওয়ার্নার, ওসমান খাজা, স্টিভ স্মিথদের নাকাল করতে শুরুতেই আঘাত হানতে হবে পেসারদের। কিন্তু মাশরাফিহীন অনভিজ্ঞ পেস অ্যাটাক কতটা ধারালো হবে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। মুস্তাফিজের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা মাত্র ৪টি। দেশের সবচেয়ে গতিশীল পেসার তাসকিন খেলেছেন ৪টি, রুবেল ২৪, শফিউল ৯, কামরুল ইসলাম রাব্বি ৫, আল-আমিন ৬, শুভাশিস রায় ৩টি। এই সাত পেসারের মিলিত উইকেট ৫৫ টেস্টে ৮৫টি। মাশরাফি ৩৬ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ৭৮টি। পেসারদের অসি ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হলেও দেশের বোলিং অ্যাটাককে নেতৃত্ব দেবেন স্পিনাররা, মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কঠিন লড়াই করতে হবে আমাদের পেস বোলারদের। তবে আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়ার জন্য স্পিন উইকেটই বানানো হবে। সেখানে পেসারদের ভূমিকা কেমন থাকবে, সেটা নিয়ে ভাবার বিষয় আছে। তারপরও দলের ভালো সূচনা এনে দিতে হবে পেসারদের। যদিও আমাদের বোলিং অ্যাটাক হয় তো স্পিননির্ভরই হবে।’

২৭-৩১ আগস্ট প্রথম টেস্ট এবং ৪-৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট। দুই টেস্টের জন্য ২৯ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেখানে পেসার রাখা হয়েছে মাশরাফিসহ ১০ জন। যদিও এদের মধ্য থেকে কাদের রাখা হবে, সেটাই হচ্ছে এখন বড় প্রশ্ন।       

সর্বশেষ খবর