রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার ফুটবলারদের অগ্নিপরীক্ষা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এবার ফুটবলারদের অগ্নিপরীক্ষা

পেশাদার ফুটবল লিগে ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র শিরোপা জয় করেছে। তিন দলের এ কৃতিত্বের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বিদেশি ফুটবলারদের —ফাইলফটো

১২ জুন পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাবগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে লিগের পর্দা ওঠার কথা। আগের লিগ আর এবারের লিগের পার্থক্য থাকছে অন্যরকম। বিশেষ করে স্থানীয় ফুটবলাররা বেশ চাপের মধ্যে থাকবে। কেননা এতদিন প্রতিটি ক্লাবে চারজন করে বিদেশি ফুটবলার খেলতে পারত। এবার পারবে মাত্র দুজন। ২০০৭-২০০৮ মৌসুম থেকে বাংলাদেশে পেশাদার লিগের যাত্রা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি আসরে বিদেশিদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। আবাহনী সর্বাচ্চ ৫, শেখ জামাল ৩, শেখ রাসেল একবার করে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ট্রফি জেতার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বিদেশি ফুটবলারদের। ম্যাচে শতকরা ৭০ ভাগই গোল করেন বিদেশি ফুটবলাররা। স্থানীয় ফুটবলাররা সেভাবে লিগে জ্বলে উঠতে পারেননি।

৭০ ও ৮০ দশকে ঢাকা ফুটবলে যে উঁচুমানের বিদেশি ফুটবলারদের দেখা মিলত পেশাদার লিগে সেই মানের খেলোয়াড়ের দেখা নেই। অধিকাংশ দলেই আফ্রিকান ফুটবলার। তাদেরকে ভিড়াতেই দল অস্থির হয়ে পড়ত। এ নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলারদের আক্ষেপের শেষ ছিল না। আসলাম ও কায়সার হামিদের মতো খ্যাতনামা ফুটবলার বলেছিলেন আগে আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে খেলা শিখতাম। এখন যে মানের বিদেশিরা খেলছে তাদের কাছে শিখবে কি বরং দলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। কথাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ৮০ দশকে বিশেষ করে আবাহনী ও মোহামেডান যে মানের বিদেশি ফুটবলার মাঠে নামাত তাদের পারফরম্যান্স দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। করিম মোহাম্মদ, সামির সাকি এই দুজন ১৯৮৬ সালে ইরাকের পক্ষে বিশ্বকাপ খেলেন। আবাহনী তাদেরই উড়িয়ে আনে ১৯৮৭ সালে। মোহামেডানে খেলতেন নালজেগার এমেকা বিজন তাহেরীদের মতো বিদেশি ফুটবলার। জুকভ, কাজাকভ, পাকির আলী কিংবা গণেশ থাপাও মন জয় করেছেন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যান রহিমভ। ১৯৯২ সালে মোহামেডানে পুরো মৌসুম খেলেননি। অথচ যে কটা ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন তাতে তার পায়ে জাদুই দেখা গিয়েছিল। প্রথম খেলতে নেমেই টানা তিন ম্যাচে হ্যাটিট্রক করেন। লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন। এদের খেলা দেখে স্থানীয়দের পারফরম্যান্সেরও উন্নতি ঘটে।

পেশাদার লিগে একেবারে মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলারের দেখাই মেলেনি তাও বলাটা ভুল হবে। শেখ রাসেলে সনি নর্দে যিনি পরবর্তীতে শেখ জামালে খেলেন। তার পারফরম্যান্সের জুড়ি ছিল না। আইএফ শিল্ডে তার খেলা দেখেই কলকাতার মোহনবাগান দলে টানে। ওয়েড সনের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। উল্লেখ করার মতো মাত্র দুজন থাকলেও লিগে কিন্তু মাঠ জুড়ে বিদেশিদেরই দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয়দের পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই। স্বাধীনতার পর ঢাকা লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা সালাম মুর্শেদী। ৩৪ বছরে তার রেকর্ডটি কেউ ভাঙতে পারেননি। এখন অবস্থা এতটা খারাপ যে বাংলাদেশের কোনো ফুটবলার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন তা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে এনামুলের পর স্থানীয় ফুটবলাররা সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারেননি।

পারফরম্যান্সের চিত্রই বলে দিচ্ছে লিগে স্থানীয়দের অসহায়ত্বের চেহারার কথা। লিগ কমিটি দুইজন করে বিদেশির কোটা নির্ধারণের পর অনেক ক্লাবই তা মেনে নিতে পারেনি। কেউ কেউ লিগ কমিটির কাছে অনুরোধও রেখেছিল। এবার অন্তত চারজন করে বিদেশি ফুটবলার মাঠে নামানোর অনুমতি দেওয়া হোক। স্থানীয়দের ওপর আস্থা নেই বলেতো তারা বিদেশির কোটা কমানোর সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না। তাই বলে লোকাল ফুটবলারদের পারিশ্রমিক কিন্তু কমেনি। তুলনা করলে বরং আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কয়েকজন পরিশ্রম করে খেলে পারিশ্রমিকটা হালাল করলেও বাকিরা যেন মাঠে নেমেই দায়িত্ব পালন করছেন। এবার কি করবেন? মাত্র দুইজন করে বিদেশি খেলবে। মূল চ্যালেঞ্জটাতো নিতে হবে স্থানীয়দের। পারবেন কি চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দল ও দর্শকদের মন জয় করতে? লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেছেন, দেশের ফুটবলের কথা ভেবেই বিদেশির কোটা কমানো হয়েছে। সালামের কথায় হয়তো যুক্তি আছে। চারজন করে বিদেশি খেলায় অনেক দেশি ফুটবলারের আশ্রয় হতো সাইডলাইনে। এ থেকে নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলছিল না। এবারও কি তাহলে লিগে এমন কোনো খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলবে যাকে আমরা আগামীর আসলাম, কায়সার, মোনেম মুন্না বা সাব্বির বলতে পারব। সত্যিই এবার লিগটা হবে স্থানীয়দের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।

সর্বশেষ খবর