রবিবার, ২৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমির যেন আরেক পাওলো রসি

ক্রীড়া ডেস্ক

আমির যেন আরেক পাওলো রসি

মানুষের ভাগ্য কখন কি ঘটে বলা মুশকিল। কিছুদিন আগেও পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরের গ্রামের লোকরা তাকে বাঁকা চোখে দেখত। ফিক্সিংয়ে জড়ানোর কারণে আমিরের সঙ্গে অনেকে কথাও বলতেন না। এতটা খারাপ অবস্থা ছিল যে, লজ্জা এড়াতে রাওয়াল পিন্ডির বুজিয়াল গ্রাম ছেড়ে আমিরকে লাহোরে চলে আসতে হয়। সেখানেও রক্ষা পাননি। পথে ঘাটে আমিরের দেখা মিললেই চোর চোর বলে তিরস্কার করা হতো। সাত বছর আগে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আমিরকে। পরে শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও তিরস্কার তার পিছু ছাড়েনি। সাধারণ লোকদের কথা বাদই দিলাম। পাকিস্তানের অনেক খ্যাতনামা ক্রিকেটার মিডিয়াকে বলেছেন, আমির পাকিস্তানের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তাকে যেন পাকিস্তান দলে কোনো অবস্থায় ফেরানো না হয়। তাহলে দলে শৃঙ্খলা থাকবে না।

সত্যি কথা বলতে কি আমিরকে ঘিরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অনেকেরই আপত্তি ছিল। কিন্তু পাকিস্তান দলের চরম বিপর্যয়ের কথা  ভেবে জাতীয় দলে ফেরানো হয় আমিরকে। আমির ফিরলেও অনেকের সংশয় ছিল বোলিংয়ে দাপট দেখাতে পারবে কি না। অল্পদিনেই তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আমির জাতীয় দলের ফেরার পর তার কু-কীর্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। কথাও দেন তিনি পাকিস্তানকে এমন কিছু দিতে চান যা দেখে পুরো দেশ প্রশংসায় নাচবে। মিথ্যা বলেননি এই পেসার। গোটা পাকিস্তান এখন আমিরের গুণগানই গাইছে। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের পেছনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ সেঞ্চুরি করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার পান ফখর জামান। ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হন হাসান আলি।

ফাইনালে আমিরের হাতে ব্যক্তিগত কোনো পুরস্কার উঠেনি। এরপরও অনেকে বলেছেন আমিরের জাদুকরি বোলিংই পাকিস্তানকে স্বপ্নের ট্রফি এনে দিয়েছে। ৩৩৮ রান করার পরও অনেকে বলেছিলেন ভারতের যে ব্যাটিং লাইনআপ তাতে এই রান টপকানো কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু সেই ভারত কিনা থেমে গেল মাত্র ১৫৮ রানে। ভাবা যায় ফাইনালের মতো টেনশনপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের ১৮০ রানের জয়। এর পেছনে বড় ভূমিকা কার? নিঃসন্দেহে আমিরের নামটিই উচ্চারিত হবে। কারণ শুরুতেই তিনি ভারতের ব্যাটিং লাইনে ধস্ নামিয়েছেন। ভারতের ১ রানের মাথায় রোহিত শর্মা, ৬ রানে কোহলি, আর ৩৩ রানে ধাওয়ানকে সাজঘরে ফেরেত পাাঠান। এখানেই ভেঙে যায় ভারতের মনোবল।

তিন বিখ্যাত ব্যাটসম্যান যদি এভাবে ফেরত না যেতেন তাহলে ভারত কি এতটা সহজভাবে হেরে যেত। তিনজনের একজন টিকে গেলেই ম্যাচের ফল অন্যরকমই হতে পারতো। ফাইনালে আমির প্রমাণ দিয়েছেন তিনি পাকিস্তানকে বড় কিছু উপহার দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারা ম্যাচে জয়ের পেছনেও আমিরের ভূমিকা কম নয়। ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সরফরাজের সঙ্গে জুটি গড়ে ৭৫ রান তোলেন। আর এতেই পাকিস্তানের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়।

ফিক্সিংয়ের কারণে কিছুদিন জেলও খাটতে হয়েছিল আমিরকে। অর্থাৎ কয়েদির তালিকায় নাম আছে তার। ১৯৮২ সালে কয়েদি পাওলো রসি ফুটবলে ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতান। আর আমির জেতালেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কিসের তিরস্কার, সব ভুলে গোটা পাকিস্তানে চলছে আমিরের গুণকীর্তন। এক ট্রফিই আমিরের পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আমিরের ভাইরা যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই পাচ্ছেন সম্মান। অথচ  কয়েকদিন আগেও তারা তিরস্কারের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে সাহস পেতেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর