বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জোয়াকিম লো যেন জার্মানির জাদুর কাঠি

ক্রীড়া ডেস্ক

জোয়াকিম লো যেন জার্মানির জাদুর কাঠি

ফুটবল ইতিহাসের এক অন্যতম দল জার্মানি। ফুটবল নিয়ে রীতিমতো বিজ্ঞানের মতো গবেষণা করে জার্মানরা। সম্ভবত এ কারণেই পৃথিবীর যে কোন ফুটবল পরাশক্তি জার্মানির কাছে এসেই নতি স্বীকার করে। যুগের পর যুগ ধরে দলটা দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসছে। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ সবখানেই তাদের আধিপত্য। জার্মানদের এই আধিপত্যের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে আসছেন সফল কোচেরা। অটো নার্জ থেকে শুরু। জোয়াকিম লো পর্যন্ত কত সফল কোচদেরই না দেখা পেয়েছে জার্মানি। তবে অতীতের সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন জোয়াকিম লো। ম্যাচ জয়ের দিক থেকে তো বটেই টুর্নামেন্ট জয়ের দিক থেকেও।

জোয়াকিম লো ফুটবলার হিসেবে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। সত্তর আর আশির দশকে তিনি ফ্রেইবার্গ, স্টুটগার্ট আর ফ্র্যাঙ্কফুর্টের মতো দলে খেলেছেন। পশ্চিম জার্মানির জার্সিতে ৪টা আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন। তবে খুব একটা নাম করতে পারেননি কখনোই। অবশ্য ফ্রেইবার্গের জার্সিতে তার বেশ কিছু গোলের রেকর্ড আছে। ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন তিনি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। অবশ্য ফুটবল ছেড়েও ছাড়েননি তিনি। স্টুটগার্ট, অস্ট্রিয়া ভিয়েন আর তুরস্কের ফেনারবাখের মতো বিখ্যাত ক্লাবে কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সফলও হয়েছেন। জার্মান কাপ জিতেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ক্লিন্সম্যানের সহকারী হিসেবে। জার্মান ফুটবল তখন নতুন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর জার্মানির একমাত্র সফলতা ছিল ১৯৯৬ সালে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল জার্মানরা। এই ধারা থেকে বের হতেই নতুন এমন একজনকে খুঁজছিল জার্মানরা যার হাত ধরে সফল হতে পারবে দলটা। ২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার পর ক্লিন্সম্যানের সহকারী জোয়াকিম লোর কাঁধেই দায়িত্ব তুলে দেয়া জার্মানি। দুই বছর পরে এই লোই ইউরো কাপে জার্মানিকে ফাইনালে নিয়ে যান। অবশ্য স্পেনের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় তারা। ২০১০ বিশ্বকাপেও সেমিফাইনাল খেলে জার্মানি। তবে জোয়াকিম লো ধীরে ধীরে দলটাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যান যেখানে কেবল ব্রাজিলের মতো দলের অবস্থান ছিল। ২০১২ ইউরোতেও ব্যর্থ হয় তার দল। তবে ২০১৪ সালে সম্পূর্ণ তরুণ এক দল নিয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে জার্মানরা। জোয়াকিম লো জার্মানির ইতিহাসের এক অন্যতম কোচে পরিণত হন। তিনি ছাড়িয়ে যান অতীতের সবাইকে। ১৫২ ম্যাচ খেলে তার অধীনে ১০২ ম্যাচ জয় করেছে জার্মানি। এর আগে সেপ হারবার্গারের অধীনে ১৬৭ ম্যাচ খেলে ৯৪ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছিল জার্মানির। জোয়াকিম লো অতীতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর প্রতি নিয়তই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। সদ্য তার অধীনেই জার্মানি সম্পূর্ণ তরুণ এক দল নিয়ে প্রথমবারের মতো জয় করল ফিফা কনফেডারেশনস কাপ। কে জানে, জোয়াকিম লো হয়ত আরও একবার বিশ্বকাপই উপহার দিবেন জার্মানিকে! তিনি তো এখন জার্মানির জাদুর কাঠিই। অচেনা-অজানা দল নিয়ে বিশ্ব জয়ের মতো গৌরব কেবল তারই আছে। তার হাতে পরলেই যেন তরুণ ফুটবলাররা কেমন তারকা হয়ে উঠেন। জোয়াকিম লো নামক জাদুর কাঠির স্পর্শে জার্মানরা আরও কত কী অর্জন করবে কে জানে!

সর্বশেষ খবর