বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাফে থাকবেন তো অ্যান্ডু

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাফে থাকবেন তো অ্যান্ডু

ফুটবলে অন্ধকার কাটছেই না। মান উন্নয়নে বার বার কোচ পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু অন্ধকার থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ফুটবল। ভুটানের কাছে হারের পরতো অনেকে বাংলাদেশের ফুটবলকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু যে খেলা বাংলার মানুষের রক্তে মিশে গেছে তার কি মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে যে অধঃপতন নেমে এসেছে তা কি বেঁচে থাকার মতো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। জয় নয়, ড্র করাটা এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, ফিফা বা এএফসি স্বীকৃত বড় টুর্নামেন্টের কথা বাদই দিলাম। শিরোপা জেতাটা ভারতের যেখানে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সেখানে কিনা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। টানা তিন মৌসুমে গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।

এশিয়ান প্রাক বাছাইপর্বে ভুটানের কাছে হারায় পুরো দেশ যখন লজ্জায় ক্ষোভ সামাল দিতে পারছিল না। বাফুফে কর্মকর্তারা তখন বলছিলেন ফুটবলে এমন ফল হতেই পারে। কোনো কোনো কর্মকর্তা ১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের তুলনা করেছিলেন। ক্যামেরুন আর নেপালকে তারা এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিলেন। কর্মকর্তাদের এই ফুটবল জ্ঞান দেখে সবাই অবাক হয়ে যান। যাক তারপরও ধরে নিলাম ভুটানের কাছে হারটা ছিল একটা দুর্ঘটনা। একটা দুর্ঘটনা হলে তো শিক্ষা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কি তা মাঠে সামাল দিতে পারছে?

ফুটবলের অচল চাকা সচল করতে বাফুফের কর্মকর্তারা নাকি ঘুম হারাম করে ফেলছেন। এত চিন্তা ও পরিশ্রম করছেন তার নমুনা তো চোখে পড়ছে না। অবশ্য একটা ক্ষেত্রে ঠিকই পারদর্শিতার ছাপ রাখছে বাফুফে। তা হলো কোচ বদল। অন্য সব হিসাব বাদই দিলাম কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতির আসনে বসার পর কত কোচ এলো আর গেল। কই তাতে করে কি ফুটবলে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে? বিদেশি কোচের ক্ষেত্রে বাফুফের মন্তব্য সত্যিকারে হাস্যকর। যাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কর্মকর্তারা বলছেন এমন উঁচুমানের কোচ পেয়ে তারা সন্তুষ্ট। নেদারল্যান্ডের ডি ক্রুইফকে পেয়ে তো খুশিতে গদ গদ ছিলেন সালাউদ্দিন। মিডিয়ার সামনে জোর গলায় বলেছিলেন এমন হাইপ্রোফাইলের কোচ যে পাওয়া গেছে এটাই আমাদের ভাগ্য। সেই ক্রুইফ কি বাংলাদেশকে কিছু দিতে পেরেছেন। বরং তিরসৃ্কত হয়ে বিদায় নিয়েছেন।

এরপর ইতালিয়ান কোচ। তিনিও ব্যর্থ হয়ে চলে গেলেন। মাঝে অবশ্য স্থানীয় কোচ জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেন। হতাশা কাটাতে ফুটবলে ফের বিদেশি কোচ আনা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ডু ওর্ড এখন জাতীয় দলের নতুন কোচ। তবে জাতীয় দলের সামনে কোনো ব্যস্ততা নেই। তাই অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অ্যান্ডু যে বয়সভিত্তিক দলে দায়িত্ব পালনে রাজি হয়েছে এ জন্য তিনি ধন্যবাদ পেতেই পারেন। কারণ পেশাদারিত্ব যুগে জাতীয় দলের কোচ হওয়ার পর কেউ বাড়তি দায়িত্ব নিতে চান না। সেদিক থেকে অ্যান্ডু আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার প্রশিক্ষণেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল এএফসি কাপ বাছাইপর্ব খেলবে।

ফিলিস্তিনে লড়বে বাংলাদেশের যুবারা। গ্রুপে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকায় অ্যান্ডুর শিষ্যদের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোনো ম্যাচ ড্র করলেই তা হবে বড় প্রাপ্তি। কোচ অ্যান্ডু ভালোমতোই জানেন ফিলিস্তিনে কি হবে? যাওয়ার আগে শিষ্যদের ঝালাই করতে মঙ্গলবার কাঠমান্ডুতে শিষ্যদের প্রীতিম্যাচে নামান। নেপাল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। নেপাল সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। আগামীকাল আবার কাতারের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ খেলবে। কাতার আরও শক্তিশালী দল। ২০২২ সালে আয়োজক হওয়ায় দেশটি সরাসরি স্বপ্নের বিশ্বকাপে খেলবে। সেই লক্ষ্যে এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সুতরাং কালকের খেলায় কাতারে অনূর্ধ্ব-২৩ দল যদি মাঠে নামে তাহলে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

অ্যান্ডু দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে একটা কথাই বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। হাতে যেহেতু সময় আছে তাই প্রস্তুতিটা সেভাবে করতে চান তিনি। বুঝাই যাচ্ছে সাফে তিনি তরুণদেরই প্রাধান্য দেবেন। বাংলাদেশে হবে এই আয়োজন। ঘরের মাঠ ও গ্যালারি ভরা সমর্থনের সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে চান। অ্যান্ডুর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিতে কি লেখা আছে তা শুধু বাফুফেই জানে। তবে সাফ পর্যন্ত তিনি যে থাকছেন এটা বাফুফের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন। তারা তো অনেক কিছুই বলেন, কিন্তু রক্ষা করতে পারেন কি?

নেপালের কাছে হেরে যাওয়ার পর অনেকে অ্যান্ডুর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করেন বাফুফে থেকে যাই বলা হোক না কেন? অ্যান্ডু সাফে কোচ থাকবেন কিনা তা নির্ভর করছে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের পারফরম্যান্সের ওপর। ফিলিস্তিন, জর্দান ও তাজিকিস্তান প্রতিপক্ষ হিসেবে অনেক শক্তিশালী। এখানে চমক না দেখালে তিন ম্যাচে হারাটা নিশ্চিতই বলা যায়।

হারুক এ নিয়ে কেউ আপত্তি তুলবে না। কিন্তু বাংলাদেশ যদি গোলের বন্যায় ভেসে যায় তখনতো আবার সমালোচনায় ভাসবে বাফুফে। তা সামাল দেওয়ার একটাই মাত্র উপায় কোচ পরিবর্তন। যা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আগামী বছর মে মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। তাও নিশ্চিত নয়। তাই ফিলিস্তিনে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলে অ্যান্ডুকে বাফুফে বিদায় জানালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এটা ফেডারেশনের নীতিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলে কখনো কেউ দীর্ঘ সময়ে কোচের দায়িত্ব পালন করেননি। অনেকে তাই বলেন এ জন্যই ফুটবলে উন্নয়ন ঘটছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর