রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নৌকাবাইচ ঘিরে উৎসবের ঢেউ

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নৌকাবাইচ ঘিরে উৎসবের ঢেউ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদীমাতৃক আমাদের দেশ। আবহমানকাল ধরেই আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে লোকজ অনুষ্ঠানাদি। ভাটি অঞ্চল-খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন লোকজ ক্রীড়ার মধ্যে বেশির ভাগই তিতাস নদীকে ঘিরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমনই একটি লোকজ ক্রীড়ার নাম নৌকাবাইচ। যুগ যুগ ধরে এ এলাকার মানুষকে বিনোদন দিয়ে আসছে নৌকাবাইচ। ঐতিহ্যবাহী তিতাস নদীতে নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠেছিল পুরো শহর ও এর আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এর আগে পাক আমলে উৎসবমুখর পরিবেশে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হতো। মহা-ধুমধামে আতশবাজি ফুটিয়ে উদযাপিত হতো নৌকাবাইচ। সপ্তাহ ধরে চলত নানা আসর। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ যখন হারিয়ে যাওয়ার পথে ঠিক তখনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিতাস নদীতে হয়ে গেল নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে শহরের মানুষের মধ্যে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রচার-প্রচারণার কোনো কমতি ছিল না। মাইকিং, পোস্টারিং, স্থানীয় ডিস চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল নৌকাবাইচের অনুষ্ঠানমালা। গত শুক্রবার বিকালে জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৫টি দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং-বেরঙের বাহারি পোশাক পরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালি গান আর পানিতে বৈঠা ফেলার শব্দ যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল তিতাস নদী। উৎসব-আমেজে নৌকাবাইচ দেখতে তিতাস পাড়ে ভিড় জমায় জেলা ও আশপাশ উপজেলা এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ। নীরব নিস্তব্দ তিতাস পাড় হয়ে উঠে হাজার হাজার মানুষের কোলাহলে মুখরিত। কিশোর-কিশোরী, নবীন-প্রবীণ সবাই মিলে তিতাসের বুকে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠেন। এই আয়োজন দর্শক যেমন উৎসব-আমেজে উপভোগ করেছে তেমনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে প্রতিযোগীরাও খুশি। তাদের মতে, পুরস্কার মুখ্য বিষয় নয়, ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ এলাকায়। এ নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে শহরে দুুপুরের পর হাতে গোনা কয়েকটি রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।

শহর ফাঁকা হয়ে পড়ে। সাপ্তাহিক শুক্রবার হওয়ায় শহরের বিভিন্ন শপিং সেন্টারগুলো বন্ধ ছিল। এ জন্য আরও ফাঁকা হয়ে পড়ে পুরো শহর। শহরের পূর্ব পাশে অবস্থিত তিতাস নদীর শিমরাইলকান্দি শ্মশানঘাট থেকে মেড্ডার কালাগাজীর মাজার এলাকা পর্যন্ত মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল নৌকাবাইচ দেখার জন্য। কেউ কেউ ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার টাঙিয়ে নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। অনেকে আবার নৌকায় গান শোনার আয়োজন করে। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের শাপলা বয়েজ ক্লাবের নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে বিজয়নগর উপজেলার ফারুক মিয়ার নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে একই উপজেলার হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম ভূইয়ার নৌকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর