বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রীড়াঙ্গনে তারকাদের শাস্তি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়াঙ্গনে তারকাদের শাস্তি

ক্রীড়াঙ্গনে শৃঙ্খলা ভঙ্গে ক্রীড়াবিদদের শাস্তি বা নিষিদ্ধের ঘটনা কম ঘটেনি। কিন্তু শাস্তির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে এমন ঘটনা কমই ঘটেছে। দেশের ফুটবলে জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। ১৯৭৮ সালের ঘটনা, এশিয়ান গেমসে সেবারই বাংলাদেশ প্রথম ফুটবল ইভেন্টে অংশ নেয়। বাফুফে প্রথমে জাতীয় দলের অধিনায়ক করেন ঢাকা আবাহনীর মনোয়ার হোসেন নান্নুকে। নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নান্নুর ছিল। এ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফুটবল দল এশিয়ান গেমসে মাঠে নামবে এ ব্যাপারে ক্রীড়ামোদীরা নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাফুফে হঠাত্ করে সিদ্ধান্ত বদল করে। নান্নুর পরিবর্তে অধিনায়ক করা হয় ঢাকা মোহামেডানের গোলরক্ষক শহিদুর রহমান শান্টুকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্টুকেই সেরা গোলরক্ষক বলা যায়। সেই সময়ে শান্টুর পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। মোহামেডানকে অপরাজিত লিগ জয়ের পেছনে তার অবদান ছিল। সুতরাং জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার মতো সব গুণাবলিই শান্টুর ভিতরে ছিল।

সমস্যা দেখা দেয় প্রথমে নান্নুকে অধিনায়ক করে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করা হলো কেন? বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আবাহনী। জাতীয় দলে আবাহনীর যেসব খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছিলেন তারা গেমস বয়কট করেন। অর্থাত্ এশিয়ান গেমসে আবাহনীর কোনো ফুটবলার ছিলেন না। বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি তত্কালীন বাফুফের কমিটি। আবাহনীর সাত ফুটবলারকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করেছিল। এই চিন্তা পর্যন্তই, সিদ্ধান্ত আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। কারণ সাতজনই ছিলেন তারকা ফুটবলার। তাদের শাস্তি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। এ ভেবেই পরবর্তীতে ফেডারেশন বেশি দূর আর এগোয়নি। তারা শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও অনেক তারকা ফুটবলার বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন।

১৯৭৯ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে তারকা ফুটবলার এনায়েতের কাণ্ডজ্ঞান দেখে ক্রীড়ামোদীরা অবাক হয়ে যান। সেবার লিগের প্রথম পর্ব ম্যাচে মুখোমুখি হয় মোহামেডান ও ভিক্টোরিয়া। এনায়েত সাদা-কালো জার্সি চড়িয়ে মাঠে নামেন। ম্যাচে মোহামেডান ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। এনায়েত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে অবৈধভাবে বাধা দিলে রেফারি দলিল খান ফাউল ধরেন। এতে করে এনায়েত ক্ষুব্ধ হয়ে দলিল খানকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। আঘাত এতটা গুরুতর ছিল যে দলিল খানের নাক থেকে অঝোরে রক্ত ঝরতে থাকে। তিনি আর খেলাই পরিচালনা করতে পারেননি। ম্যাচ হয়ে যায় পণ্ড। পরবর্তীতে বাফুফে জরুরি সভা ডেকে এনায়েতকে সামরিক নিষিদ্ধ করে। অথচ এই শাস্তিও উঠে যায় স্বল্পদিনে। পরেও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে অনেক ফুটবলার নিষিদ্ধ হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে মামুনুলদের নামই বলা যায়। কিন্তু সেই শাস্তিও প্রত্যাহার হয়ে যায় মেয়াদ পূর্ণের আগেই। ক্রিকেটে বিসিবির অনুমতি ছাড়া ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে অংশ নিলে হাবিবুল বাশার, শাহারিয়ার নাফিস, অলক কাপালি, আফতাব আহমেদ, ধীমান ঘোষরা ১০ বছর নিষিদ্ধ হন। সেই শাস্তিও মওকুফ হয়ে যায় অল্পদিনের মধ্যে। সাকিব আল হাসানের মতো তারকা ক্রিকেটারও নিষিদ্ধ হন। সেই শাস্তির মেয়াদ পূরণ হয়নি।  অবশ্য সাকিবের শাস্তি নিয়ে বিতর্ক ছিল বলে বিসিবি তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। বিপিএলে ফিক্সিংয়ের অভিযোগে মোহাম্মদ আশরাফুলের শাস্তির মেয়াদও কমানো হয়েছে।

হকির বেশ কজন তারকা খেলোয়াড় নিষিদ্ধ হয়েছেন। কোনো শাস্তিই অটল থাকেনি। বিশেষ করে রাসেল মাহমুদ জিমির কথা না বললে নয়। ২০১৫ সালে শৃঙ্খলা ভঙ্গে নিষিদ্ধ হলেন তিন বছর। পরে ওয়ার্ল্ড হকি লিগে একই কাণ্ড ঘটানোয় তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। তিনি প্রতিবারই রেহাই পেয়ে গেছেন। বিস্ময় ব্যাপার হচ্ছে যে কমিটি এবার জিমির শাস্তির সুপারিশ করেছিল তারাও জিমির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এশিয়াকাপ ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনার অনুরোধও রাখেন। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই জিমি এশিয়া কাপের ক্যাম্পে ফিরেছেন। যা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিরল ঘটনাই বলা যায়।

বিদেশ থেকে ফিরে না আসায় বেশ কজন ক্রীড়াবিদকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে ১৯৯৩ সাফ গেমসে দ্রুততম মানব বিমল তরফদার অন্যতম। কারও কারও শাস্তি প্রত্যাহারও করা হয়েছে। বাকিরা বিদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ায় তা এমনিতেই বহাল থেকে গেছে। তবে বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে দুজনকে পুরো মেয়াদে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। তারা ছিলেন দেশের তারকা ফুটবলার।

১৯৮৭ সালে লিগে মোহামেডান ৩-২ গোলে আবাহনীকে হারায়। এতে লিগ শেষে দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায়। যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ভেবে আবাহনীর অধিনায়ক শেখ মো. আসলাম ও মোহামেডানের অধিনায়ক রণজিত দাশ দুজন হাত ধরে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। এই ঘটনায় বাফুফে দুজনকেই এক বছর নিষিদ্ধ করে। কারণ ফেডারেশনের বাইলজে ছিল লিগ শেষে দুই দলের পয়েন্ট যদি সমান হয় তাহলে প্লে অব ম্যাচ হবে। জেনে শুনে বাইলজ ভঙ্গ করায় তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। পুরো এক বছরই নিষিদ্ধ ছিলেন আসলাম ও রণজিত। মজার বিষয় হচ্ছে এই এক বছর বাফুফে ফুটবলই মাঠে নামাতে পারেনি। এভাবেই তাদের শাস্তির মেয়াদ পূরণ হয়। তবে আসলাম ও রণজিত সাসপেন্ডের পর অভিযোগ তোলেন দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে কী হবে তা বাইলজে উল্লেখ ছিল না। বরং সেদিন মাঠে উপস্থিত বাফুফে এক কর্মকর্তা দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন বলার পরই মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিলেন তারা।

সর্বশেষ খবর