শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্মৃতিতে সেই সেঞ্চুরি

মেজবাহ্-উল-হক

স্মৃতিতে সেই সেঞ্চুরি

শাহরিয়ার নাফিস

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যান মোটেও সুখের নয়। চার ম্যাচের তিনটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার। তবে এক ম্যাচে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। পরিষ্কার করে বললে গোটা ম্যাচে চালকের আসনে থেকেও এক রিকি পন্টিংয়ের কাছে ফতুল্লায় হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। ফতুল্লায় ওপেনিং নেমে খেলেছিলেন ১৩৮ রানের ইনিংস। ১৯ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংস। শাহরিয়ার নাফিসের ক্যারিয়ারে একমাত্র সেঞ্চুরিও সেটি। ওই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন রাজিন সালেহ। শাহরিয়ার-রাজিনের ব্যাটে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪২৯ রান করেছিল বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রানে গুটিয়ে যায়। দারুণ বোলিং করেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও এনামুল হক জুনিয়র। রফিক ৬২ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি-এনামুল। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৫৮ রানের লিড নিয়েও ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটে-বলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি ক্রিকেটাররা। পন্টিং ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দেন।

স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শাহরিয়ার নাফিস গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এখনো সবকিছু চোখের সামনে ভাসছে। আমি কখনো কল্পনাও করিনি এমন একটি ইনিংস খেলতে পারব। আমার কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হয়।’ শাহরিয়ার বলেন, ‘যতই দিন গেছে ওই ইনিংসটি আমার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখনো আমি ওই ইনিংস থেকে অনুপ্রেরণা নিই। আসলে ওই সময় অস্ট্রেলিয়া ছিল বিশ্বসেরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেই অপ্রতিরোধ্য ছিল অস্ট্রেলিয়া। এমন একটি দলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করাটা ছিল আমার জন্য বিশেষ কিছু।’ তবে সবচেয়ে কষ্টের ম্যাচও সেটি, জানালেন শাহরিয়ার, ‘আমার ভাবতে খুব কষ্ট হয় যে, জয়ের খুব কাছে গিয়েও আমরা হেরে যাই। রিকি পন্টিং একাই হারিয়ে দেন। যদি ওই টেস্ট জিততে পারতাম হয়তো সেটাই হয়ে থাকত টেস্টের সেরা অর্জন।’ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে সুখস্মৃতি বলতে এটুকুই। বাকি সব গল্প বিরহ-কাব্য। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করতে নেমে অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জেসন গিলেস্পি। ৪২৫ বলে ২৬ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় সাজানো ২০১ রানের ইনিংসটা এখনো বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর।

একই ম্যাচে মাইক হাসি খেলেছিলেন ১৮২ রানের ইনিংস। যা দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ওই ম্যাচে গিলেস্পি-হাসি মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েছিলেন ৩২০ রানের জুটি।

চট্টগ্রামের ওই টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৮০ রানে হেরেছিল। গিলেস্পি ব্যাট হাতে নামার আগেই ২২ গজে জাদু দেখিয়েছিলেন বল হাতে। মাত্র ১১ রানে তিন উইকেট নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দলকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। সব মিলে ম্যাচটি হয়ে গিয়েছিল গিলেস্পিময়। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কারও তার হাতেই ওঠে। দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত চার টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ড্যারেন লেহম্যান। ১৪৩.৫০ গড়ে তিনি করেছেন ২৮৭ রান। এরপরই রয়েছেন বাংলাদেশের হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি করেছেন ২৮২ রান। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি করে সেঞ্চুরি রয়েছে দুই অসি ব্যাটসম্যান লেহম্যান ও স্টিভ ওয়াহর। এ ছাড়া একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন রিকি পন্টিং, গিলক্রিস্ট ও মার্টিন লাভের।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলে ২০০৩ সালে ডারউইনে। যে ম্যাচে ইনিংস ও ১৩২ রানে হেরেছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে খালেদ মাহমুদ সুজনের বাংলাদেশ মাত্র ৯৭ রানেই গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে হাবিবুল বাশার সুমনের হাফ সেঞ্চুরিতে তবু ১৭৮ রান করেছিল টাইগাররা। ওই টেস্টে দারুণ বোলিং করেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে লেহম্যান ও স্টিভ ওয়াহর সেঞ্চুরিতে ৪০৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংস তাদের আর ব্যাট করতেই হয়নি। ওই সফরের দ্বিতীয় ম্যাচে কেয়ার্নসেও ইনিংস ও ৯৮ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে প্রথম ইনিংসে ভালোই ব্যাটিং করেছিল বাংলাদেশ। ওপেনার হান্নান সরকারের হাফ সেঞ্চুরিতে করেছিল ২৯৫ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ছন্ন ছাড়া। মাত্র ১৬৩ রানেই অলআউট। ওই ম্যাচে দাপট দেখিয়েছেন গিলেস্পি। দুই ইনিংস মিলে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। প্রথম ইনিংস লেহম্যান, স্টিভ ও লাভের সেঞ্চুরিতে তারা ৪ উইকেটে ৫৫৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে হয়নি। তবে এক যুগের সেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে এই দলের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। এখন টেস্টেও সমীহ জাগানিয়া এক দল বাংলাদেশ। সেটা হয়তো এবার এলেই বুঝতে পারবে অস্ট্রেলিয়া!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর